১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার, ০৪:২৬:১১ পূর্বাহ্ন
বিশ্বব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার সুযোগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২৩
বিশ্বব্যাংক থেকে ৬১৫ কোটি ডলার ঋণ পাওয়ার সুযোগ

এবার বিশ্বব্যাংক থেকে বিনা সুদে ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলারের স্বল্পমেয়াদি ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ-২০ ঋণ তহবিলের আওতায় আগামী তিন বছরে এই অর্থ পাওয়া যাবে। করোনা মহামারি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চাপে থাকা স্বল্প আয়ের ৭৪টি দেশের জন্য গত বছর আইডিএ-২০ তহবিল নামে একটি ঋণ কমসূচি গ্রহণ করে বিশ্বব্যাংক। আগামী তিন বছরে এ তহবিল থেকে শুধু বাংলাদেশের জন্য ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলার ঋণ পাওয়ার সুযোগ রেখেছে আন্তর্জাতিক এই ঋণদাতা সংস্থা। 
এ অবস্থায় চলমান অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বিশ্বব্যাংকের এই স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দিয়েছে অর্থবিভাগ। সেখানে বিনা সুদে দ্রুত স্বল্পমেয়াদি এই ঋণ নেওয়ার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এদিকে, সংস্থাটি থেকে ঋণ পাওয়া গেলে এই অর্থে তাৎক্ষণিক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্তিশালী হবে বলে আশা করছে সরকার। এখন ডলারের সংকটের কারণে অর্থনীতি চাপের মুখে রয়েছে। আমদানি-রপ্তানিসহ  অর্থনীতির সর্বত্র প্রতিদিন যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ। জানা গেছে, শর্ট টার্ম ম্যাচিউরিটি লোন বা স্বল্পমেয়াদি এই ঋণ ১২ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে ছয় বছর রেয়াতকাল। এ ঋণে কোনো সুদ থাকবে না, সেবা মাশুলও থাকবে না। এক প্রকার বিনা সুদেই এ ঋণ পাবে বাংলাদেশ। শুধু ঋণের কিস্তি  পরিশোধ করলেই হবে। ১২ বছর মেয়াদি এ ঋণের কিস্তি পরিশোধ শুরু হবে সপ্তম বছর থেকে। 
ইতোমধ্যে এই ঋণ কোন কোন খাতে খরচ করা হবে তা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। আগামী তিন বছর সামনে রেখে প্রকল্প নির্ধারণ করা হচ্ছে। তবে যেহেতু এই ঋণ স্বল্পমেয়াদি তাই উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে বাজেট সহায়তা হিসেবে পাওয়ার ব্যাপারে। চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলারের বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে বিশ্বব্যাংক থেকে।

এদিকে, আইডিএ-২০ তহবিল থেকে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত মতামত দিয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে অর্থভিাগ। অর্থবিভাগের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগের উপসচিব ড. জয়নাল আবেদিন স্বাক্ষরিত চিঠিতে জানানো হয়েছে-‘১২ বছরে পরিশোধযোগ্য এবং শূন্য সুদ হলে প্রস্তাবিত ঋণ গ্রহণ করা সমীচীন হবে’।  
এর আগে গত ১৮ ডিসেম্বর এবং চলতি মাসের ৫ ফেব্রুয়ারি ইআরডি থেকে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ-২০ তহবিল থেকে ঋণ নেওয়ার বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছিল অর্থবিভাগের কাছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ-২০ তহবিলের ঋণ বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন। ঋণের অর্থ আসলে তাৎক্ষণিক ডলার যোগ হবে রিজার্ভে। তিনি বলেন,  ডলার সঙ্কটের এই মুহূর্তে এই ঋণ দ্রুত আনা প্রয়োজন। এ কারণে অর্থবিভাগ থেকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত মতামত প্রদান করা হয়েছে।

