বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘গত ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির সমাবেশে ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি লোক হয়নি। তাদের সমাবেশে মানুষ আসেনি। মানুষ আসার কোন কারণ খুঁজে পায়নি। আগামী ২৯ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের জনসভায় মানুষের ঢল নামবে।’
২৯ জানুয়ারি রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভা সফল করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, রাজশাহী জেলা ও মহানগর আয়োজিত প্রতিনিধি সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। শুক্রবার রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ডা. কাইছার রহমান চৌধুরী মিলনায়তনে এই সভার আয়োজন করা হয়।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘ছয় মাসের মতো হলো বিএনপি নামক একটি দল, একটি বিষফোঁড়া বাংলাদেশের রাজনীতি, দেশের পরিবেশ অশান্ত করে তুলছে। তারা একেকবার একেক কথা বলছে। কখনও বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবি আদায় ছাড়া নির্বাচনে যাবে না, কখনও বলছে নির্বাচিত সরকার যিনি আছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, সেই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। কখনও ২৭ দফা দাবি করছে, কখনও ১০ দফা দাবি করছে।’
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে তারা সব বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করেছে। তারা একেকটি সমাবেশে একেক ঘোষণা দিয়েছে। রাজশাহীতে বলেছে, ডিসেম্বরের ৩ তারিখের রাজশাহীর ওই সমাবেশ সেমিফাইনাল এবং ১০ তারিখে ঢাকায় হবে ফাইনাল খেলা। এটি আমরা জানি। কিন্তু রাজশাহীতে যারা বসবাস করি তারা দেখেছি, বিএনপি বলেছিল লক্ষ লক্ষ মানুষ হবে তাদের এই কথিত দুর্গে। একসময় তারা যেটিকে দুর্গ বলতে খুব ভালবাসতো, সেই দুর্গে তাদের মিটিংয়ে আমরা দেখলাম লোকসংখ্যা খুব বেশি হলে ১০ থেকে ১৫ হাজারের বেশি হয়নি।
বিএনপির দাবি অনুযায়ী- তারা তাদের এলাকায় লোকসমাগম করতে পারেনি। মানুষ আসেনি। মানুষ আসার কোন কারণ খুঁজে পায়নি। কারণ, যে দাবি সে দাবি ভিত্তিহীন এবং যে পদ্ধতিতে যে দাবি আদায়ের চেষ্টা করছে সেটাও অরাজনৈতিক একটা পদ্ধতি। আমরা জানি বিএনপি এমন একটি দল যে দলটি সৃষ্টি হয়েছিল ক্যান্টনমেন্ট থেকে অসাংবিধানিক পথে। জাতির পিতা এবং তার পরিবারকে হত্যার মাধ্যমে।’
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিএনপি সব সময় হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যখনই সুযোগ পেয়েছে বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করেছে। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করেছে, দুর্নীতি করেছে, লুটপাট করেছে, এমন কোন হীন কাজ ছিল না যা তারা করেনি। এখন তারা বলছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। এই কারণে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগও ঘোষণা দিয়েছে, তারা যদি রাজপথে আসে, আসতে পারে, কিন্তু সেখানে যদি কোন অরাজনৈতিক অপতৎপরতা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে চায়, নেত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছিলেন, যে হাত দিয়ে মানুষের যান অথবা গাড়ি বা অন্যকিছুতে আগুন লাগাবে সেই হাত পুড়িয়ে দিতে হবে। যে হাত দিয়ে মানুষকে আঘাত করবে, সেই হাত ভেঙে দিতে হবে। অর্থাৎ নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে হবে। এই জন্য রাজশাহী বিভাগের এই জনসভাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ‘এই জনসভাটি অতীতের জনসভার চেয়ে অনেক মানুষের সমাগম হবে। মানুষের ঢল নামবে এখানে। এর মাধ্যমেই আমরা প্রমাণ দিব, নেত্রী শেখ হাসিনার ডাকে জনগণ প্রস্তুত আছে। বলামাত্রই যে কোন অপতৎপরতা রুখে দেওয়ার মতো ক্ষমতা আওয়ামী লীগের আছে।’ তিনি জনসভায় যথাসময়ে হাজির হওয়ার জন্য নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান।
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ এমপি ও প্রধান বক্তা হিসেবে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল সভায় সভাপতিত্ব করেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অনিল কুমার সরকার। সভা সঞ্চালন করেন রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আব্দুল ওয়াদুদ দারা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ ডাবলু সরকার।
সভায় জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ও পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু, খাদ্য মন্ত্রী ও নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি, রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দূর্গাপুর) আসনের সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমান, রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক, রাজশাহী -৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন, পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জয়পুরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান রকেট, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. হোসেন আলী হাসান, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম রমজান প্রমুখ।
সভায় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সদস্য নুরুল ইসলাম ঠান্ডু, সদস্য বেগম আখতার জাহান, সদস্য প্রফেসর মেরিনা জাহান এমপি সহ রাজশাহী বিভাগের আট জেলার বিভিন্ন আসনের সরকারদলীয় এমপি এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।