২৯ মার্চ ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:৫৯:১৩ অপরাহ্ন
স্বামীর নির্যাতনের কথা লিখে গৃহবধূর আত্মহত্যা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৫-২০২২
স্বামীর নির্যাতনের কথা লিখে গৃহবধূর আত্মহত্যা স্বামীর নির্যাতনের কথা লিখে গৃহবধূর আত্মহত্যা

নেত্রকোনার বারহাট্টায় ডায়েরিতে স্বামীর নির্যাতনের বিবরণ লিখে বিষপানে সুমা আক্তার (২৪) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যার করেছেন বলে অভিযোগে উঠেছে। রোববার রাতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। 

বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক আত্মহত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ওই গৃহবধূ ময়মনসিংহ মেডিকেলে মারা যায়। 

সুমা আক্তার বারহাট্টার সিকেপি পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দপ্তরি আ. লতিফের মেয়ে। তাদের বাসা শহরের পুরাতন কোর্ট ভবনের পেছনে। সুমা ২০১৮ সালে বারহাট্টা সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করেন।

৪-৫ বছর আগে সুমার বিয়ে হয় বারহাট্টা সদর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে। তার স্বামীর নাম সাইদুর রহমান। তাদের ৩ বছর ও ২ বছর বয়সী দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। 

গৃহবধূ সুমার বাবা লতিফ বলেন, ডায়েরিতে অত্যাচারের কথা লিখে গেছে সুমা। রোববার বেলা ১১টার দিকে স্বামীর বাড়ি থেকে আমাদের বাড়িতে আসে সুমা। এ সময় তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। রাস্তায় কোথাও হয়তো বিষপান করে আমাদের বাড়িতে আসে। তাকে দ্রুত বারহাট্টা হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে নেত্রকোনা রেফার্ড করেন। সেখানে নিয়ে গেলে সুমার অবস্থা খারাপ দেখে তারা ময়মনসিং মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে রেফার্ড করেন। ময়মনসিংহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর রাতে তার মৃত্যু হয়। ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার সন্ধ্যায় তাকে দাফন করা হয়েছে। 
 
তিনি আরও জানান, মৃত্যুর খবর শুনে হাসপাতাল থেকেই স্বামী সাইদুর রহমান পালিয়ে যায়। আর শ্বশুর আব্দুর রহমান নেত্রকোনা থেকেই বিদায় নেয়। সুমার শরীরে লোহার রড দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। বিয়ের পর থেকেই সুমাকে যৌতুকসহ নানা বিষয় নিয়ে অত্যাচার ও মারধর করত তার স্বামী। শাশুড়িও নানাভাবে অত্যাচার করেছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা করা হবে বলেও জানান তারা। 

গৃহবধূ সুমার ভাই আলমগীর হোসেন বলেন, ২২ পৃষ্ঠার ওই ডায়েরিতে স্বামীর নির্মম অত্যাচার, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, স্বামীর পরকীয়াসংক্রান্ত ঘটনাসহ শাশুড়ির নানা অত্যাচারের ঘটনা নিজ হাতে লিখে গেছে সুমা। মৃত্যুর আগে সব বলে যেতে চান এই উদ্দেশ্যে ডায়েরিতে সব লিখছেন উল্লেখ করলেও ডায়েরিটি অসম্পূর্ণ ছিল। তার দাবি, ডায়েরির বাকি অংশ বোনের স্বামীর পরিবারের লোকজন গোপন করেছে।
প্রতিবেশী কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুমা খুব শান্ত ও ভদ্র মেয়ে ছিল। স্বামীর শত অত্যাচার মুখ বুঝে সহ্য করেছে। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে স্বামীর বাড়ি থেকে অনেকবার বাবার বাড়িতে চলে এসেছে। কিন্তু তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর তাকে বাড়িতে টিকতে দেয়নি; অত্যাচার করে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে।  বাড়িতে এসে মনের কথা খুলে বলার সুযোগ পেলে হয়তো আত্মহত্যা করত না। ডায়েরিতে তার অত্যাচারের কথাও লিখা ছিল বলে জানান তারা। সেই ভয়ে সে বাড়ি ছেড়েছে। 

তবে সোমবার সন্ধ্যার পর সুমাদের বাড়িতে গিয়ে তার বাবা, বোন ও এক ভাইকে দেখা গেলেও অপর বড় ভাই জাহাঙ্গীরকে দেখা যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে জাহাঙ্গীর বাড়িতে নেই বলে জানালেও এর বেশি কিছু বলতেও আগ্রহ দেখায়নি সোমার পরিবারের লোকজন। ডায়েরির বাকি অংশও তারা পায়নি বলে জানায়। 
এদিকে ঘটনার পর থেকে পলাতক থাকায় সুমার স্বামী সাইদুর রহমান ও তার পরিবারের কারো সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বারহাট্টা থানার ওসি লুৎফুল হক বলেন, এ ঘটনায় কেউ এখনো থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি। তবে মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে সেটি তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শেয়ার করুন