শুরু হতে যাচ্ছে দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর মাতারবাড়ীর প্রথম টার্মিনাল নির্মাণের কাজ। ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব ওমর ফারুক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এ সময় তিনি বলেন, ’১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। বন্দর কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সার্বিক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধনের পর শিগগির ওই বন্দরের টার্মিনাল তৈরির কাজ শুরু হবে।’
প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্যমতে, নির্মাণকাজ শেষ হলে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালে ভিড়তে পারবে ১৮ দশমিক ৫ মিটার গভীরতার জাহাজ। জেটিতে সরাসরি আসতে পারবে ৮ থেকে ১০ হাজার কন্টেইনারবাহী জাহাজ। প্রকল্পের অধীনে ইতোমধ্যে চ্যানেল নির্মাণের কাজ শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কোনো জেটি বা টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়নি।
১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন করতে কক্সবাজার যাবেন। ওই দিন মাতারবাড়ীতে তার সমাবেশ করার কথা রয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করবেন বলে জানিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ’মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর এই অঞ্চলের সমুদ্র পরিবহনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। বন্দরে এখন সর্বোচ্চ ২ হাজার ৫০০ টিইইউস কন্টেইনার ধারণক্ষমতার ১০ মিটার গভীরতার জাহাজ ভিড়তে পারে। মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে ১৬ মিটার গভীরতার জাহাজ। একটি কন্টেইনারের পেছনে এখন যে পরিমাণ খরচ পড়ে, গভীর সমুদ্রবন্দর চালু হলে এখনকার চেয়ে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ খরচ কম হবে।’
২০২০ সালের ১৬ নভেম্বর বন্দর ভবন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার ঘোষণা দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। ওই সময় বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মাতারবাড়ী পোর্ট ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৮৯২ কোটি ঋণ হিসেবে দেবে জাইকা। বাকি ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা দেবে বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা দেবে সরকার।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের ডিজাইন, সিভিল ওয়ার্ক কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। এরপর দ্বিতীয় ধাপে সংগ্রহ করা হবে হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট।
প্রকল্প প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রকল্পের অধীনে একটি ৩০০ মিটার দীর্ঘ মাল্টিপারপাস জেটি নির্মাণ, একটি ৪৬০ মিটার দীর্ঘ কন্টেইনার জাহাজ বার্থিং জেটি, ৩৫০ মিটার চওড়া এবং ১৬ মিটার গভীরতার ১৪ দশমিক ৩ কিলোমিটার দীর্ঘ অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণ, উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার এবং দক্ষিণ দিকে ৬৭০ মিটার লম্বা ঢেউ নিরোধক বাঁধ নির্মাণ করা হেবে। এ ছাড়াও তিনটি টাগবোট, একটি পাইলট বোট, একটি সার্ভে বোটসহ কার্গো হ্যান্ডেলিং ইক্যুইপমেন্ট টিওএস অ্যান্ড সিকিউরিটি সিস্টেম ক্রয় করা হবে। এ ছাড়াও জাতীয় মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ২৭ দশমিক ৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, প্রকল্পটির ড্রইং ডিজাইন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সিভিল ওয়ার্কের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে উত্তর দিকে ২ হাজার ১৫০ মিটার ঢেউ নিরোধক বাঁধের মধ্যে ৩৯৭ মিটার নির্মাণকাজ শেষ। অ্যাপ্রোচ চ্যানেল নির্মাণের কাজও শেষের দিকে। এর বাইরে যাবতীয় দরপত্র আহ্বানও করা হয়েছে। বন্দরের প্রথম টার্মিনাল তৈরির দরপত্রও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত বলে জানিয়েছেন বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল।
কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য তৈরি মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর চ্যানেলও চট্টগ্রাম বন্দরের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ২০ সেপ্টেম্বর কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ চ্যানেলটি আনুষ্ঠানিকভাবে বন্দর কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেন। এই চ্যানেল দিয়ে ১১৫টির মতো জাহাজ কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য তৈরি অস্থায়ী দুই জেটিতে ভিড়েছে।