২৮ মার্চ ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৪:১৮:২১ অপরাহ্ন
ঘুষ না পেয়ে বিএমডিএর কাজে সরকারি কর্মকর্তার বাধা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০২-২০২৩
ঘুষ না পেয়ে বিএমডিএর কাজে সরকারি কর্মকর্তার বাধা

রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে ভূ-উপরিস্থ পানি সংরক্ষণ করে সেচ কাজে ব্যবহারের জন্য পুকুর পুনঃখনন প্রকল্পের কাজে বাধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সরকারি দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে ঘুষ দাবিসহ প্রকল্প কাজে নিয়োজিত লোকজনকে জেল-জরিমানার করারও অভিযোগ তুলেছেন সংশ্লিষ্ট কাজের ঠিকাদার আরিফ হোসেন।

তার অভিযোগ, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান তার কাছে ঘুষ দাবি করে। তা না দেয়ায় সরকারি এই কাজে বাধা দেয়। এ ব্যাপারে ইউএনও ও সহকারি কমিশনারের (ভূমি) বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আবেদন জানিয়ে গত ২২ ফেব্রুয়ারী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আলী হোসেন এন্টারপ্রাইজের মালিক আরিফ হোসেনের অভিযোগ, “পুকুর পুনঃখনন ও ভূ-উপরিস্থ পানি উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুদ্র সেচ ব্যবহার” শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদন হয়। পরবর্তীতে সরকারের পরিকল্পনা বিভাগ, এনইসি একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগ, একনেক শাখা-১, ২০.০০.০০০০.৪১১.১৪.০৬২.১৯-৩৬৭ নং স্মারকমূলে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য সদয় অবগতি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বেধে দিয়ে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে প্রকল্প বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

অভিযোগের আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ২০২২ সালের ১৮ এপ্রিল ২৪৫২ নং স্মারকে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার গোদাগাড়ী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ১৭৮ নং রঘুনাথপুর মৌজার ৫৮ নং দাগের ১.৮৬ একর খাস পুকুরটি ১১ লাখ সাত হাজার ৫৪২ টাকা ব্যয়ে পুনঃখননের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে মেসার্স আলী হোসেন এন্টারপ্রাইজকে ওয়ার্র্ক অর্ডার প্রদান করে। এর পর ঠিকাদার আরিফ হোসেন ২০২২ সালের ২০ ডিসেম্বর পুকুরটি পুনঃ খননের কাজ শুরু করে। কাজ দেখা শোনার জন্য শরিফুল ইসলাম বিশুসহ দুইজন লোক নিয়োগ দেয় ঠিকাদার।

ঠিকাদার আরিফ হোসেনের অভিযোগ, গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলম পুকুর পুনঃখনন কাজ বাস্তবায়নের জন্য ৫ লক্ষ টাকা ঘুষ দাবী করেন শরিফুল ইসলাম বিশুর কাছে। বিষয়টি তিনি আমাকে জানান। পরে বিশু উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ঘুষ না দেয়ার বিষয়টি জানায়। ইতোমধ্যে পুনঃ খনন কাজটি প্রায় ৯০ ভাগ শেষ হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, গত ৫ জানুয়ারী হঠাৎ করে কার্যস্থলে গোদাগাড়ী সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসানকে দিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এসময় পুনঃখনন কাজে ব্যবহৃত এসকেভেটর গাড়ীর দুইটি ব্যাটারিসহ গাড়ীটি অকেজো করতে গাড়ীর গুরুত্বপূর্ণ পার্টস খুলে নেন এবং গাড়ীর ইঞ্জিনে বালি ঢুকিয়ে দেয়। একই সঙ্গে প্রকল্প দেখাশোনার কাজের সহযোগি ও গোদাগাড়ীর সারাংপুর কাচারীপাড়া গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র আল মারুফকে গ্রেপ্তার করে। পরে বালু ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ৪ (১৫) ১ ধারায় ১৫ দিনের জেল ও ১ এক লক্ষ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের জেল দিয়ে আদেশ দেন। এছাড়াও মামলায় আটককৃত এসকেভেটর গাড়ীর দুইটি ব্যাটারি শুধুমাত্র জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য মূল্যবান মালামাল জব্দ তালিকায় উল্লেখ করেননি।

এ ব্যাপারে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ), গোদাগাড়ী জোন-১ এর সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান জানান, ‘কাজ বন্ধ করার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় তিনি জানিয়েছে, তাদের চিঠি দিয়ে না জানানোর কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন।’’

তিনি আরও বলেন, প্রকল্প গ্রহনের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) দপ্তরকে অবহিত করা হয়। সে সময় তাদের দপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য নতুন করে বলার প্রয়োজন নেয় বলেন এই কর্মকর্তা।

তবে এ নিয়ে বক্তব্য নিতে গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানে আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) সবুজ হাসান জানান, স্থানীয় ভূমি অফিসের অনুমতি না নিয়ে নিয়ম বর্হিভূতভাবে পুকুর পুন:খনন কাজ শুরু করা হয়। এছাড়াও মাঠি পুকুরের পাড়ে রাখার কথা থাকলেও ঠিকাদার বিক্রি করছিলেন। এ জন্য সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছিল। ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।

শেয়ার করুন