২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৬:০১:৫৪ অপরাহ্ন
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সক্রিয় ৩০ ছিনতাইচক্র
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৬-২০২৩
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সক্রিয় ৩০ ছিনতাইচক্র

ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ছিনতাইকারি ও অপরাধীচক্র এখন খুব বেশি বেপরোয়া। এসব অপরাধী পুলিশের দৃষ্টিসীমায় অবস্থান করেই ঘটাচ্ছে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। এ অবস্থায় এ মহাসড়কে চলাচলকারী মানুষের মাঝে উদ্বেগের পাশাপাশি বাড়ছে ক্ষোভ। ভুক্তভোগীরা বলছেন, হাইওয়ে পুলিশ রহস্যজনক কারণে নির্বিকার। তারা তৎপর থাকলে কমে আসত এসব অপরাধ।


ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিক থেকে সাভারের দিকে আসার পথে সিএন্ডবি স্ট্যান্ড এলাকায় হাইওয়ে পুলিশের একটি বক্স রয়েছে। এখানে নিয়মিত ডিউটি করে পুলিশ। আর পুলিশ বক্সের পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপারে থাকে ছিনতাইকারীসহ বিভিন্ন অপরাধীর বিচরণ। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর এই এলাকা ভয়ানক রূপ নেয়। বাস থেকে নামতেই কিংবা ফুটওভারব্রিজ দিয়ে রাস্তা পার হয়ে অপর প্রান্তে গেলেই অপরাধীদের খপ্পরে পড়েন মানুষ। অপরাধীরা মারধর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়। কেউ প্রতিবাদ করলেই ছুরি কিংবা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ক্ষতবিক্ষত করা হয়। ঘটে হতাহতের ঘটনা। বাড়তি ঝামেলার ভয়ে ভুক্তভোগীরা দ্বারস্থ হন না পুলিশের।


মঙ্গলবার (১৩ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী সাভার থেকে ব্যাটারিচালিত রিকশায় ক্যাম্পাসে ফিরছিলেন। সিএন্ডবি এলাকায় পৌঁছালে মুখবাঁধা অবস্থায় তিন ছিনতাইকারী ধারালো অস্ত্রসহ তাদের রিকশার গতিরোধ করে। ছিনতাইকারীর চাপাতির কোপে দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী শান্ত জাবালীর ডান হাতের পাঁচটি আঙুল কেটে যায়। এরপর ছিনতাইকারীরা তাদের মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার প্রতিবাদে ওইদিন রাত সাড়ে ৮টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তায় বেঞ্চ ফেলে আরিচাগামী সড়ক প্রায় দুই ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে।


এর আগে ২৫ মে রাত ৯টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় পূর্বপাশ থেকে ফুটওভারব্রিজ দিয়ে পশ্চিম পাশে যেতেই ছিনতাইদলের খপ্পরে পড়েন পোশাক শ্রমিক পলাশ চন্দ্র। বাধা দেওয়ায় তাকে ঘটনাস্থলেই কুপিয়ে ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। অথচ সেসময়, ঘটনাস্থলের আশপাশেই অবস্থান ছিল পুলিশের।


এ ঘটনার একদিন পর ২৭ মে বিপিএটিসির কর্মী মো. হোসেন অফিস শেষে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশ দিয়ে বাইসাইকেলে ফিরছিলেন তার ইসলামনগরের বাসায়। রাত তখন পৌনে ১০টা। সিএন্ডবি ফুটওভারব্রিজ পেরিয়ে কিছুটা দূরে যেতেই পেছন থেকে ধারালো চাপাতি নিয়ে তাকে ধাওয়া করে তিন-চার ছিনতাইকারী। বাইসাইকেলের পেছন থেকে কোপাতে থাকে তারা। আত্মরক্ষার্থে হোসেন লাফ দিয়ে পড়ে যান সাইকেল থেকে। তাৎক্ষণিক কয়েকটি যানবাহন ঘটনাস্থলে পৌঁছতেই দৌড়ে পাশের জঙ্গল দিয়ে পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।


ভুক্তভোগী হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পরিস্থিতিটা এমন ভয়াবহ ছিল যে, এখনো চোখ থেকে সরাতে পারছি না। এখনো কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার সময় প্রাণটা আল্লাহর হাতে সঁপে দিয়ে বের হই। এ বিষয়ে পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ করেছেন কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে হোসেন বলেন, পুলিশের কাছে অভিযোগ করে লাভ কী? পুলিশ যদি তৎপর থাকত তবে তো এই জায়গায় ছিনতাইকারী থাকার কথা নয়। রাস্তার ওপারে পুলিশ বক্স থাকতে এপারে ছিনতাইকারী থাকে কী করে?


