২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৫:২৫:৩৫ পূর্বাহ্ন
সরকারের ওপর বাইরের চাপ বেড়েই চলেছে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৬-২০২৩
সরকারের ওপর বাইরের চাপ বেড়েই চলেছে

বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতি সামনে রেখে সরকার, সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ ও ব্যক্তির ওপর প্রভাবশালী দেশ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও ব্যক্তিদের পরোক্ষ চাপ তৈরি অব্যাহত আছে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভিসা নীতি ঘোষণা দিয়ে শুরু করার পর সর্বশেষ এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয়জন সদস্য (এমইপি)। এইচআরডব্লিউ গত সোমবার এক বিবৃতিতে শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশিদের নিয়োগে কড়াকড়ি আরোপের জন্য জাতিসংঘকে তাগিদ দিয়েছে।


এসব তৎপরতা সরকারের ওপর চাপ তৈরির চেষ্টা বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। গতকাল মঙ্গলবার তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব বিবৃতি আর চিঠিতে চাপ হয়তো কিছুটা পড়ে সরকারের ওপর।’


জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জ্যঁ-পিয়েরে ল্যাক্রোয়ার ২৫ ও ২৬ জুন বাংলাদেশ সফর করবেন। শান্তিরক্ষা মিশনের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তার ঢাকা সফর সামনে রেখে মিশনের জন্য বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে লোকবল নিতে যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি সূক্ষ্মভাবে করার তাগিদ দিয়েছে এইচআরডব্লিউ।


এইচআরডব্লিউ জাতিসংঘকে বিবৃতিতে বলেছে, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নসহ (র‍্যাব) বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী রাজনৈতিক দল, সক্রিয় অধিকারকর্মী, গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের ওপর এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ওপর দমন-নিপীড়ন চালাচ্ছে। ঢাকা সফরের সময় জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে এসব অভিযোগের বিষয়ে সরব হতে হবে, উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে।


এইচআরডব্লিউর চিফ অ্যাডভোকেসি অফিসার ব্রুনো স্ট্যাগনো উগার্তে বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো দীর্ঘদিন ধরে ‘গুরুতর মানবাধিকার’ লঙ্ঘন করে আসছে।


জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে শীর্ষস্থানীয় অবদান রাখতে চাইলে বাংলাদেশকে যে জাতিসংঘের মানবাধিকার নীতির ভিত্তিতে যাচাই-বাছাইয়ের মুখোমুখি হতে হবে, সে বিষয়ে ল্যাক্রোয়ার জোর দেওয়া উচিত বলে তিনি উল্লেখ করেন।


বর্তমানে স্বল্পমাত্রার বাছাইয়ের প্রক্রিয়া বাংলাদেশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিয়োগের সময়ই শুধু প্রয়োগ করা হয়। আর বাকিদের বাংলাদেশের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করা হয়। এমন পর্যবেক্ষণ দিয়ে এইচআরডব্লিউ বলেছে, শান্তিরক্ষী বাহিনীতে নিযুক্ত সব বাংলাদেশি সৈন্যই যে স্বদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেনি, বর্তমান বাছাই প্রক্রিয়া তা নিশ্চিত করে না।


বাংলাদেশে এই নীতির দুর্বল প্রয়োগের ফলে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর চাকরিতে থাকার সুযোগ পায়, যা জাতিসংঘের নৈতিকতাকে ক্ষুণ্ন করে।


এইচআরডব্লিউ বিবৃতিতে উল্লেখ করে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে দমন-নিপীড়নের রেকর্ড পর্যালোচনা করে জাতিসংঘের কমিটি বলেছে, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের সঙ্গে কাজ করা কর্মীদের প্রায়শই জাতিসংঘের শান্তি মিশনে সেবার জন্য মোতায়েন করা হয়েছে, যা নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন।


এই কমিটি একটি স্বাধীন যাচাই-বাছাই পদ্ধতির সুপারিশ করে বলেছে, যেসব ব্যক্তি বা ইউনিটকে নির্বাচন করা হয়, তারা নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম বা অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ছিল না, তা নিশ্চিত করতে হবে।


জাতিসংঘের উচিত বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে শান্তি মিশনে পূর্বে নিযুক্ত র‍্যাব সদস্যদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া। এরপর র‍্যাবের যেকোনো সদস্যকে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে নিষিদ্ধ করা। 


ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্যের চিঠি

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য (এমইপি) সোমবারই অন্য এক চিঠিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ও ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেফ বোরেল ফন্টেলেসকে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ সাধারণ নির্বাচন নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।


এই এমইপিরা হলেন: স্লোভাক প্রজাতন্ত্রের ইভান শটেফানেক, চেক প্রজাতন্ত্রের মাইকেলা সোজড্রোভা, বুলগেরিয়ার আন্দ্রে কোভাতচেভ, ডেনমার্কের কারেন মেলচিওর, স্পেনের জাভিয়ের নার্ট এবং ফিনল্যান্ডের ইডি হাউটালা।


ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি গতকাল মঙ্গলবার বলেছেন, চিঠিতে স্বাক্ষরকারী ছয়জন এমইপির মতামত প্রতিফলিত হয়েছে।


ছয় এমইপি বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও মানবাধিকার পরিস্থিতির উন্নতির জন্য ‘সংলাপে সীমাবদ্ধ’ না থেকে ‘বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ’ নেওয়ার তাগিদ দিয়ে বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িতদের জন্য ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইইএ, যা সাধারণভাবে শেনজেন হিসেবে পরিচিত) প্রবেশের নিষেধাজ্ঞার মতো ব্যবস্থার কথা বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে।


অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘এইচআরডব্লিউ ও ছয় এমইপি যত সহজে লিখেছেন, বিষয়টি তত সহজ নয়। আন্তর্জাতিক ও আন্তরাষ্ট্র সংস্থাগুলো একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে কাজ করে।’


অন্যদিকে, যে ছয় এমইপি ইইউকে চিঠি দিলেন, তাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে কখনো কাজ করেছেন কি না, আদৌ করেন কি না, সে বিষয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন এই অধ্যাপক। এসব তৎপরতার পেছনে বিভিন্ন লবি কাজ করছে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, জাতিসংঘের মতো আন্তরাষ্ট্র সংস্থার কাজের প্রক্রিয়ায় ‘হুট করে পরিবর্তন’ আনা কঠিন।


সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ভোটব্যবস্থায় অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের ভিসা দেওয়ার ওপর কড়াকড়ি করার কথা বলেছে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতৃত্বাধীন মার্কিন সরকার। গত ২৪ মে এই ঘোষণার পরদিনই দেশটির বিরোধী রিপাবলিকান দলীয় ৬ কংগ্রেসম্যান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে দেওয়া এক চিঠিতে বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুযোগ তৈরিতে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দেন।


শেয়ার করুন