রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌরসভা এলাকায় অতিরিক্ত মুল্যে টিসিবি (ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ) পণ্য বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। সুবিধাভোগী ভোক্তাদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশী মূল্যে পন্য বিক্রির এই ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার। এ ঘটনায় পৌর সদরসহ পুরো উপজেলায় বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সুবিধাভোগী ভোক্তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে পৌর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মৌখিক ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কে অবগত করেছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে, ঘটনাটি ধামাচাঁপা দিতে এবং বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করার নামে থানা মোড়ের এক ব্যবসায়ী সরকার নির্ধারিত টিসিবি ডিলারের কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
দুর্গাপুর পৌর কর্তৃপক্ষ ও পৌর এলাকার সুবিধাভোগীদের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, দুর্গাপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে টিসিবি কার্ডধারী হতদরিদ্র ভোক্তা রয়েছে ৩ হাজার ২৩৮জন। প্রতিটি কার্ডধারী ভোক্তাদের জন্য জুলাই মাসে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি মশুর ডাল ও ২ লিটার সোয়াবিন তেল বরাদ্দ দেয়া হয়।
সুবিধাভোগী ভোক্তাদের জন্য ৫ কেজি চাল ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি ডাল ১২০ টাকা এবং ২ লিটার সোয়াবিন তেল ২০০ টাকা হারে প্যাকেজ মূল্য নির্ধারন করা হয় মোট ৪৭০ টাকা।
গত বুধবার (২৫ জুলাই) পৌরসভা চত্বরে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হয়েছে। পৌর এলাকার এক থেকে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোট ২ হাজার ২০০ জন টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগীর কাছ থেকে প্যাকেজ মূল্য বাবদ ৪৭০ টাকা নেয়ার কথা থাকলেও টিসিবি ডিলার মেসার্স রিপন স্টোরের স্বত্বাধিকারী রিপন আলী তালিকাভুক্ত সুবিধাভোগীদের থেকে প্যাকেজ মূল্য বাবদ ৫০০ টাকা নেন। সেই হিসেবে ৬৬ হাজার টাকা অতিরিক্ত নেন টিসিবি ডিলার।
টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা হুড়োহুড়ি করে আগে পন্য নেয়ার উদ্দেশ্যে প্যাকেজ মূল্যের হিসাব না করেই টিসিবি ডিলারের দাবিকৃত ৫০০ টাকা দিয়েই পন্য নেন। কয়েকজন সুবিধাভোগী বাড়ী গিয়ে মূল্য হিসাব করে টিসিবি ডিলারের অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। পরের দিন পৌরসভার মেয়র সাজেদুর রহমান মিঠুর কাছে অভিযোগ দেন হতদরিদ্র টিসিবি কার্ডধারী সুবিধাভোগীরা।
টিসিবি ডিলারের অতিরিক্ত মুল্য নেয়ার এই ঘটনাটি পৌর এলাকাসহ পুরো উপজেলায় ছড়িয়ে পড়লে সাধারন মানুষদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পৌর মেয়র সকল কাউন্সিলদের ডেকে এ বিষয়ে আলোচনা করে টিসিবি ডিলার রিপনকে ডেকে পাঠান। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্য নেয়ার বিষয়ে টিসিবি ডিলার রিপন আলীর কাছে জানতে চাইলে ডিলার রিপন আলী অতিরিক্ত মুল্য বিষয়টি অকপটে স্বীকার করে ক্ষমা চান। পরে সকল কাউন্সিলরদের মতামতের ভিত্তিতে পৌর মেয়র মিঠু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি মৌখিক ভাবে জানান। জানতে চাইলে অভিযুক্ত টিসিবি ডিলার রিপন আলী বলেন, আমি ইউএনও স্যারের নিকট ভূল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছি। অসাবধানতা বসতঃ কর্মচারীদের ভুলে এই ঘটনা ঘটেছে। রিপন আলী আরও বলেন, এই বিষয়টি যেন জানাজানি না হয় সে জন্য বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করার নাম করে থানা মোড়ের ব্যবসায়ী রুস্তম আলী আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ সৃষ্টি করে ১৬ হাজার টাকা নিয়েছেন। দুর্গাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি নিয়ে টিসিবি ডিলারের সাথে কথা হয়েছে। টিসিবির ডিলার ভূল স্বীকার করেছেন। তাছাড়া বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।