বাংলাদেশের উন্নয়নে একক বছরে ঋণ ও সহায়তার ক্ষেত্রে নতুন রেকর্ড গড়েছে বিশ্বব্যাংক। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিশ্বব্যাংক থেকে এ পর্যন্ত মোট ৩ দশমিক ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে, যা এক বছরে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের সর্বোচ্চ অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি। গতকাল বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিস থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে গতকাল সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে হায়ার এডুকেশন অ্যাকসিলারেশন অ্যান্ড ট্রান্সমিশন প্রকল্পের জন্য ১৯ দশমিক ১ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শরিফা খান ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষে বিশ্বব্যাংক ঢাকা অফিসের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদৌলায়ে শেক অর্থায়ন চুক্তিতে সই করেন। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের যৌথ অর্থায়নে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ (মাউশি) এবং বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) যৌথভাবে এ প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০২৩ থেকে জুন ২০২৮ মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে। বিশ্বব্যাংকের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (আইডিএ) থেকে এসডিআরে উল্লিখিত এ ঋণ গ্রহণ করা হবে। গৃহীত ঋণ ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এসডিআরে গৃহীত ঋণের অর্থের ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ ও ১ দশমিক ৯৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হবে। অনুত্তোলিত অর্থের ওপর বছরে শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ হারে কমিটমেন্ট ফি দেওয়া লাগবে। তবে বিশ্বব্যাংক চলতি অর্থবছরসহ দীর্ঘদিন ধরে কমিটমেন্ট ফি মওকুফ করে আসছে। এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে তাৎপর্যপূর্ণ উন্নয়ন অর্জন করেছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে শিক্ষাক্ষেত্রের অবর্ণনীয় ক্ষতি মোকাবিলা ও উচ্চ শিক্ষিতদের চাকরির সুযোগ সৃষ্টি করা। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের নারীদের উন্নয়নের একটি বিরাট সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে।
৪০ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে এডিবি : রাজস্ব আহরণ এবং সরকারি ব্যয়ের দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে সহযোগিতায় বাংলাদেশের জন্য ৪০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি। কভিড মহামারির সময়ে ২০২১ সালের অক্টোবরে চালু করা ‘সাসটেইনেবল ইকোনমিক রিকভারি প্রোগ্রাম’ এর আওতায় এই ঋণ দিচ্ছে ম্যানিলাভিত্তিক সংস্থাটি। গতকাল এক বিবৃতিতে এডিবি জানিয়েছে, দেশীয় সম্পদ ব্যবস্থাপনায় সংস্কার, সরকারি ব্যয়ে দক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি ছোট ব্যবসা, বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের স্বল্প খরচে ঋণ পেতে সহায়তায় এই অর্থ দেওয়া হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় এডিবির প্রিন্সিপাল পাবলিক ম্যানেজমেন্ট ইকোনমিস্ট আমিনুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশের রাজস্ব বাড়ানো, সরকারি ব্যয় ও সরকারি কেনাকাটায় দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো, রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের সংস্কার এবং ব্যাংক খাত থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বল্প সুদে সাশ্রয়ী ঋণ পেতে সাহায্য করবে এডিবির এই ঋণ। এ ঋণ কর্মসূচি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে জেন্ডার, জলবায়ু পরিবর্তন ও ডিজিটাইজেশনের ওপর, যা অসহায়-দরিদ্রদের জন্য আয় বৃদ্ধিতে সরকারের সহায়তা চেষ্টাকে শক্তিশালী করবে। এডিবি বলছে, নতুন আয়কর আইন কার্যকরের মাধ্যমে আয়কর সংগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি কর আহরণ পদ্ধতির ত্রুটিগুলো কমিয়ে, নিয়ম মেনে চলার সংস্কৃতি ও আইন প্রয়োগের পদ্ধতিকে শক্তিশালী করে করজাল আরও বিস্তৃত করতে সহায়ক হবে এই ঋণ।