আশা করছি, ইআরডি এখন দ্রুত ঋণ পেতে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নয়ন প্রকল্পের চেয়ে বাজেট সহায়তা হিসেবে এ ঋণ নেওয়া বেশি যৌক্তিক। এ মুহূর্তে বৈদেশিক মুদ্রার সরবরাহ বাড়াতে বাজেট সহায়তা হিসেবে ডলার আনার বিকল্প নেই। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন জানান, বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে সরকারকে বৈদেশিক মুদ্রা প্রাপ্তিতে জোর দিতে হবে। এই মুহূর্তে ডলার বা বৈদেশিক অর্থ সহায়তা ব্যয় করা না গেলে, সামনে আরও জটিল পরিস্থিতিতে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে দ্রুত আইডিএ-২০  তহবিলের ঋণ পাওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে হবে। 
উল্লেখ্য, আইডিএ-২০ এর আওতায় স্বল্পমেয়াদি ঋণ বা শর্টটার্ম ম্যাচিউরিটি লোন নামে নতুন একটি শাখা করেছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) বাংলাদেশসহ গরিব ও নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের জন্য এই শাখা কাজ করছে। যেখান থেকে বিনা সুদে স্বল্প সময়ের জন্য মিলবে ঋণ। আইডিএ-২০’ তে নতুন এই শাখা যুক্ত করা হয়েছে। 
আগামী তিন বছরে বাংলাদেশ এ শাখা থেকে ঋণ নিতে পারবে। এছাড়া মহামারি করোনা থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চাপে থাকা অর্থনীতির স্বল্প আয়ের দেশগুলোকে বিশ্বব্যাংক আইডিএ-২০ তহবিল থেকে ঋণ প্রদান করছে। বিশেষ করে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা এবং এলডিসি উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়ও বিশ্বব্যাংকের এই তহবিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বিশ্বের ৭৪টি দেশের জন্য ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত ৩ বছরের এই ঋণ কর্মসূচীর জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৯৩ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশের জন্য আগামী তিন বছরে এ তহবিল থেকে ৬১৫ কোটি মার্কিন ডলারর ঋণ পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। চলতি অর্থবছরে বাজেট সহায়তাসহ অন্যান্য প্রকল্পে ঋণদাতা এ সংস্থার বাংলাদেশের জন্য আপাতত প্রায় ৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ রেখেছে। বর্তমান বাজার দরে টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংকের আইডিএ থেকে এর আগেও বাজেট সহায়তা নিয়েছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছর বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (ডিপিসি) নামে তহবিল থেকে বাংলাদেশ ২৫ কোটি ডলার পেয়েছে। চলতি অর্থবছরেও বাজেট সহায়তা পাওয়া যাবে। 
জানা গেছে, দেশে ডলার সংকটের মধ্যে গত  ডিসেম্বরে সচিবালয়ে বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ওই সময় বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার এবং বাংলাদেশ ও ভুটানের নবনিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বাংলাদেশ সফর করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে আইডিএ  থেকে বেশি করে ঋণ পাওয়ার বিষয়ে জোর দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। এছাড়া ওই সময় বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের দ্রুত ঋণ দিতে তিনি অনুরোধ করেছিলেন। 
এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, গত ২০১৯ থেকে এপ্রিল ২০২২ সময়ে ১০০ কোটি ডলারের বাজেট সাপোর্ট পাওয়া গেছে। চলতি অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে আরও ৫০ কোটি ডলার বাজেট সাপোর্ট পাওয়া যাবে মর্মে আশা করছি। গ্রিন, রেজিলেন্স, ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট (জিআরআইডি) ডিপিসির ২৫০ মিলিয়ন করে আগামী ২ অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বলে আশা করছি।

আগামী ২০২৩-২৫ মেয়াদে আরও ৬১৫ কোটি ডলারের ঋণ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের ৫০ বছর পূতি অনুষ্ঠানে যোগদিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন সংস্থাটির এমডি অ্যাক্সেল ট্রটসেনবার্গ। ওই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, আইডিএ-২০ তহবিল থেকে বাংলাদেশকে বেশি পরিমাণে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ রয়েছে বিশ্বব্যাংকের।

শেয়ার করুন