বেপরোয়া চাঁদাবাজদের দৌরাত্মে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জমি ও বাড়ির মালিকরা। কেউ বাড়ি করার জন্য জায়গাতে ইট বালু ফেলার সঙ্গে সঙ্গে হামলে পড়ছে সংগবদ্ধ চাঁদাবাজরা। অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নগরীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়াচ্ছে বেপরোয়া চাঁদাবাজ চক্র। চাহিদামতো টাকা না পেলে তারা ভাঙচুর করছে নির্মাণাধীন বাড়ি। লুট করছে নির্মাণ সামগ্রী। হামলা করছে মালিক ও শ্রমিকদের ওপর। আরও অভিযোগ উঠেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার আশ্রয় প্রশ্রয়ে এসব চাঁদাবাজ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে নগরীতে। এমনকী দলের লোকেরাও এই চক্রের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। ফলে পুলিশ এসব সন্ত্রাসী চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারছে না।
অভিযোগে জানা গেছে, নগরীর সিরোইল এলাকা বাসিন্দা মহানগর যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক দুরুল হোদা সপুরা এলাকায় কয়েকদিন আগে কেনা জমিতে একটি অস্থায়ীভাবে কয়েকটি ঘর নির্মাণ শুরু করেন। ইট সিমেন্ট বালু পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সপুরা এলাকার একদল চাঁদাবাজ গিয়ে হাজির হয়। তারা বাধা প্রদান করে ঘর নির্মাণে। মালিক বাধ্য হয়ে এক গ্রুপকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা পরিশোধের পর ঘর তৈরির কাজ শুরু করতে পারেন।
ভুক্তভোগী দুরুল হোদা অভিযোগে আরও বলেন, চারদিন আগে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের এক বড় নেতা তাকে ফোন করে বলেন, আপনার জমিতে ঝামেলা আছে। এই জায়গা আব্দুল বারী নামের একজন নিজের বলে দাবি করেছেন। আপনি ২০ লাখ টাকা দেন। সব ঝামেলা মিটে যাবে। দুরুল হোদা আরও বলেন, জমিটি আমি জনৈক লাকী বেগমের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ভুমি অফিস থেকে হালনাগাদ খাজনা খারিজ করেছি। ওই নেতাকে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। এরপরই গত বৃহস্পতিবার ওই নেতা তাকে হুমকি দিয়ে বলেছিলেন কীভাবে আপনি ঘর করবেন আমি দেখব। কাল সকালেই আপনি টের পাবেন।
এদিকে শুক্রবার দিনগত রাতে যুবদল নেতা ও এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী জিয়ার নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী ঘটনাস্থলে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। সিমেন্ট, ইট, টিন ও বর্গা লুট করা ছাড়াও শ্রমিকদের নির্মাণ যন্ত্রপাতি লুট করে নিয়ে যায়। মারধর করা হয় শ্রমিকদের। জানা গেছে, ভাঙচুরের খবর পেয়ে জমি মালিক দুরুল হোদা শনিবার সকালে তার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি দেখতে যান। সকাল আনুমানিক ১০টার দিকে সন্ত্রাসী জিয়া ও মোস্তাকের নেতৃত্বে ১০ জনের সন্ত্রাসী দলটি দ্বিতীয় দফা ভাঙ্চুর করেন। মালিক দুুরুল হোদা বাধা দিতে গেলে তাকে ও তার ছেলেকে মারপিট করে রক্তাক্ত অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যায় সন্ত্রাসীরা। ঘটনার পর এলাকাবাসী দুরুল হোদাকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে যান।
দুরুল হোদার আরও অভিযোগ, অসহায় লাকী বেগমের জমিটি সাগরপাড়া এলাকার জামায়াত নেতা আব্দুল বারী জায়গাটি জোরপূর্বক দখল করে রেখেছিলেন। তিনি জমিটি কিছুদিন আগে ক্রয় করেন। যথারীতি খাজনা খারিজ সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি জায়গাটিতে অস্থায়ীভাবে কয়েকটি ঘর নির্মাণ করছিলেন।
চাঁদাবাজরা তাকে কয়েকদফা হুমকি দেয়। দুরুল কয়েকবার পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু তারা ২০ লাখ টাকার দাবিতে ভাঙ্গচুর ও তার ওপর দুইদফা সন্ত্রাসী হামলা চালায়। শনিবার দুপুরে আরএমপির বোয়ালিয়া থানায় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে দুরুল হোদা বাদী হয়ে চাঁদাবাজি ও হামলার অভিযোগে একটি মামলা করেছেন বলে জানা গেছে।
এই মামলায় জামায়াত নেতা আব্দুল বারী , সন্ত্রাসী জিয়া ও মোস্তাকসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ওসি মাজহার জানান, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে এলাকাবাসী অভিযোগে আরও জানান, সন্ত্রাসী জিয়া সপুরা এলাকার মৃত কেরামত আলীর পুত্র। তার ভাই ইউসুফ আলী জামায়াতের রোকন। আরেক ভাই আব্দুল গণি মহানগর শিবির নেতা। জিয়া আগে যুবদল করলেও এখন মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন।
এলাকাবাসী আরও জানায়, সন্ত্রাসী জিয়া শালবাগান এলাকার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার শাকিলের অনুসারী। সুপরা, তেরখাদিয়া, মালদা কলোনী, নওদাপাড়া ও উপশহরসহ রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক গড়ে তুলে চাঁদাবাজি করে আসছে। আওয়ামী লীগ নেতার শেল্টারে থাকায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না। জিয়া গ্রুপের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ নগরীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছেন।