আমদানির অনুমতির পর ভারত থেকে পেঁয়াজ আসা শুরু হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে সোমবার (৫ জুন) ৫৭টি ট্রাকে ১ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ এসেছে। সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে এসেছে আরও আট ট্রাক পেঁয়াজ। তা ছাড়া ভারত থেকে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ বেনাপোল বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে। পেঁয়াজ আমদানি শুরুর পর দেশের অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে কেজিতে দাম কমেছে ২৫ টাকা।
দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে বাড়তে প্রায় ১০০ টাকায় পৌঁছে যাওয়ায় সরকার বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়। সোমবার অনুমোদন দেওয়ার প্রথম দিনেই ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে পেঁয়াজ আনা শুরু করেন।
সোনামসজিদ স্থলবন্দরের ডেপুটি কাস্টমস কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানান, সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে সোমবার ৫৭ ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে আমদানি হয়েছে। এসব ট্রাকে প্রায় ১ হাজার ৯৭ মেট্রিক টন পেঁয়াজ রয়েছে। এর আগে সর্বশেষ ১৫ মার্চ পেঁয়াজ এসেছিল সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে। ইমপোর্ট পারমিটের (আইপি) সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যায়।
সোমবার সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়েও পেঁয়াজ এসেছে। ভোমরা শুল্ক স্টেশনের তথ্য কর্মকর্তা শান্ত হাওলাদার জানান, সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা নাগাদ ৮ ট্রাক পেঁয়াজ ভারত থেকে বাংলাদেশে এসেছে। মঙ্গলবার আরও ৮-১০ ট্রাক আসতে পারে। প্রতি মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে ২২০ থেকে ২৫০ মার্কিন ডলারে আমদানি করা হচ্ছে বলে ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ খান জানিয়েছেন।
তা ছাড়া সোমবার রাত সাড়ে ৮টায় সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বেনাপোল স্থলবন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ, জানিয়েছেন বেনাপোল কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার তানভীর রহমান। তিনি বলেন, ‘তিনটি ট্রাকে ২৫ মেট্রিক টন করে ৭৫ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে আমদানি হওয়ার জন্য ইতোমধ্যে বিল অব এনট্রি ও অ্যাসেসমেন্ট হয়ে গেছে। তবে এখনও পেঁয়াজের এই চালান বেনাপোল বন্দরে এসে পৌঁছায়নি।’ বন্দরে আসার পরে পর্যবেক্ষণ করে বাকি কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে রাতেই ক্লিয়ারেন্স দেওয়া হবে বলে জানান এ কর্মকর্তা।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে সাত ব্যবসায়ী ১৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন বলে বন্দরটির উপসহকারী সঙ্গনিরোধ কর্মকর্তা ইউসুফ আলী নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, হিলি থেকে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। তাদের মধ্যে সোমবার বিকাল পর্যন্ত সাত ব্যবসায়ী ১৮ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছেন।
এক দিনে খাতুনগঞ্জে কেজিতে কমল ২৫ টাকা
এক দিন আগে খাতুনগঞ্জে পাইকারি প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। সোমবার আমদানির অনুমতি দেওয়ার পর সেই পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা বলছেন, আমদানির অনুমতি দেওয়ার কারণেই দাম কমছে। দুয়েক দিনের মধ্যে দাম আরও কমে যাবে বলে জানিয়েছেন তারা।
খাতুনগঞ্জের এ কে ট্রেডার্সের মালিক আনোয়ার হোসেন প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ার পরপরই খাতুনগঞ্জে দাম কমতে শুরু করেছে। রবিবার ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় বিক্রি করেছিলাম। আজ (সোমবার) ২৫ টাকা কমে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়।’
গত ১৬ মার্চ ভারত ও মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে সরকার। এর পরপরই দাম বাড়িয়ে দেয় অসাধু ব্যবসায়ীরা। মার্চের শুরুতে আমদানি চালু থাকা অবস্থায় যেখানে খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৮ থেকে ২০ টাকায়, সেখানে দুই মাসের ব্যবধানে দাম বেড়ে গত সপ্তাহে বিক্রি হয় ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। দাম ধারাবাহিক বাড়তে থাকায় রবিবার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেবে বলে ঘোষণা দেয় কৃষি মন্ত্রণালয়। সোমবার অনুমতি দিলে দাম কমতে থাকে।
আমদানির ঘোষণায় লোকসানের মুখে অনেক ব্যবসায়ী
পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণায় অনেক ব্যবসায়ী লোকসানের মুখে পড়ছেন বলে জানিয়েছেন আড়তদাররা। খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া মার্কেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইদ্রিস প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ’পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেওয়ায় হুট করে দাম কমতে শুরু করেছে। হুট করে দাম কমতে থাকায় মধ্যস্বত্বভোগীরা এখন কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা ইতোমধ্যে লোকসান দিচ্ছেন। যার কাছে পেঁয়াজের মজুদ যত বেশি তিনি তত বেশি লোকসানে রয়েছেন।’
খাতুনগঞ্জের একাধিক আড়তদার জানিয়েছেন, এখন খাতুনগঞ্জের আড়তগুলোয় যেসব পেঁয়াজ আছে সেগুলো সপ্তাহখানেক আগে কেনা। তাদের এই পেঁয়াজ প্রতি কেজির দাম পড়েছে প্রায় ৮০ টাকা। অধিক লোকসানের ভয়ে এখন সেই পেঁয়াজ তারা তড়িঘড়ি ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি করে দিচ্ছেন।
দাম আরও কমবে কি না, জানতে চাইলে মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে ভারত থেকে এলেও দাম ৫০ টাকার নিচে নামবে না। কারণ ভারতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ এখন ১৪ থেকে ১৫ রুপিতে বিক্রি হচ্ছে। বাংলাদেশে আমদানি শুরু হলে তারাও দাম বাড়িয়ে দেবে।’
২ লাখ ৮০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন
সংকট কাটাতে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম ভূঁইয়া।
তিনি জানিয়েছেন, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি আবেদন অনুমোদন করেছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সোমবার প্রথম দিনে ২১০টি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন। কৃষকের স্বার্থ বিবেচনা করে এত দিন সরকার আমদানি বন্ধ রেখেছিল। পণ্যটির দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় আমদানির অনুমতি দেয় সরকার।