২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০৯:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
৩০ বছর ধরে রাশিয়ার কাছে জিম্মি মলদোভা
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-১১-২০২২
৩০ বছর ধরে রাশিয়ার কাছে জিম্মি মলদোভা

কয়েক দশক ধরেই রাশিয়ার গ্যাসের ওপর ভর দিয়েই চলছে মলদোভা। আর বিদ্যুতের জন্য প্রতিবেশী ইউক্রেনের ওপর। এই নির্ভরশীলতার জন্যই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের খেশারত দিতে হচ্ছে এই ক্ষুদ্র দেশটিকে। আসন্ন শীতে তীব্র জালানি সংকটের আভাস পাচ্ছে মলদোভা। সঙ্গে বাড়ছে দামও। আয়ের প্রায় ৭০-৭৫ শতাংশই ব্যয় করছে উচ্চ দরের বিদ্যুৎ ও গ্যাসবিল পরিশোধে। সংকটে কোলাহলপূর্ণ কলকারখানাগুলোও যেন শোকে নীরবতা পালন করছে। দাম কমলে পুনরায় চলবে কারখানা-এ আশায় গন্তব্যহীন পথের দিকে তাকিয়ে দিন গুনছেন মালিকসহ শ্রমিকরা।

প্রায় ৩০ বছর ধরে গ্যাসের জন্য রাশিয়ার কাছে ‘জিম্মি’ থাকা মলদোভার ২৬ লাখ মানুষ এখন বিরাট সংকটে। মলদোভার পেসিডেন্ট মাইয়া সান্ডু ইতোমধ্যেই অবশ্যম্ভাবী গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকটের ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক করেছেন দেশবাসীকে । গত বছর গ্যাসের মূল্য ৬শ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রতিবেশী রোমানিয়ার পার্লামেন্টে ইউরোপপন্থি সান্ডু বলেন, ‘দেশে জ্বালানি সরবরাহ যেন এক নতুন চ্যালেঞ্জ। একটি পরিবারের আয়ের ৭০-৭৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে উচ্চ বাজারের জ্বালানির বিল পরিশোধে। সেপ্টেম্বরে মলদোভার মূদ্রাস্ফীতি ছিল ৩৩.৯ শতাংশ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় গ্যাস সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম নভেম্বরেই অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছে সরবরাহ। এদিকে মলদোভার বিদ্যুৎ চাহিদার ৩০ শতাংশ পূরণ করত ইউক্রেন। ইউক্রেনে বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার হামলার পর দেশটি নিজেই এখন অচলাবস্থায় পড়েছে। এ মুহূর্তে অন্য দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ আকাশকুসুম ভাবনা। কিয়েভ অনেকটা বাধ্য হয়েই বিচ্ছিন্ন করে দেয় মলদোভায় বিদ্যুৎ সরবরাহ। অবশিষ্ট ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে বিচ্ছিন্ন অঞ্চল ট্রান্সনিস্ট্রিয়ার একটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। অঞ্চলটিতে রাশিয়ান সৈন্যরা অবস্থান করছেন। রাজধানী চিসিনাউতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। ইইউ সদস্যভুক্ত রোমানিয়া সমস্যা নিরসনে কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে বলে আস্বস্ত করেছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে শহরে রাস্তায় আলো ও গৃহস্থলিতে বিদ্যুতের ব্যবহার সীমিত করার আহ্বান জানিয়েছে মলদোভা সরকার। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও সময় পরিবর্তন করে ‘অফ-পিক আওয়ার’ অর্থাৎ যখন বিদ্যুতের চাহিদা কম থাকবে এমন সময়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও বলা হয়। আহ্বানে সারাও পড়েছে। মলদোভার প্রথম বিয়ার কোম্পানির মালিক সের্গেই লিট্রা সময় পরিবর্তন করে পিক আওয়ারের বাইরে দপ্তর পরিচালনা শুরু করেছেন। কর্মীরা কাজ করেন দুই শিফটে। একটি চলে রাত ১১টা থেকে ভোর ৫টা। ৩৬ বছর বয়সি লিট্রা জানান, সবকিছু নির্ভর করছে যুদ্ধের সমাপ্তির ওপর। যুদ্ধে সবাই বুঝতে পেরেছে, আমাদের শক্তির স্বাধীনতা দরকার। তিনি এখন সৌর বিদ্যুতের দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলেও জানান। ২০২০ সালে নির্বাচিত হওয়া বিশ্বব্যাংকের সাবেক অর্থনীতিবিদ সান্ডু বলেন, রাশিয়ার গ্যাসের ওপর মলদোভার নির্ভরতা অসুস্থ রাজনীতি এবং হুমকিই নির্দেশ করছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সভাপতি উরসুলা ভন ডার লেইন এ সপ্তাহের শেষে দেশটি সফর করবেন এবং সংকট মোকাবিলার সর্বাত্মক চেষ্টা করবেন।

শেয়ার করুন