২৩ নভেম্বর ২০২৪, শনিবার, ০৪:০৫:৪৯ অপরাহ্ন
রাজউকের প্লট পাচ্ছেন আরও ১৫ সংসদ সদস্য
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৭-২০২৩
রাজউকের প্লট পাচ্ছেন আরও ১৫ সংসদ সদস্য

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি মাত্র কয়েক মাস। এই সময়ে একাদশ সংসদের ১৫ সংসদ সদস্যকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দ দিচ্ছে সরকার। তাঁদের ১ জন স্বতন্ত্র এবং বাকি ১৪ জন আওয়ামী লীগদলীয় সদস্য। তাঁদের ৯ জন সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য।


এই ১৫ সংসদ সদস্য রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্পে প্লট পাচ্ছেন। সংরক্ষিত কোটা থেকে তাঁদের প্লট দেওয়া হচ্ছে। রাজউকের সূত্র বলেছে, একসঙ্গে এত প্লট না থাকায় দ্বৈত প্লট বাতিল করে পর্যায়ক্রমে তাঁদের বরাদ্দ দেওয়া হবে।


জানতে চাইলে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ গতকাল রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সংরক্ষিত কোটা থেকে আমরা সংসদ সদস্যদের প্লট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে তালিকা দেওয়া হয়েছে।’


সূত্র বলেছে, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় প্লট বরাদ্দ দিতে একাদশ সংসদের ১৫ জন্য সদস্যের একটি তালিকা ১৩ জুলাই রাজউকের চেয়ারম্যানের কাছে পাঠায়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে এই সংসদ সদস্যদের সবাইকে ৩ কাঠা আয়তনের একটি করে প্লট দিতে বলা হয়। এই চিঠি পাওয়ার পর রাজউক প্লট বরাদ্দ দেওয়ার পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করেছে।


রাজউকে পাঠানো গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠিতে যে ১৫ সংসদ সদস্যের নাম রয়েছে তাঁরা হলেন পটুয়াখালী-৩ আসনের এস এম শাহজাদা, টাঙ্গাইল-৭ আসনের খান আহমেদ শুভ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-১ আসনের ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, খুলনা-৬ আসনের মো. আক্তারুজ্জামান, বগুড়া-৭ আসনের মো. রেজাউল করিম বাবলু, কুষ্টিয়া-৪ আসনের সেলিম আলতাফ জর্জ, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৮-এর সংসদ সদস্য কানিজ ফাতেমা আহমেদ, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৯-এর বাসন্তী চাকমা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-১২-এর উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৬-এর মনিরা সুলতানা, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩০-এর অ্যাডভোকেট গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩১-এর মমতা হেনা লাভলী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৩-এর ফরিদা খানম সাকী, সংরক্ষিত মহিলা আসন-৩৬-এর সৈয়দা জোহরা আলাউদ্দিন, সংরক্ষিত মহিলা আসন-২৫-এর নার্গিস রহমান।


২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনে রেজাউল করিম বাবলু স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়লাভ করেন। তিনি ছাড়া বাকি ৫ সংসদ সদস্য ও সংরক্ষিত আসনের ৯ জন সদস্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের। সংরক্ষিত আসনের সদস্যরা ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি শপথ নেন। খান আহমেদ শুভ ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিজয়ী হন।


প্লট বরাদ্দ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পটুয়াখালী-৩ আসনের সংসদ সদস্য এস এম শাহজাদা গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি বা আমার পরিবার সরকারি কোনো প্লট বা ফ্ল্যাট বরাদ্দ পাইনি। আমি অনেক আগে একটি আবেদন করেছিলাম। এখন সরকার দিচ্ছে। এখানে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।’


রাজউকের সদস্য (এস্টেট) মো. নূরুল ইসলাম বলেন, সংরক্ষিত কোটায় যাঁদের নামের তালিকা এসেছে, বিধি অনুসরণ করে কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্লট বরাদ্দ দেবে।


সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ পর্যন্ত সংরক্ষিত কোটায় রাজউকের পূর্বাচল উপশহর প্রকল্প, ঝিলমিল আবাসন প্রকল্প, উত্তরা তৃতীয় পর্ব এবং উত্তরা আবাসিক এলাকায় প্লট দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে গত কয়েক বছরে প্রায় ৩০০ জনকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে। পূর্বাচল প্রকল্পে প্রায় ২৬ হাজার প্লট রয়েছে।


রাজউকের প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত বিধিমালার ১৩(এ) ধারা অনুযায়ী, সরকারি চাকরিতে অবদান, জনসেবা ও রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ অবদান বিবেচনায় নিয়ে এই কোটায় প্লট দেওয়া হয়। তবে এ জন্য প্লট পেতে আগ্রহী ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী কিংবা গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হয়। সরকারের অনুমোদন পেলে তা রাজউকের বোর্ড সভায় বা সাধারণ সভায় উত্থাপন করতে হয়। বোর্ড সভায় প্লট বরাদ্দ চূড়ান্ত হয়।


অভিযোগ রয়েছে, সংরক্ষিত কোটার অপব্যবহার হচ্ছে। রাজধানীতে বাড়ি বা ফ্ল্যাট আছে, তাঁরাও প্লট পাচ্ছেন। ১৫ জুলাই পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ভবন মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘গরিব মানুষকে তাড়িয়ে দিয়ে বড়লোকদের আরও বড়লোক বানিয়েছে রাজউক। প্লট বরাদ্দের মাধ্যমে রাজউক এ কাজ করেছে।’


১৫ সংসদ সদস্যকে প্লট বরাদ্দের বিষয়ে রাজউকের চেয়ারম্যান (সচিব) মো. আনিছুর রহমান মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়েছি। একসঙ্গে এত প্লট খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তবে অনেক দ্বৈত প্লট আছে, এগুলো বাতিল করে পর্যায়ক্রমে বরাদ্দ দেব।’




শেয়ার করুন