২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৪:৪৪:২৪ অপরাহ্ন
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি মানতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-১১-২০২২
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি মানতে নারাজ ক্ষমতাসীনরা

মাঠের রাজনীতির জবাব বিএনপিকে মাঠেই দিতে চায় আওয়ামী লীগ। তাদের আন্দোলন বা সভা-সমাবেশের বিপরীতে নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠ দখলে রাখার পরিকল্পনা ক্ষমতাসীনদের। এ লক্ষ্যে দল ও সহযোগীদের সম্মেলন, দিবসভিত্তিক কর্মসূচি এবং নির্বাচনি সভা-সমাবেশে বড় জনসমাগমের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন নেতারা। ইতোমধ্যে ডিসেম্বরে জাতীয় সম্মেলন, এর আগে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা-উপজেলা এবং সহযোগীদের সম্মেলনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব কর্মসূচিতে বড় শোডাউনের মধ্য দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আবহ তৈরি ও নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার পাশাপাশি বিএনপির সমাবেশের জবাবও তারা দিতে চায়।

তবে এখনই সরাসরি পালটাপালটি কর্মসূচি দিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পক্ষে নয় হাইকমান্ড। দলটির নেতাকর্মীদের সতর্ক করা হচ্ছে ‘উসকানিতে’ পা না দিতে। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা বলছেন, এগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি। এগুলোকে বিএনপির পালটা কর্মসূচি ভাবার কোনো সুযোগ নেই। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি দেশকে অস্থিতিশীল করতে চায়। এ মুহূর্তে আমাদের অনেক ধৈর্য ধরেই এগোতে হচ্ছে। একে দুর্বলতা ভাবার কারণ নেই। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় সম্মেলন করব। এর আগে আমাদের জেলা, উপজেলা, ওয়ার্ড, ইউনিয়নের সম্মেলন করছি। সংগঠনকে শক্তিশালী করছি। আমরা জনসভাও করব। তবে এটাকে পালটা কর্মসূচি হিসাবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। আর মাত্র ১৪ মাস পরে জাতীয় নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচন সামনে রেখে আমাদের উন্নয়ন-অর্জন ও পরিকল্পনা নিয়ে জনগণের কাছে যাব। ফলে পালটা নয়, আমরা কর্মসূচি নিয়ে এগিয়ে যাব।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, বিএনপি এখন অনেক কথাই বলছে। নির্বাচনে যাব না। সরকার উৎখাত করবে। নির্বাচন হতে দেবে না। নির্বাচন ঠেকিয়ে দেব। তবে আমরা মনে করি, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচনই হলো একমাত্র পথ। তিনি আরও বলেন, বিএনপি চায় পরিস্থিতি অশান্ত করে ফায়দা লুটতে। কিন্তু আমরা ফাঁদে পা দিতে চাই না। তবে তারা যদি মানুষের ওপর হামলা করে, অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও শুরু করে, তখন আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। জনগণকে নিয়ে খেলতে চাইলে, তাদের ফাঁদে ফেলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চাইলে, সেটা কি আমরা মেনে নেব? সহ্য করব? জনস্বার্থেই আমাদের তাদের রুখতে হবে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে বিএনপির কর্মসূচিতে বিপুল মানুষের উপস্থিতিও দেখা গেছে। নির্বাচন ঘিরে রাজনীতির মাঠে এই উত্তাপ আরও বাড়বে। বিষয়টিকে হালকাভাবে নিচ্ছে না আওয়ামী লীগ। চলমান পরিস্থিতিকে সামনে রেখে সব দলকে নির্বাচনে আনতে মাঠে কিছুটা সহনীয় পরিস্থিতি রাখার চেষ্টা থাকলেও ক্ষমতাসীনরা একেবারে বসে থাকতে রাজি নয়। তারাও পরিকল্পনা নিয়ে মাঠের কর্মসূচি বাড়াতে চায়। ইতোমধ্যে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বড় জনসমাবেশও করেছে দলটি। নভেম্বর ও ডিসেম্বরজুড়ে দলীয় নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বিএনপিকে মাঠেই জবাব দিতে চায় তারা।

