দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া ভাষণ ও বক্তব্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণক্রমে অন্তর্ভুক্তের নির্দেশ প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর দুর্নীতিবিরোধী ভাষণগুলো (অডিও-ভিডিওসহ) ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে।
বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ মঙ্গলবার স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেন।
এ সময় দুদকের উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, দুর্নীতি বন্ধ করতে হলে হার্ডলাইনে যেতে হবে। নমনীয়তা দেখিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না।
এক নোবেল বিজয়ী বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে দুর্নীতির বিষয়ে নমনীয়তা আছে।
রুলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বক্তব্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যসূচি এবং প্রশিক্ষণক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব, শিক্ষা সচিব, আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিব)
চেয়ারম্যানসহ বিবাদীদের রুলের জবাব দিতে বলেছেন আদালত।
৪ জুন এ রুলের পরবর্তী শুনানি অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক, দুদকের আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান।
শুনানিতে দুদক আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেন, যদি দুর্নীতি বন্ধ করতে চান, তাহলে তিনটি বিষয় অবশ্যই মানতে হবে।
১. দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর একটি সিস্টেম স্থাপন করতে হবে। ২. আইন-বিধি মান্য করতে হবে, আইনবিধির প্রয়োগ করতে হবে। ৩. জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ হতে হবে।
শুধু আইন-বিধি বা রায়-আদেশ দিয়ে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না উল্লেখ করে হাইকোর্ট বলেন, আগে নিজেদের আইন-বিধি মানতে হবে।
যারা চাকরিতে ঢুকছেন তারা কী নিয়ে ঢুকছেন আর কী নিয়ে বের হচ্ছেন তার স্বচ্ছতা থাকতে হবে। সবার জবাবদিহিতা থাকতে হবে।
আদালত বলেন, সবাই মিলে ধরতে না পারলে দুর্নীতি বন্ধ হবে না। সরকার, সংবাদ মাধ্যম, বিচার বিভাগসহ সব অংশীজনদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।
একা বিচার বিভাগ বা সরকারের পক্ষে দুর্নীতি বন্ধ করা যাবে না। দেশকে ভালোবাসলে আইনের শাসন মানতে হবে। দুর্নীতির বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতিতে থাকতে হবে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দুর্নীতি-অর্থ পাচার বিরোধী অবস্থান, ভাষণ-বক্তৃতা তুলে ধরে হাইকোর্ট বলেন, দেশকে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা করতে হলে সোনার মানুষ চাই।
তার জন্য সবার ভূমিকা রাখতে হবে। সাংবাদিকরা সমাজের চোখ, তাদের ভূমিকা রাখতে হবে। তবে বিচ্ছিন্ন হয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে না।
আদালত আরও বলেন, কানাডার বেগমপাড়ায় কাদের বাড়ি, কারা টাকা পাচার করেছে, সুইস ব্যাংকে কারা টাকা রেখেছে, এসব নিয়ে আদেশ দিয়েছি।
কিন্তু কোনো আদেশের বাস্তবায়ন নেই। এ সময় দুদক আইনজীবী খুরশিদ আলম খান আদেশ বাস্তবায়নের কথা বলেন। পরে আদালত রুলসহ আদেশ দেন।