২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন
জ্বরের ওষুধ ভেবে কীটনাশক পানে তরুণীর মৃত্যু
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-১০-২০২২
জ্বরের ওষুধ ভেবে কীটনাশক পানে তরুণীর মৃত্যু

 দেশের ৩ কোটি ৬০ লাখ শিশু রক্তে (৬০ শতাংশ) উচ্চমাত্রার ক্ষতিকারক সিসা বয়ে বেড়াচ্ছে। তার মধ্যে এক কোটি শিশুর রক্তে রয়েছে ১০ মাইক্রোগ্রাম পার ডেসিলিটারের বেশি সিসা। দুই বছর থেকে চার বছর বয়সি শিশুদের শতভাগের শরীরে সিসার উপস্থিতি মিলেছে।

বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের শরীরে এ সিসার নেতিবাচক প্রভাব বেশি। এর প্রভাবে শিশুদের বুদ্ধিমত্তা কমে যায়। মনোযোগের ঘাটতি তৈরি করে এবং লেখাপড়ায় তারা দুর্বল হয়ে পড়ে। ছোটবেলা থেকেই যাদের শরীরে সিসার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি মিলছে, বড় হয়ে তাদের আগ্রাসী হয়ে ওঠার শঙ্কাও প্রবল। সম্প্রতি এক গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে।

আন্তর্জাতিক শিশু সংস্থা ইউনিসেফের উদ্যোগে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) সম্প্রতি পরিচালিত গবেষণায় এমন তথ্য উঠে এসেছে। মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক সিসা পয়জনিং সপ্তাহ-২০২২ উপলক্ষ্যে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সেমিনারে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষ্যে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সিসা দূষণ প্রতিরোধে আমরা আছি একসঙ্গে।’

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের চার জেলায় শিশুদের রক্তে সিসার সক্রিয় উপস্থিতি মিলেছে। রক্তে সিসার উপস্থিতি থাকা শিশুদের মধ্যে ৬৫ শতাংশের রক্তে এর পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত, যারা উচ্চঝুঁকিতে রয়েছে।

সেমিনারে জানানো হয়, সিসা একটি শক্তিশালী নিউরোটক্সিন যা শিশুদের মস্তিষ্কে অপূরণীয় ক্ষতি করে। এটি বিশেষ করে পাঁচ বছরের কম বয়সিদের ক্ষেত্রে ধ্বংসাত্মক পরিণতি বয়ে আনে। মস্তিষ্কের পুরোপুরিভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাওয়ার আগেই ক্ষতিসাধন করে। এতে শিশুদের সারাজীবনের জন্য স্নায়বিক, মানসিক ও শারীরিক প্রতিবন্ধিকতার মুখে পড়তে হয়। মারাত্মক সিসা দূষণ অনেক সময় মৃত্যুর কারণ হয়। বাংলাদেশে সিসা দূষণের অন্যতম প্রধান উৎস পুরাতন সিসা অ্যাডিস ব্যাটারির অবৈধ রিসাইক্লিং কারখানা।

সেমিনারে আরও বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধবিষয়ক কেন্দ্রীয় সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রাম। কারও শরীরে এর চেয়ে বেশি সিসার উপস্থিতি থাকলে তা ক্ষতিকর বলে বিবেচিত। তবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী মানবদেহে সিসার কোনো নিরাপদ মাত্রা নেই। অন্যদিকে সিসার বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর হারের দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। সিসা দূষণের কারণে প্রতিবছর ৩১ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে, যা দেশের মোট মৃত্যুর ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। সিসা দূষণের কারণে যে পরিমাণ উৎপাদনশীলতা হ্রাস পায় তাতে বার্ষিক ১৬০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়। যা দেশের তৈরি পোশাক খাত থেকে আয়কৃত অর্থের প্রায় অর্ধেক।

সেমিনারে আইইডিসিআর-এর গবেষক নওরোজ আফরিন গবেষণার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, টাঙ্গাইল, খুলনা, সিলেট, পটুয়াখালী এ চার জেলার শিশুদের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছে। পরীক্ষার আওতায় আসা ৯৮০ শিশুর সবার রক্তে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ শিশুরই রক্তে সিসার মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি নির্ধারিত মাত্রা ৩ দশমিক ৫ মাইক্রোগ্রামের বেশি। এর মধ্যে ২৪ মাস থেকে ৪৮ মাস বয়সি শিশুদের শতভাগের শরীরেই সিসার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে আইসিডিডিআর,বি-এর গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকায় তারা ৫০০ শিশুর রক্ত পরীক্ষা করেছেন। তাদের সবার শরীরেই সিসার উপস্থিতি মিলেছে।

৯৬ পণ্যে মিলল সিসার উপস্থিতি : এদিকে গবেষণায় বাজারের বিভিন্ন পণ্যও পরীক্ষা করা হয়। ৩৬৭টি পণ্যে পরীক্ষা চালিয়ে ৯৬টিতে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। চারটি শহরে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত শিশুদের খেলনা, সব ধরনের রং, অ্যালুমিনিয়াম ও সিলভারের হাঁড়িপাতিল, সবজি, চাল এবং মসলার নমুনায় সিসার উপস্থিতি পাওয়া যায়। চার শহরের মধ্যে রয়েছে ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী ও খুলনা। এছাড়া মাটি, ছাই, পোড়ামাটি ও হলুদের গুঁড়ায় সিসার উপস্থিতি দেখা গেছে। দেওয়ালের রং, পানির পাইপ ও ফিটিংস, কসমেটিকস ও সিঁদুরের গুঁড়া, মাছ ধরার জাল, ড্রিংকস ক্যান, ইলেকট্রনিকস বর্জ্য, হার্বাল ওষুধ, গহনা প্রস্তুতকারক ও স্বর্ণ প্রক্রিয়াজাতকারক ইত্যাদিতে ব্যবহৃত সিসা খাদ্য পানীয় ও ত্বকের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করে। যা শিশুদের স্বাস্থ্য ও বিকাশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

গ্রামে ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসা : গ্রাম এলাকায় পরীক্ষা করা ৩০ শতাংশ গর্ভবতী নারীর শরীরে সিসার উপস্থিতি মিলেছে। সিসামিশ্রিত হলুদের গুঁড়া গর্ভবতী নারীর শরীরে উচ্চমাত্রার সিসার উপস্থিতির কারণ।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুজ্জামান, ইউনিসেফের বাংলাদেশ প্রতিনিধি শেলডন ইয়েট প্রমুখ।

শেয়ার করুন