যেসব পয়েন্টে সক্রিয় ছিনতাইকারীরা : সূত্র জানায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের আমিনবাজার থেকে কালামপুর পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার সড়কে বিভিন্ন স্টপেজ ও গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ৩০টির অধিক ছিনতাই গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এর মধ্যে সাভার রেডিও কলোনি থেকে নবীনগর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার পথে সক্রিয় অন্তত ১০টি ছিনতাই গ্রুপ। রেডিও কলোনি, বিপিএটিসি ফুটওভারব্রিজের নিচে, অরণ্যালয়ের রাস্তার মুখে, বিএলআরআই গেটের সামনে, সিএন্ডবিতে রাস্তার দুই পাশে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়, কুরগাঁও রাস্তার মুখে, স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটক, নবীগনগর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় প্রতিরাতেই ওত পেতে থাকে ছিনতাইচক্র। একাকী বা ধীরে চলে এমন গাড়ি বা রিকশা, অটোরিকশা, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ইত্যাদি দেখলেই তারা ঘিরে ধরে সবকিছু কেড়ে নেয়। ভুক্তভোগীরা বলছেন, গত বছর এসি ল্যান্ডকে ছুরিকাঘাতের পর কিছুদিন মহাসড়কে তৎপর ছিল হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু ইদানীং তাদের ঢিলেঢালা ভাবের কারণে অপরাধীদের দৌরাত্ম্য আবারও বেড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, সাভার হাইওয়ে থানায় ওসি আজিজুল হক যোগদানের পর থেকেই হাইওয়ে পুলিশ মহাসড়কের নিরাপত্তায় তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। তারা আশপাশের সড়ক থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা আটক বাণিজ্যে মত্ত থাকেন বেশিরভাগ সময়। এছাড়াও অবৈধ যান চলাচলে সহযোগিতাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। যোগাযোগ করা হলে সাভার হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজিজুল হক যুগান্তরকে বলেন, পলাশ চন্দ্র যেদিন খুন হন সেদিন সিএন্ডবি এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ ছিল না। সেদিন ঘটনাস্থলের পাশেই সাভার থানা পুলিশ ডিউটিতে ছিল।

ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহিল কাফি যুগান্তরকে বলেন, ঘটনার রাতে ওই এলাকায় সাভার থানা পুলিশের ফুটপ্যাট্রোল ডিউটি ছিল। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক তারা ঘটনাস্থলে যায়। তিনি বলেন, ছিনতাইপ্রবণ এইসব এলাকায় আমরা সিসিটিভি লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছি।

ঢাকা জেলা উত্তর গোয়েন্দা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ বিপ্লব যুগান্তরকে বলেন, পলাশ চন্দ্র খুনের ঘটনায় ২৯ মে রাতে মনির কসাই ও হাবিব মোল্লাহ নামে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. শাহাবুদ্দিন যুগান্তরকে বলেন, মহাসড়কের ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলো চিহ্নিত করে পুলিশি টহল এবং নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। গোয়েন্দা নজরদারি বাড়িয়ে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা গেলে অপরাধ কমে আসবে। তিনি বলেন, মামলাগুলো সাধারণত থানা পুলিশ তদন্ত করে থাকে। আমরা তাদের সঙ্গে বিষয়টি শেয়ার করব। এছাড়া পরিবহণ খাতের মালিক, শ্রমিক ও চালকদের সঙ্গে কথা বলব। যাতে কোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই জানা যায় এবং ব্যবস্থা নেওয়া যায়। সাভার পৌরসভার মেয়র মো. আব্দুল গনি যুগান্তরকে বলেন, ছিনতাই প্রতিরোধ করতে হলে অপরাধীকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

শেয়ার করুন