২৪ নভেম্বর ২০২৪, রবিবার, ০৮:৫৪:১০ পূর্বাহ্ন
অধ্যাপক তাহের হত্যার দুই আসামীর ফাঁসি কার্যকর হতে পারে আজ, কারাগারে স্বজনরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-০৭-২০২৩
অধ্যাপক তাহের হত্যার দুই আসামীর ফাঁসি কার্যকর হতে পারে আজ, কারাগারে স্বজনরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রাপ্ত আসামি ড. মিয়া মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলমের ফাসি কার্যকর হতে পারে আজ মঙ্গলবার।


ফাসি কার্যকর করার কার্যক্রম এরই মধ্যে শুরু করেছে রাজশাহী কারা কর্তৃপক্ষ। দন্ডপ্রাপ্তদের পরিবার তাদের সাথে সাক্ষাত করেছে। আসামি জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।


তিনি বলেন, গত রোববার কারা কর্তৃপক্ষ আমাদের চিঠি দিয়েছিল। রিট পেন্ডিং থাকায় আমরা তখন দেখা করি নাই। রিট নিষ্পত্তি হওয়ার পর আজ আমরা দেখা করেছি। আমাদের পরিবারের প্রায় ৩৫ জন দেখা করতে এসেছিলো।


এদিকে আজ (২৫ জুলাই) রাতেই অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করা হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি সূত্র জানিয়েছে।


আজ দুপুরে কারাগারের ভেতরে রাজশাহী জেলা প্রশাসক সিভিল সার্জন, ডিআইজি প্রিজন ও কারা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষরা মিটিং করেছে। তবে এ নিয়ে কোন বক্তব্য দেননি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষ।


এর আগে গত ২০ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে লিভ টু আপিল দায়ের করা হয়। আবেদনে জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চাওয়া হয়।


গত ১৭ জুলাই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে দায়ের করা রিট খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।


বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী ও বিচারপতি আলী রেজার রুকুর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


আদালত বলেন, আপিল বিভাগ আসামিদের রিভিউ খারিজ করে দিয়েছেন। এই মুহূর্তে এই রিট শোনার সুযোগ নেই।


আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।


গত সপ্তাহে রাবির ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে রিট করেন তার পরিবারের সদস্যরা।


এদিকে বঙ্গভবন সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। যেকোনো সময় তাদের ফাঁসি কার্যকর করা হবে।


গত ৩ মে রাবি’র ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজের রায় প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ। এর ফলে এই দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আইনগত কোনো বাধা থাকলো না। তারা শুধু রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার সুযোগ পাবেন।


প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির বেঞ্চ ২১ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করেন।


গত ২ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেন আপিল বিভাগ।


প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ৮ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


আদালতে রিভিউ আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এস এন গোস্বামী ও অ্যাডভোকেট এস এম শাহজাহান। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোরশেদ।


আদালতে ড. তাহেরের স্ত্রী সুলতানা আহমেদ, মেয়ে অ্যাডভোকেট সেগুফতা আহমেদ, তাদের পরিবারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি ও শাকিলা রওশন উপস্থিত ছিলেন।


এর আগে গত বছরের ৫ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ফাঁসি বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। একইসঙ্গে ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য দুই আসামির যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রাখেন আদালত। যাবজ্জীবন সাজা বহাল থাকা দুজন হলেন নাজমুল আলম ও আব্দুস সালাম। পরে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেন আসামিরা।


অধ্যাপক ড. তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুতবিচার আদালত চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং দুইজনকে বেকসুর খালাস দেন।


আসামিরা এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন।


২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল হাইকোর্ট দুই আসামির ফাঁসির দণ্ড বহাল রাখেন এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন।


এ রায়ের বিরুদ্ধেও আসামিরা আপিল করেন। আজ আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেন।


২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক ড. তাহেরের মরদেহ। এর দুইদিন পর ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শেয়ার করুন