রাজধানী ঢাকাসহ দেশের মেট্রোপলিটন শহরগুলোতে বিদ্যুতের সরবরাহ গ্রাম অঞ্চলের তুলনায় সব সময় বেশিই থাকে। রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলেও গ্রাম অঞ্চলের গ্রাহকদের সহ্য করতে হচ্ছিল লোডশেডিং। আরামদায়ক আবহাওয়াসহ কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় উৎপাদনে ফেরায় গ্রামের লোডশেডিংয়ের তীব্রতা আগের চেয়ে অনেকখানি কমেছে। কোরবানির ঈদের ছুটিতে আরও স্বস্তির মিলবে বলেই জানাচ্ছেন বিদ্যুৎ বিতরণ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঈদসহ অন্যান্য উৎসবগুলোতে পরিবার পরিজন নিয়ে মানুষ যখন গ্রামে ফেরে তখন অনেকের মনে আশঙ্কা ভর করে—লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা সইতে হবে না–তো! সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিরা জানিয়েছে, ঈদুল আজহায় শহরের পাশাপাশি গ্রামেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে।
গত কয়েক দিন এবং আজ বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির কারণে তাপমাত্রা কমায় বিদ্যুতে চাহিদা কমেছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) জানিয়েছে, গতকাল এবং আজ সারা দেশে কোনো লোডশেডিং ছিল না। সামনের দিনগুলোতেও শীতল আবহাওয়া অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। এ কারণে বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদা মতো করা যাবে বলে জানিয়েছেন বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) এসএম ওয়াজেদ আলী সরকার।
এসএম ওয়াজেদ আলী সরকার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে গাছপালা কম থাকা এবং শিল্প কারখানার দূষণ ও জনসংখ্যার আধিক্যের কারণে তাপমাত্রা সব সময় বেশি থাকে। এ কারণে অনেকেই তীব্র গরম থেকে বাঁচতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ব্যবহারও বেশি করেন। কোরবানি ঈদের ছুটিতে শহরের বাসিন্দাদের অনেকেই গ্রামে চলে গেছেন। এতে বিদ্যুতের চাহিদা শহরগুলোতে কমছে প্রায় ৩ হাজার মেগাওয়াট।’ হঠাৎ এসির ব্যবহার কমে যাওয়াও বিদ্যুতের চাহিদা হ্রাসে অন্যতম ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন এই কর্মকর্তা।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তথ্য উপাত্ত ঘেঁটে দেখা যায়, মে মাসের দিকে যখন সারা দেশে প্রচণ্ড দাবদাহ চলছিল তখন বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াটে। সেখানে বুধবার বিকেল ৩টায় ছিল ৮ হাজার ৪১০ মেগাওয়াট।
বিদ্যুতের চাহিদা কমার কারণ হিসেবে এসএম ওয়াজেদ আলী সরকার মনে করেন, একদিকে শীতল আবহাওয়া, অন্যদিকে শিল্প কলকারখানা বন্ধ বড় প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
আগামী কয়েক দিন বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় পিডিবি এবং পিজিসিবির কর্মকর্তারা আজকের পত্রিকাকে জানান, ঈদের সময় সারা দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা মতো সরবরাহ দেওয়া যাবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনে সমস্যা হলে কোনো কোনো এলাকায় সরবরাহে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
পিডিবি জানিয়েছে, মঙ্গলবার পিক আওয়ারে সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল প্রায় ১১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট। উৎপাদনও ছিল চাহিদার সমান।
পিডিবি পরিচালক (জনসংযোগ) শামীম হাসান পিজিসিবির ন্যাশনাল রোড ডেসপ্যাচ সেন্টারকে উদ্ধৃত করে আজকের পত্রিকাকে জানান, বুধবার বেলা ১২টায় সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৭ হাজার ৯১৭ মেগাওয়াট। উৎপাদন করা হয়েছে চাহিদার সমান। অন্যদিকে বিকেল ৩টায় চাহিদা ছিল ৮ হাজার ৪১০ মেগাওয়াট। উৎপাদনও ছিল সমান।
ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় সংকটে পড়েছে সরকার। কয়লা আমদানি বন্ধ থাকায় রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদন সাময়িক বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছিল। এর জেরে সারা দেশে দেখা দেয় তীব্র লোডশেডিং।
তবে কয়লা আমদানির পর রামপাল আংশিক উৎপাদনে ফিরলে এবং ২০ দিন বন্ধ থাকার পর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট গত ২৫ জুন আংশিক উৎপাদনে আসার পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। একই সঙ্গে গরমে তীব্রতা কমে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বৃষ্টিপাতের কারণেও বিদ্যুতের চাহিদা কমে যাওয়া লোডশেডিং পরিস্থিতি মোকাবিলায় বড় ভূমিকা রেখেছে।
পিডিবি জানিয়েছে, ঈদের ছুটিতে বিদ্যুতের সরবরাহ নিয়ে সমস্যা থাকবে না। তবে ছুটি শেষে মানুষ কর্মক্ষেত্রে ফেরা এবং কলকারখানা চালু হওয়ার পাশাপাশি তাপমাত্রা বেড়ে গেলে লোডশেডিং ফেরার আশঙ্কা আছে। অবশ্য বর্ষা মৌসুম এসে যাওয়ায় বিদ্যুতের চাহিদা উৎপাদন সক্ষমতা ছাড়িয়ে যাবে না বলেই আশা করছেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।