হঠাৎই তামিম ইকবালের অবসরে তোলপাড় বাংলাদেশ ক্রিকেট। আজ আকস্মিক অবসরের ঘোষণা দিতে গিয়ে কেঁদেছেন তামিম। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর ফর্ম, ফিটনেস নিয়ে অনেক আলোচনাই হচ্ছিল। তবে যেভাবে অশ্রুভেজা বিদায়টা নিলেন তামিম; তাতে হতবাক, বিস্ময় আর অনেক প্রশ্ন মিলেমিশে একাকার। বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা ওপেনার, ব্যাটিংয়ে অনেক রেকর্ড, আর দুর্দান্ত সব ইনিংস আছে তাঁর। তবু তামিম মানেই কিছু দৃশ্য আপনার চোখে ভাসবেই—
ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা: ২০০৭ বিশ্বকাপ
তামিম প্রথম আলোচনায় আসেন ২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। পোর্ট অব স্পেনে সদ্য কৈশোর পেরোনো এক ওপেনারের অদম্য সাহসের অপূর্ব নিদর্শন ছিল সে ম্যাচ। জহির খানকে ডাউন দ্য উইকেটে দিয়ে তাঁর মারা বাউন্ডারি এখনো চোখে ভাসে সবার। ক্যারিয়ারেরই মাত্র পঞ্চম ম্যাচে, সেটিও আবার বিশ্বকাপের মঞ্চে, তাঁর ৫৩ বলে ৫১ রানের সেই ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ে।
২০১০ সালের ইংলিশ গ্রীষ্মের শুরুতে বাংলাদেশের ইংল্যান্ড সফরে আলোড়ন তুলেছিলেন তামিম। লর্ডস আর ওল্ডট্র্যাফোর্ডে সেঞ্চুরি এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। বিশেষ করে লর্ডসে তাঁর সেই উড়ন্ত উদ্যাপন, অ্যাটেনডেন্টকে জার্সির পেছনে হাত দিয়ে অনার্স বোর্ডে নাম লেখানোর নির্দেশনা—স্মৃতিতে থাকবে ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। সেঞ্চুরি দুটিও তাঁর এসেছিল দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে, আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে এলেমেলো করে দিয়েছিলেন ইংলিশ বোলিং লাইনআপ । তামিম সেবার উইজডেন বর্ষসেরাও হয়েছিলেন, বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে এরপর আর কেউ উইজডেন বর্ষসেরা হননি।
২০১২ এশিয়া কাপে টানা চার ফিফটি করে তামিম এক-দুই করে চারটি আঙুল দেখিয়েছিলেন। মনে করা হয়, তাঁর এই উদ্যাপন তখনকার বোর্ড সভাপতি মুস্তফা কামালের উদ্দেশে। তিনি নাকি তামিমকে এশিয়া কাপ থেকে বাদ দিতে চেয়েছিলেন। যদিও পরে তামিম বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির উদ্দেশে তাঁর এই উদ্যাপন নয়। শুধুই দেখানো যে তিনি চারটি ফিফটি করেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস এটি। ২০১৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা টেস্টে তামিমের এই ইনিংসটা এসেছিল তৃতীয় ইনিংসে। পাকিস্তানের শক্তিশালী বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তীব্র গরমে যে ইনিংসটা তিনি খেলেছিলেন, টেস্টে ওপেনারদের সেরা ১০টি ইনিংসের মধ্যে ঢুকে যেতে বাধ্য। ৪৪৮ মিনিট ব্যাটিং করে ২৭৮ বলে তিনি করেছিলেন ২০৬ রান। তাঁর সঙ্গে সেঞ্চুরি করেছিলেন ওপেনিং সঙ্গী ইমরুল কায়েসও। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে দুজনের ৩০০ পেরোনো জুটি এখনো রেকর্ড হয়ে আছে।
২০১৮ এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ভাঙা আঙুল নিয়ে এক হাতে ব্যাট করতে নেমে যাওয়া এক আইকনিক দৃশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে। সাহস, ভীষণ সাহস শুধু দেখাননি, এ তো রীতিমতো পাগলামো! ৪৭তম ওভারের এক বল বাকি থাকতে সুরঙ্গা লাকমলের বলে মোস্তাফিজুর রহমান ফিরে যেতে বাংলাদেশের স্কোর হয় ৯ উইকেটে ২২৯। বাংলাদেশের স্কোর ওখানেই থেমে যেতে পারত। থামতে দেননি তামিম। দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে সবাইকে অবাক করে যে দৃশ্যের অবতারণা হলো, চিকিৎসকদের বারণ না শুনে সাহসের অনন্য উদাহরণ হয়ে ১১ নম্বর ব্যাটার হিসেবে নামেন তামিম। বাঁ-হাতি ওপেনারের এই সাহস, এই ত্যাগ অনন্য এক দৃশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেটে।