ঘরের সরঞ্জামে বাঁশ-বেতের বদলে স্থান করে নিয়েছে কাঠ, প্লাস্টিক। বাঙালি সেই পুরাতন ঐতিহ্য যেন হারাতে বসেছে কালের বিবর্তনে। যুগের পরিবর্তনে সবাই যখন বাঁশ, বেতের শিল্পের কথা ভুলে যাওয়ার পথে তখন পুরনো সেই ঐতিহ্যকে সম্বল করেই কিছু মানুষ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করছেন বাঙালির প্রাচীন ঐতিহ্যকে।
বর্তমানে রাজশাহীর বিভিন্ন রেস্তোরাগুলোতে সাজসজ্জার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে বাঁশ ও বেত দিয়ে বানানো বিভিন্ন সামগ্রী। আর বাঁশ ও বেত দিয়ে সাজসজ্জার কথা বললে প্রথমেই চলে আসে লবঙ্গ চাইনিজ এন্ড ফাস্টফুডের কথা।
দোতালা বিশিষ্ট এই রেস্তোরাটি করা হয়েছে বাঁশ দিয়ে। চারদিকে বাঁশের কারুকাজ। রেস্তোরার প্রতিটি কোণেই রয়েছে বাঁশের নান্দনিকতা। এখানে সিড়িগুলো বাঁশের, ঢাকনার মত বাঁশের ঝুলন্ত ল্যাম্প, বাঁশের সোফা, চেয়ার, টেবিল, সেলফ। যা দেখতে অনেকটাই পার্বত্য চট্টগ্রাম,বান্দরবানের বাঁশের ঘরগুলোর মত।
লবঙ্গ ছাড়াও নোঙর, ব্যাকইয়ার্ড কিচেনের মত আরো বেশকিছু রেস্তোরার সাজসজ্জায় বাঁশ ও বেতকে ব্যবহার করা হয়েছে।
কোথাও বাঁশের ঝুড়ি কোথাও বা বেতের ঝুলন্ত ল্যাম্প। দেশীয় পণ্যে এমন সাজসজ্জা বর্তমান প্রজন্মের মানুষেরও নজর কাড়ছে।
এই বিষয়ে জয়া রাণী বলেন, ‘আমাদের রাজশাহীতে এখন বেশকিছু রেস্তোরা হয়েছে যেগুলো খুব সাধারণভাবে দেশীয় শিল্পের ব্যবহারে সাজানো হয়েছে। যা দেখতে সুন্দর এবং আমাদের ঐতিহ্যকেও ফুটিয়ে তোলে। বাঁশ, বেতের সামগ্রী আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির অংশ। আর এগুলোকেই ভিন্ন আঙ্গিকে রূপ দিয়ে রেস্তোরার সাজসজ্জা সত্যিই প্রশংসনীয়।’
মা-বাবাকে নিয়ে রেস্তোরায় এসেছেন প্রসন্ন নামক এক যুবক। তিনি জানান, ‘আমাদের বাবা-মা এখনো দেশীয় সংস্কৃতিকে আঁকড়ে ধরে রাখতেই ভালোবাসেন। সংস্কৃতিই আমাদের শেকড়। তাদের কাছে রেস্তোরার মাঝে এধরণের সাজসজ্জা অনেক গ্রহণীয়।
বাল যায়, কালের বিবর্তনে আমরা দেশীয় পণ্যের ব্যবহার প্রায় ভুলতে বসেছি। আর এমন সময় রেস্তোরা গুলো যখন দেশীয় পণ্য ব্যবহার করছে তখন আমরাও দেশীয় পণ্যও যে সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে পারে তা শিখতে পারছি। আমাদের দেশের মানুষ দেশী পণ্য ব্যবহার করলেই বাইরে আমাদের সংস্কৃতির মূল্যায়ন হবে। আমার মায়ের লবঙ্গ, নোঙর এই রেস্তোরাগুলো খুব পছন্দ বিশেষ করে তাদের এই সাজসজ্জার জন্য।’
রেস্তোরার সাজসজ্জায় এমন দেশীয় পণ্যকে বেছে নেওয়ার প্রসঙ্গে লবঙ্গ চাইনিজ এন্ড ফাস্টফুডের কর্ণধার আজিজুল আলম বেন্টু জানান, ‘রেস্তোরা ব্যবসায়ের ক্ষেত্রে খাবারের মানের পাশাপাশি সাজসজ্জার বিষয়টিও নজরে রাখতে হয়। যেন,মানুষ পরিবেশ,সাজসজ্জায় ভালো অনুভব করতে পারে। কথায় আছে, আগে দর্শনধারী পরে গুণ বিচারী।
তাছাড়া আমি চেষ্টা করেছি, দেশের ঐতিহ্য ধরে রাখার পাশাপাশি যেন একটু নতুনত্ব আনা যায় সাজসজ্জায়। সেক্ষেত্রে বাঁশ ব্যবহার করেছি। এতে যেমম মানুষ রাজশাহীর একটি রেস্তোরায় বসে পার্বত্য চট্টগ্রাম, রাঙামাটির অনুভব পাবে তেমনি আমাদের দেশীয় যে উপকরণ সেই সংস্কৃতিকেও ধারণ হবে।’