২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০২:০১:১১ পূর্বাহ্ন
ফখরুল-আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-১২-২০২২
ফখরুল-আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ

পুলিশের ওপর হামলার পরিকল্পনা ও উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পল্টন থানায় করা মামলায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।


শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অপরদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।


আসামি পক্ষের আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার বলেন, নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু তাদের নাম মামলার এজাহারে নেই। এই মামলায় এরই মধ্যে দুইজন আসামিকে জামিন দেওয়া হয়েছে। মামলার এজাহারে যাদের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, বলা হয়েছে তারা বিএনপি অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মী। মির্জা ফখরুল ও আব্বাস এ মামলায় কোনো অপরাধ করেছেন তা বলা হয়নি। ৭ ডিসেম্বরের মামলায় দুইদিনে কোনো কিছুই তাদের বিরুদ্ধে আসেনি।


তিনি বলেন, আমরা আদালতকে বলেছি- মির্জা ফখরুল ও আব্বাস বয়স্ক মানুষ ও অসুস্থ। ওষুধ ছাড়া তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন চলে না। আগামীকাল একটা জনসভা আছে, যেখানে মির্জা ফখরুল প্রধান অতিথি ও আব্বাস বিশেষ অতিথি। যেহেতু তাদের নাম এজাহারে নেই তাদের জামিন দিয়ে দেন। কিন্তু আদালত জামিন দেননি।


অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আবদুল্লাহ আবু বলেন, আমরা আদালতে বলেছি, ঘটনার সময় এই দুজন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তাদের কর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে অবৈধ কাজ করেছে। তারা পুলিশের ওপর হামলা করেছে, ককটেল নিক্ষেপ করেছে। এতে জনদুর্ভোগ হয়েছে, মানুষ আহত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়েছিল। ৭ তারিখের ঘটনা কেন হয়েছিল সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তদন্তনাধীন মামলায় পুলিশ যে কাউকে ডাকতে পারে। তাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।


তিনি বলেন, এ ঘটনার তারা পরিকল্পনাকারী, নির্দেশদাতা এবং তারা উস্কানি দিয়েছে। তাদের উপস্থিতিতে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক। বিএনপি অফিসের ভেতরে বোমা পাওয়া গেছে। ১৬০ বস্তা চাল, তেলসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এই ঘটনাগুলো তারা কেন ঘটিয়েছে, কী দুরভিসন্ধি তা উদঘাটন হওয়া দরকার।


তিনি আরও বলেন, এ মামলায় গতকাল (বৃহস্পতিবার) কয়েকজনকে রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। আজ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের জামিন শুনানি হয়েছে। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।


এর আগে শুক্রবার বিকেল ৪টা১০ মিনিটে ডিবির কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে আনা হয়। এসময় কোর্ট প্রাঙ্গণে ক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি’, ‘পার্টি অফিসে গুলি কেন’ সহ বিভিন্ন ধরনে স্লোগান দেন তারা।


এরও আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি। এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) ঘটনায় তাদের নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।


৭ ডিসেম্বর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অনেকে। এসময় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল-ডাল, পানি, নগদ টাকা ও বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।


সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন।


মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।

শেয়ার করুন