২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:০২:৩২ অপরাহ্ন
‘অভাবের তাড়নায় পাবলিক টয়লেটে’ চাকরি করছেন ব্যান্ডশিল্পী
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৫-২০২২
‘অভাবের তাড়নায় পাবলিক টয়লেটে’ চাকরি করছেন ব্যান্ডশিল্পী

অভাবের তাড়নায় পাবলিক টয়লেটে চাকরি করছেন এক সময়ের জনপ্রিয় ব্যান্ড সংগীত শিল্পী মনসুর হাসান।


৯০ দশকের ব্যান্ড ‘ব্লু  হরেনেট’র জনপ্রিয় গায়ক তিনি। বিশেষ করে বন্দরনগরীতে জনপ্রিয় ছিল ব্লু  হরেনেট ব্যান্ড।


এই ব্যান্ড দলের একটি জনপ্রিয় গান - ‘বাটালি হিলের সেই বিকেল কেন কাছে আসে না গানটি’ ছিল চট্টগ্রামবাসীর মুখে মুখে।


গানটির গীতিকার ও গায়ক মনসুর হাসান।


কলেজের ৬ বন্ধুকে নিয়ে ব্যান্ড দল গড়েছিলেন মনসুর। দলের অন্যতম ভোকালিস্ট ছিলেন। তার লেখা কয়েকটি গান জনপ্রিয়তাও পায়। 


সেই জনপ্রিয় শিল্পীর ঠিকানা এখন ফুটপাতের ওপর ছোটো বেঞ্চে। 


তাকে পাওয়া গেল চট্টগ্রামের জামালখান মোড়ের এক পাবলিক টয়লেটের তত্ত্বাবধায় হিসেবে। মাসিক ১২ হাজার বেতনে সেখানে চাকরি করছেন তিনি। 


বর্তমানে ৫৪ বছর বয়সি গায়ক মনসুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত। চিকিৎসা খরচ আর জীবন চালিয়ে নিতে এ চাকরি করছেন বলে জানালেন মনসুর। 


গণমাধ্যমকে মনসুর বলেন, ‘আমি এক সময় পাঁচশ'র বেশি স্টেজ শো করেছি। দুই থেকে আড়াই মাস পর স্টেজ শোয়ের জন্য বাইরে যেতাম। ভারতেও গান করার অফার এসেছিল। তবে ব্যক্তিগত কারণে সেটা করা হয়নি। এখন আমার কাছে বাবা মা ভাই বোন কেউ নেই। আমি গণশৌচাগারে চাকরি করে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এভাবেই কেটে যাচ্ছে আমার জীবন।’


জানা গেছে, মানসিকভাবে বিপর্যস্ত মনসুর হাসান। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে সহকারী অধ্যাপক ও মনরোগ বিশেষজ্ঞ পঞ্চানন আচার্যের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা নিচ্ছেন মনসুর।


বাবা-মা মারা যাওয়ার পর বাড়ি ফেরেননি মনসুর।  তিনি বলেন, সারাদিন টয়লেটের এখানেই থাকি। পাশের একটি হোটেল থেকে খাবার খাই। রাতে ওই বেঞ্চেই ঘুমাই। 


এদিকে সংগীত শিল্পীর এমন চাকরি করছেন জেনে বিস্মিত সংগীত ভূবনের অনেকেই।  পাশাপাশি এই ঘটনাকে সংগীত জগতের জন্য লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ।  


তাকে সহায়তা করতে আহ্বান জানিয়েছেন তারা।


এ প্রসঙ্গে জনপ্রিয় ব্যান্ড এলআরবির ইঞ্জিনিয়ার শামীম আহমেদ বলেছেন, ‘কোনো কাজকেই ছোটো করছি না তবে সঙ্গীত শিল্পীকে যেখানে থাকার কথা ছিল বা থাকতে পারতেন, সেখানে কেন নেই সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। এই প্রশ্নটা মনসুরের কাছে না করে প্রশ্নটা প্রত্যেকটা মানুষের নিজেদের কাছে করা উচিত।’


তিনি আরো বলেন, ‘মনসুর ভাই একজন খুব জনপ্রিয় শিল্পী ছিলেন। এমনকি আমিও একবার খোলা মঞ্চে তার গান শুনেছি। পাশাপাশি দেখেছি মানুষ তার গান শুনতে কতটা ভালোবাসত।’


ব্লু  হরনেটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সেলিম জাহান গণমাধ্যমকে বলেন, খুবই সম্ভ্রান্ত ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন পরিবারের ছেলে মনসুর। ৩ ভাইয়ের মধ্যে মনসুর দ্বিতীয়। তার গানের গলা ও মেধা ছিল অসাধারণ।  আর ১৬-১৭ বছর বয়সেই নিজে গান লিখত, সুর করত। ১৯৮৯ সালে আমরা প্রথম অ্যালবাম বের করি। অ্যালবাম বের করার কিছুদিন পরেই বিভিটিতে 'বাটালি হিলের সেই বিকেল' গানটি গায় মনসুর। বিটিভিতে গানটি প্রচার হওয়ার পর থেকে শ্রেতাদের কাছে ব্যাপক সাড়া পেতে থাকি।


তিনি আরো বলেন, ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর আমাদের দলের অনেক বাদ্যযন্ত্র- সরঞ্জাম নষ্ট হয়ে যায়।  এরপরে আর আগায়নি দল। ৩-৪ বছর পর সবাই মিলে আবার গান শুরু করলেও মনসুরকে পাওয়া যায়নি। তখন অনেক চেষ্টা করেও তাকে গানে ফেরাতে পারিনি।


প্রসঙ্গত, ‘বাটালি হিলের সেই বিকেল’ ছাড়াও মনসুর হাসানের জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে ‘ছোট্ট একটি মেয়ে’, ‘সারাটি রাত’, ‘ফিরে এসো’, ‘নিঝুম রাত’, ‘নীল কাগজে লেখা’, ‘মনটা তার চোরাবালি’, ‘চল যাই’, ‘বাতাসি’ ও ‘সবাই যখন ঘুমে’ অন্যতম।  

১৯৯০ সালে নিজের সুর করা ও এলআরবির আইয়ুব বাচ্চুর কম্পোজে বের হয় তার একক অ্যালবাম। অ্যালবামটির প্রায় সবগুলো গানই শ্রোতাদের মন জয় করে। 


তার একক অ্যালবাম  ‘জুয়েল স্বরণে’ ১৪টি গানের সবগুলো গানই মৌলিক হওয়ায় সারা দেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান মনসুর। 

শেয়ার করুন