২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ০২:৪১:৩৪ পূর্বাহ্ন
ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ হতে পারে ১৫০ কিমি.
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-০৫-২০২৩
ঘূর্ণিঝড় মোখার গতিবেগ হতে পারে ১৫০ কিমি.

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণি-কুণ্ডলী ইতোমধ্যে নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। আজকের মধ্যে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। এখন পর্যন্ত এটির অগ্রগতি অনুযায়ী আজ শেষরাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে তৈরি হতে পারে ঘূর্ণিঝড়। তখন এর নাম হবে ‘মোখা’। নিম্নচাপটি বর্তমানে দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন দক্ষিণ আন্দামান সাগরে অবস্থান করছে।

অন্যদিকে সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণি-কুণ্ডলীসহ আবহাওয়ার আরও কয়েকটি কারণে দেশে তাপপ্রবাহ চলছে। মঙ্গলবার গত ৩৩ বছরের মধ্যে মে মাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ঢাকায়। এদিন তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা সোমবার রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি। এর আগে ১৯৮৯ সালের ৮ মে ঢাকায় ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠেছিল। অন্যদিকে সোমবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪১ ডিগ্রি। কিন্তু মঙ্গলবার সেখানকার তাপমাত্রা জানাতে পারেনি বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)। 

তবে সংস্থাটি বলছে, সোমবারের মতোই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা সাতক্ষীরায় ৪১ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়। দ্বিতীয় দিনের মতো মঙ্গলবারও সারা দেশে তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। এর মধ্যে রাজশাহী, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও পটুয়াখালীতে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। দেশের বাকি অংশে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ ছিল। দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের কম তাপমাত্রাটি রেকর্ড করা হয় টেকনাফে, ৩৪.৮ ডিগ্রি। দেশের ভেতরে একমাত্র গোপালগঞ্জে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়েছে। এ দাবদাহ কাল পর্যন্ত চলতে পারে। শুক্রবার বৃষ্টির দেখা মিলতে পারে।

এদিকে শনিবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিকুণ্ডলী ধারণার চেয়েও দ্রুততার সঙ্গে লঘুচাপ ও সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর্যায় পেরিয়ে সোমবার নিম্নচাপে পরিণত হয়। এরপর আবার এর গতি স্থিতিশীল থাকে। 

চেক আবহাওয়া সংক্রান্ত ওয়েবসাইট উইন্ডিডটকমের তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ৮টায়ও এটি নিম্নচাপ আকারে ছিল। আজ দিনের মধ্যে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হতে পারে। আর মধ্যরাত থেকে রাত ৪টার পর এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে একই সংস্থার মডেলে দেখা যাচ্ছে। তবে কোনো সংস্থা বলছে, কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার মধ্যে গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। শুক্রবারের মধ্যেই চেহারা ধারণ করতে পারে অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। ওই সময় মোখার গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিলোমিটার। যা সর্বোচ্চ দেড়শ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

এর আগে বৃহস্পতিবার ঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১০০ কিমি.। শুক্র এবং শনিবার ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৩০ থেকে ১৪০ কিমি.। সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৫০ কিমি.। এটি রোববার সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। বর্তমানে নিম্নচাপটির মুখ উত্তর-পশ্চিম দিকে। এটি শুক্রবার উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে বাঁক নিতে পারে। 

এ কারণে আবহাওয়ার মডেলগুলো এখন পর্যন্ত এর গন্তব্য দেখাচ্ছে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের উপকূল। বিশেষ করে এর কেন্দ্র কক্সবাজার দিয়ে উঠতে পারে। তবে সবই স্যাটেলাইট প্রদত্ত ছবি অনুযায়ী বিভিন্ন কম্পিউটার মডেলের বিশ্লেষণ। যে কোনো মুহূর্তে হিসাব বদলে যেতে পারে ঝড়ের বাতাস এবং সাগরের বাস্তব পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। এজন্যই পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানায় বিএমডি।

আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, এত আগে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র কোথা দিয়ে উঠবে বা এর বাতাসের গতিবেগ কত হবে তা বলা মুশকিল। কেননা ঘূর্ণিঝড় সাগরে থাকাকালে ঘন ঘন চরিত্র বদলায়। যেমন, বর্তমানে নিম্নচাপটির মুখ আছে উত্তর-পশ্চিম দিকে। 

বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সেদিকেই ছুটতে পারে। এ সময় এর অবস্থান থাকবে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে। এরপর এটি দিক পরিবর্তন করবে। এটি দিক পরিবর্তন করে উত্তর-উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরতে পারে, যা বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের উপকূল। কিন্তু কতটুকু ঘুরবে আর শেষ পর্যন্ত এর ‘ল্যান্ডফল’ বা স্থলভাগে ওঠার জায়গাটা কোথায় হবে তা জানতে আরও অপেক্ষা করতে হবে। তাই এখনই কোনো কিছু সুনির্দিষ্ট করা যাচ্ছে না।

আবহাওয়া সংস্থাগুলোর প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, নিম্নচাপের প্রভাবে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বৃষ্টি বেড়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো হাওয়া বইছে। আজকে বাতাসের সর্বোচ্চ বেগ হতে পারে ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত। এর প্রভাবে শুক্রবার বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সঙ্গে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

প্রসঙ্গত, ‘মোখা’ আরবি শব্দ। এই নামটি দিয়েছে ইয়েমেন। বর্তমানে এ নামে দেশটির একটি বন্দর আছে। তবে মধ্যযুগে মোখা বলতে ‘ইয়েমেনের কফি’ বোঝাত। তখন তুরস্কসহ ইউরোপে কফি রপ্তানি হতো ইয়েমেন থেকে।

শেয়ার করুন