আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কেউ ইচ্ছা করলে বেকার থাকতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি।
আজ শনিবার গণভবনে আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ, কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার মুলতবি সভার সূচনা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গত ৭ জানুয়ারি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, 'গত ১৪ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের যে পরিবর্তন ঘটেছে। আমি জানি এটা হয়তো অনেকে এটা নিতে পারে না। নানা ধরনের কথা রটায়। কিন্তু মূলত মানুষের যে পরিবর্তন এসেছে জীবন যাত্রায়। তাছাড়া রাস্তাঘাটসহ যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি আমরা করেছি। এটাকেও অনেকে আছে—স্বীকার করতে চায় না। করতে চাইবেও না।'
'আওয়ামী লীগ যে ওয়াদা করে সেই ওয়াদা রাখে,' বলেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের ধারবাহিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে মানুষের জীবনমান উন্নীতি হয়েছে মন্তব্য করেন তিনি বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের অসুবিধা হচ্ছে। আমাদের দেশেও যারা একেবারে নির্দিষ্ট বেতনে চলতে হয় তাদের জন্য কষ্ট হচ্ছে, সেটা আমরা বুঝি। যে কারণে বিদেশ থেকে খাবার যেগুলো কিনতে হয়, অনেক টাকা খরচ আমরা আনছি এবং ভর্তুকি মূল্যে কিন্তু দিচ্ছি।'
'আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর কথা চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেশের মানুষ যেন অন্তত মাথা তুলে চলতে পারে। সারা বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা। এই মন্দার কারণে আমরা অনেক হিসাব-নিকাশ করে চলছি। আমাদের অনেক প্রকল্প আছে যেগুলো এখনই শেষ না করলেও চলবে কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা দেওয়া, মানুষের ওষুধ নিশ্চিত করা, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিচ্ছি, ঘর করে দিচ্ছি; আর ৫৬ হাজার ঘর করলেই আমরা বলতে পারবো যে, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ ভূমিহীন না। অন্তত তাদের একটা ঘর আছে, জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা আছে। শুধু ঘর না, সেখানে তাদের জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে। তাতে দারিদ্র্যের হাত থেকে তারা উঠে আসছে,' বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, 'আমাদের দেশে দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি ছিল। প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ ছিল, এখন সেটা ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। ইনশাল্লাহ সেটা আর থাকবে না। দারিদ্র্যের হার আমরা ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। করোনা অতিমারি আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ যদি না হতো তাহলে এই কয়েক বছরে আরও ৩-৪ ভাগ আমরা কমিয়ে ফেলতে পারতাম। আমরা বলতে পারতাম বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত।'
তিনি বলেন, আমি জানি না বাংলাদেশে আর কোনো সরকার এভাবে জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে কি না কিন্তু জাতির পিতার এই কথাগুলো আমরা সব সময় মাথায় রাখি, তিনি কী চেয়েছিলেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'জাতির পিতা যা যা চেয়েছিলেন আমরা সেগুলো কিন্তু একে একে করে দিচ্ছি মানুষকে। তার যে স্বপ্নটা সেটাই বাস্তবায়ন করা আমাদের লক্ষ্য। এত কাজ করার পরেও কিছু লোক আছে তাদের কোনো কিছু ভালো লাগে না। আর দুর্নীতি নিয়ে যে কথা বলে, আমি তো পার্লামেন্টে বলেছি—কোথায় দুর্নীতি হচ্ছে আমাকে তথ্য দেন, আমি ব্যবস্থা নেব। শুধু মুখে মুখে বললে তো হবে না!'
'এখন এমন এমন লোকজনের কাছ থেকে আমাকে শুনতে হচ্ছে, যারা নিজেরাই দুর্নীতিগ্রস্ত। যাদের আমলে দুর্নীতিতে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে অথবা কেউ বলতে গেলে ওই ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবসা করতে যেয়ে গরিব মানুষের ওপর এমন চাপ যে, সুদ দিতে দিতে তাদের অনেক সময় বাড়ি-ঘর বিক্রি করে এলাকা ছেড়ে চলেই যেতে হয়েছে অথবা আত্মহত্যা করতে হয়েছে। এই গরিব মানুষের টাকা দিয়েই কিন্তু বিদেশে নাম-টাম করে কিন্তু বেশ ভালোই আছে এবং প্রচুর অর্থ-সম্পদের মালিক। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগও করে ফেলেছেন এই টাকাগুলো কোথা থেকে এলো? এগুলো গরিবের রক্তচোষা টাকা। এটাতো বাস্তব কথা,' বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছি তাতে আমার দেশের মানুষের আর উচ্চ সুদে ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হবে না। তারা নিজের টাকা দিয়ে নিজেরাই চলতে পারবে, নিজেদের ক্ষুদ্র ব্যবসা চালাতে পারবে। যেহেতু আমরা সারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে পেরেছি, সেখানে তারা ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলে নিজেদের স্বচ্ছলতা আনতে পারবে।'
আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এখন তো ও রকম কেউ ইচ্ছা করলে বেকার থাকতে পারে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বেকার থাকার কোনো সুযোগ নেই। কারণ আমরা এত সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছি। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে অনেক ছেলে-মেয়ে কিন্তু এখন গ্রামে বসে টাকা উপার্জন করছে। কাজে এভাবে যত সুযোগ আছে আমরা করে দিয়েছি।'