২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৪৫:৫৭ অপরাহ্ন
মসলার বাজারে ঈদের আঁচ, চড়া দাম সবখানে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
মসলার বাজারে ঈদের আঁচ, চড়া দাম সবখানে

কোরবানির ঈদের বাকি আর ১২-১৩ দিন। তেল-মসলা ব্যবসার ভরা মৌসুম এখন। এর মধ্যেই বাজারে পড়তে শুরু করেছে ঈদের আঁচ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, হলুদ, মরিচ, এলাচি, দারুচিনিসহ বিভিন্ন মসলার দাম গত সপ্তাহের তুলনায় ১০-৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে।


ঈদ উৎসবে সাধারণ সময়ের তুলনায় বেড়ে যায় চাহিদা। অতিরিক্ত চাহিদাকে পুঁজি করে দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এবারও এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না। চট্টগ্রামের পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জ থেকে শুরু করে ঢাকা শহরের ছোট মসলার দোকান—সবখানেই মসলার দাম চড়া এখন।


বাজারে ভারতের পেঁয়াজ আসায় গত সপ্তাহে দাম কিছুটা কমেছিল। তবে এ সপ্তাহে আবারও কেজিতে ৫-১০ টাকা করে বেড়েছে পণ্যটির দাম। গতকাল রাজধানীর রামপুরা, খিলগাঁও সিপাহীবাগ, ভাসানটেক, মোহাম্মদপুর ও বনানী কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, দেশি পেঁয়াজ ৭০-৮০ টাকায় এবং ভারতের পেঁয়াজ ৫৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে আদার দাম ৩০-৫০ টাকা বেড়ে ৩৫০-৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। রসুনের দাম ২০-৩০ টাকা বেড়ে হয়েছে ১৪০-১৬০ টাকা। একইভাবে বেড়েছে শুকনা মরিচ, হলুদ, জিরা ও ধনের দাম।


১১ জুন ভোজ্যতেলের দাম কমিয়েছে সরকার। বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ১০ টাকা কমিয়ে ১৮৯ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকা লিটার ও পাম তেলের দাম ২ টাকা কমিয়ে ১৩৩ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর চার দিন পার হলেও বাজারে নতুন দামে তেল পাওয়া যায়নি। বিভিন্ন দোকানে সয়াবিন তেলের বোতলের গায়ে ১৮৭ টাকা লিটার লেখা থাকলেও ২০০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ বিষয়ে ভাসানটেকের রিজিক জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, বোতলে যেইটাই লেখা থাক, আমরা ২০০ টাকায় বিক্রি করতেছি। চাহিদা বেশি, তাই দামও বেশি।


রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মূল্যতালিকা অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে দারুচিনি ও এলাচির দাম। গত সপ্তাহে প্রতি কেজি এলাচি বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে। এ সপ্তাহে সেই দাম ১ হাজার ৬৫০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় ঠেকেছে। দারুচিনির দাম গত সপ্তাহে ছিল ৪২০-৫২০ টাকা। এ সপ্তাহে দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৬০-৬০০ টাকা কেজিতে।


দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বনানী কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী রুহুল আমীন বলেন, ‘দাম কেন বাড়তেছে আমরা জানি না। বড় বড় ব্যবসায়ী যাঁরা, তাঁরা বলতে পারবেন। আমরা যেমন দামে কিনি, তার ওপর সামান্য লাভ রাইখা বিক্রি করি।’


এদিকে ভোগ্যপণের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জেও অস্থির মসলার বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত দামের কারণে মানুষ মসলাজাতীয় পণ্য কেনা অনেক কমিয়ে দিয়েছে। এতে ভরা মৌসুমেও মসলা বিক্রি ৭০ শতাংশের বেশি কমে গেছে সেখানে।


এই বিষয়ে খাতুনগঞ্জের তৈয়্যবিয়া ট্রেডার্সের সোলায়মান বাদশা জানান, মসলাজাতীয় পণ্যের প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়তি। অতিরিক্ত দামের কারণে একদিকে যেমন বেচাবিক্রি কমে গেছে, তেমনি আমদানি কম হওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়েছে।


খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, বর্তমানে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি চিকন জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮২০ টাকা এবং মিষ্টি জিরা ২৯০ থেকে ৩০০ টাকায়। তবে জিরা খুচরা পর্যায়ে ৮৫০ থেকে ৮৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ গেল তিন মাস আগেও ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে জিরা।


একইভাবে বর্তমানে পাইকারিতে প্রতি কেজি এলাচি ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। তিন মাস আগে এলাচির দাম ছিল ১ হাজার ১০০ টাকা। ৮০০ টাকার লবঙ্গ বর্তমানে ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৪৯০ টাকার গোলমরিচ ৬৭০ টাকা, বর্তমানে দারুচিনির দাম ৩২০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হলেও তিন মাস আগে এই দাম ৭০ টাকা কম ছিল। তবে খুচরা বাজারে গোলমরিচ ১ হাজার টাকা ও লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০০ টাকায়। 


এদিকে উল্লিখিত সংকটের কারণে চীনা আদা ও চীনা রসুনের দামও বেড়েছে বাজারে। এর মধ্যে চীনা আদা পাওয়াই যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মিয়ানমার ও ভিয়েতনাম থেকে আসা আদার দাম ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং চীনা রসুনের দাম ১৪৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে বাজারে।


স্বাভাবিক সময়ে ২০০-২৫০ টাকার মধ্যে শুকনা মরিচ বিক্রি হলেও বর্তমানে তা ঠেকেছে ৪০০-৪৫০ টাকায়। মসলার মধ্যে  শুকনা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসার পর পাইকারিতে পেঁয়াজের দাম এখন ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় ঠেকেছে। যদিও সরকারের আমদানি অনুমতির ঘোষণার আগ পর্যন্ত পণ্যটির দাম ঠেকেছিল ১০০ টাকায়।


শেয়ার করুন