রাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় শত বছরের পুরনো ডিআইটি প্লট পুকুর ভরাট-দখল, স্থাপনা অবকাঠামো নির্মাণের ওপর স্থিতাবস্থা জারির নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার (৫ জুন) বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আবেদনের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আজাদ।
আদেশে বলা হয়, এ পুকুরের দখল কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না এবং আরএস ও সিএস অনুসারে পুকুর কেন রক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। পরিবেশ সচিব, স্থানীয় সরকার সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার, ঢাকার জেলা প্রশাসক, শ্যামপুর, গেণ্ডারিয়া থানার ওসি, ৪৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শাহানা আক্তার, সাবেক কাউন্সিলর সাইদুর রহমান শহীদসহ ১১ জনকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
রিটে বলা হয়েছে, বিবাদীরা বিদ্যমান আইন অনুসারে বন্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নিলে রাজধানীর শ্যামপুর-গেণ্ডারিয়া এলাকার পুকুর দখল, ভরাটের মতো ঘটনা ঘটতো না। তাছাড়া নদী, জলাধার, পুকুর ভরাট-দখল বন্ধ করতে বিবাদীরা আইনত বাধ্য। গেণ্ডারিয়া এলাকার পুকুরটি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলেও মহানগরী, বিভাগীয় শহর ও জেলা, পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকার খেলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান, উদ্যান এবং প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন, ২০০০ এর ২(চ) অনুসারে প্রাকৃতিক জলাধার হিসেবে চিহ্নিত। বিদ্যমান এ আইনের ৮ ধারা অনুসারে প্রাকৃতিক জলাধার, ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করার সুযোগ নেই। কেউ তা করলে ন্যূনতম পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। পরে ডিআইটি পুকুরের জায়গায় মাটি ভরাট, দখল, স্থাপনা বা অবকাঠামো নির্মাণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য। তারপরও পুকুরটি ভরাট-দখল ঠেকাতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাসহ অবৈধ কর্মকাণ্ড পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনবে। তাছাড়া আইনের প্রয়োগ না হলে আইনের অপব্যবহার ঘটে। আর এতে নাগরিককে তার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, আদালত রুল জারি করেছেন এবং অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দিয়েছেন। আদেশে পুকুর ভরাট-দখল, স্থাপনা, অবকাঠামো নির্মাণ বন্ধে স্থিতাবস্থার নির্দেশ দিয়েছেন। এটা কার্যকরী করে দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর আগে গত ২১ মে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত ‘পুকুর দখল করে মার্কেট ও কাউন্সিলর কার্যালয়‘ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন সংযুক্ত করে রোববার শত বছরের পুরনো ডিআইটি প্লট পুকুর রক্ষায় হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ-এইচআরপিবি’র পক্ষে সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এ রিট আবেদন করেন।