২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১০:১৭:২৮ অপরাহ্ন
বাংলাদেশ নিয়ে ইইউ এমপিদের সেই চিঠির ৩ বিষয় আমলে নিয়েছেন বোরেল
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৪-০৭-২০২৩
বাংলাদেশ নিয়ে ইইউ এমপিদের সেই চিঠির ৩ বিষয় আমলে নিয়েছেন বোরেল

বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক প্রধান জোসেপ বোরেল ফন্টেলেসকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য। গত ১২ জুন লেখা সেই চিঠিতে সম্ভব হলে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশকে চাপ প্রয়োগের কথাও উল্লেখ করা হয়েছিল। 


বহুল আলোচিত সেই চিঠির প্রতিক্রিয়ায় তিনটি বিষয়কে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেল। আগামী দিনগুলোতে এ তিনটি বিষয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করবে বলে জিওপলিটিক্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। 


আজ শুক্রবার জিওপলিটিক্সে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে—বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ইইউ প্রতিনিধিদলের একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন শুরুর দুই দিন আগে ৬ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে জোসেপ বোরেল তাঁর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিেন। ওই চিঠিতেই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণের বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। সেগুলো হলো—


গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং ইইউর নজরে আসন্ন নির্বাচন

জোসেপ বোরেল নিশ্চিত করেছেন, তাঁর অফিস আসন্ন নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সবাইকে রাজনৈতিক অধিকার প্রয়োগ এবং সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধী বিএনপির নাম উল্লেখ না করে প্রধান দলগুলোর মধ্যে একটি ‘অকৃত্রিম সংলাপের’ প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তিনি। 


সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বোরেল মত দিয়েছেন—গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া শুধু সংসদীয় নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং নাগরিক সমাজের জন্য পর্যাপ্ত স্থান নিশ্চিতসহ মতপ্রকাশ এবং সমাবেশের স্বাধীনতা এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। যেকোনো মূল্যে সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানান তিনি। 


মানবাধিকারে বিশেষ গুরুত্ব

সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ২০২২ সালে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ বিলিয়ন ইউরোর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার হলো ইউরোপের দেশগুলো। 


এ অবস্থায় ২০২৩ সাল শেষে বাংলাদেশ জিএসপি (বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার) সুবিধা হারাতে চললেও বাংলাদেশি উৎপাদকেরা ২০২৪ থেকে ২০৩৪ সাল পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিতে জিএসপি-প্লাস সুবিধা চেয়েছেন। 


বোরেলের চিঠি অনুসারে, জিএসপি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ‘১৫টি মূল নীতি’র মধ্যে বর্ণিত মৌলিক মানব ও শ্রম অধিকারের নীতিগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন শিগগির এ বিষয়ে বাংলাদেশের অগ্রগতি সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনা করবে। 


সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, সেই ১৫টি মূল নীতির মধ্যে মানবাধিকার-বিষয়ক নীতি অন্তর্ভুক্ত আছে সাতটি। এগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের আন্তর্জাতিক চুক্তির (আইসিসিপিআর) বিষয়টি। এই চুক্তির ২৫ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার এবং সুযোগ থাকবে। অনুচ্ছেদ-২-এ উল্লেখিত কোনো পার্থক্য এবং অযৌক্তিক বিধিনিষেধ ছাড়াই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোতে ভোট দেওয়া এবং নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে সবার সমানাধিকার থাকবে। ভোটারদের স্বাধীনভাবে নিজ ইচ্ছায় ভোট প্রদানের নিশ্চয়তাসহ এই ভোট গোপন ব্যালটের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হবে।’


উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্বেগ ছিল। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক বিবৃতিতে বলেছিল, সহিংসতা নির্বাচনের দিনটিকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং নির্বাচনটির পুরো প্রক্রিয়ায় একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী প্রচারসহ ভোট প্রদানও কলঙ্কিত হয়েছে। 


তাই বিবৃতি অনুযায়ী এটা স্পষ্ট যে গত দুটি নির্বাচনকে ‘প্রকৃত পর্যায়ক্রমিক নির্বাচন’ হিসেবে বিবেচনা করছে না ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া ওই নির্বাচনগুলোতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের বাস্তবায়ন না হওয়া ছাড়াও ভোটারদের স্বাধীন ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি। 


এ অবস্থায় ২০২৪ সালের আসন্ন নির্বাচনটি যদি গত দুটি নির্বাচনের মতো হয়, তাহলে বাংলাদেশকে এমন একটি দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হবে, যে দেশ নাগরিক, রাজনৈতিক এবং মৌলিক মানবাধিকার-সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক চুক্তিকে সম্মান করে না। 


বোরেলের চিঠির বক্তব্য অনুযায়ী, আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের এভরিথিং বাট আর্মসে (ইবিএ) বাংলাদেশের প্রবেশাধিকার ক্ষুণ্ন হতে পারে। একই ধরনের পরিণতি হতে পারে ইউরোপের বাজারগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের জিএসপি-প্লাস সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রেও।

আছে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের প্রসঙ্গও

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে খুব বেশি আলোচিত না হলেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা। ২০১৮ সাল থেকে উল্লেখযোগ্য একটি সময় কারাগারে কাটানোর পর থেকেই নানা ধরনের শারীরিক জটিলতায় ভুগছেন তিনি।

চিঠিতে জোসেপ বোরেল জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতিও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এ ছাড়া তিনি সম্ভাব্য সর্বোত্তম চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন কি না, সেই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। 

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রীয় আইনের শর্ত জুড়ে দিয়ে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসা করাতে বাধা দিচ্ছে। তাঁর স্বাস্থ্যের যেকোনো বড় অবনতি দেশকে সহিংস পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকলেও তিনি বিএনপির চেয়ারপারসন এবং তাঁর বিপুল অনুসারী রয়েছে। 

আরও উল্লেখ আছে, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকার যেসব আইনকে সামনে আনছে, তা সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে সংসদ সদস্য হাজি সেলিমের প্রসঙ্গ টানা হয়েছে। আদালত কর্তৃক দোষী সাব্যস্ত হয়েও উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২২ সালে তিনি ব্যাংককে যান।


শেয়ার করুন