দলীয় সূত্র জানায়, ২৮ অক্টোবর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় ২৪ ডিসেম্বর জাতীয় সম্মেলন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। তার আগে ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি শতাধিক জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। ইতোমধ্যে অন্তত ১৪টি জেলা সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের আগেই ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনও করবে ক্ষমতাসীনরা। এসব কর্মসূচিতে বড় ধরনের শোডাউন দেওয়ার পরিকল্পানা রয়েছে হাইকমান্ডের।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনার কারণে দীর্ঘদিন সশরীরে বড় জনসমাবেশে খুব একটা যোগ দিতে পারেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এখন থেকে তিনি দলের কর্মসূচিতে আরও বেশি সময় দেবেন। সরকারি কর্মসূচির সঙ্গে সমন্বয় রেখে জেলায় জেলায় জনসভা ও সমাবেশ করবেন তিনি। জেলা পর্যায়ে সফরের পাশাপাশি দুটি করে জেলা আওয়ামী লীগের সব পর্যায়ের নেতাকে গণভবনে ডেকে কথা শুনবেন তৃণমূল নেতাদের।

জানা যায়, ১১ নভেম্বর রাজধানীতে ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষ্যে স্মরণকালের যুব সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে যুবলীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন বলে যুবলীগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। সেই সমাবেশের প্রস্তুতিও শুরু করেছে যুবলীগ। গঠন করেছে বিভিন্ন উপকমিটি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এছাড়া ২৪ নভেম্বর যশোর, ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম ও ৭ ডিসেম্বর কক্সবাজারে আওয়ামী লীগ বড় জনসমাবেশের পরিকল্পনা নিয়েছে। এসব কর্মসূচিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থাকবেন।

এদিকে বিএনপিকে মোকাবিলায় মাঠের কর্মসূচিতে নামলেও আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এটা তাদের কোনো পালটা কর্মসূচি নয়। এগুলো তাদের দলীয় কর্মসূচি। এসব কর্মসূচির বেশির ভাগই পূর্বনির্ধারিত বলেও দাবি করছেন। নির্বাচনের এখনো এক বছরের বেশি সময় বাকি রয়েছে। ফলে এখনই সরাসরি বিএনপি পালটা কর্মসূচি দেবে না তারা। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হবে। সরকারের ওপর চাপও বাড়বে। তাছাড়া বিএনপিও সেটাকে ইস্যু বানানোর চেষ্টা করবে। আবার একেবারে বসে থাকলেও অন্যরা এটাকে দুর্বলতা ভাবতে পারে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যেও ভুল বার্তা যেতে পারে। ফলে নিজেদের মাঠের কর্মসূচি দিয়েই বিএনপিকে মোকাবিলা করতে চায় তারা।

রোববার দলীয় সভাপতি ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সভা শেষে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, করোনার কারণে নেত্রী বেশকিছু দিন ধরে বাইরে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেননি। তিনি (শেখ হাসিনা) কিছুদিন ধরে বলছিলেন বাইরে জনসভা করবেন। প্রথমে দু-তিনটি জেলা নির্দিষ্ট করে বলেছেন যে, এগুলোয় সমাবেশ করবেন। পর্যায়ক্রমে অন্য জেলায়ও করবেন। গণভবনে প্রতি সপ্তাহে দুটি করে জেলার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ সময় ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে পালটাপালটি কোনো কর্মসূচিতে যাবে না।

এছাড়া নভেম্বর-ডিসেম্বরজুড়ে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচি নিয়েও মাঠে সক্রিয় থাকবে আওয়ামী লীগ। ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস রয়েছে। এরপর ১০ নভেম্বর শহিদ নূর হোসেন দিবস, ১১ নভেম্বর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, ২৭ ডিসেম্বর ডা. মিলন দিবস, ৫ ডিসেম্বর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুবার্ষিকী, ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস রয়েছে। এর বাইরেও ডিসেম্বরে প্রতিদিন রাজধানীসহ সারা দেশে লাগাতার কর্মসূচি পালন করার পরিকল্পনা রয়েছে আওয়ামী লীগের।

শেয়ার করুন