পদ্মা সেতুর বদৌলতে যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নে গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে আগের সব রেকর্ড ভেঙে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করেছেন। এতে সরকারের প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে না ওঠায় দুর্ভোগ কাটেনি যাত্রীদের। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন অবকাঠামো নির্মাণের। পদ্মা সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমে যাওয়ায় এ রুটে যাত্রী পারাপার বেড়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় মালবাহী ট্রাককে আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদীপাড়ে অপেক্ষা করতে হয় না। ফলে বেড়েছে বাণিজ্যিক সুবিধাও। জানা যায়, দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতের বাণিজ্য শহর কলকাতাসহ বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ, চিকিৎসা, ব্যবসা, শিক্ষাসহ স্বজনদের সাথে দেখা করতে প্রতি বছর লাখ লাখ মানুষ যান। সহজ যোগাযোগব্যবস্থা, যাতায়াতে সময় ও খরচ কম বিধায় ভারতগামী অধিকাংশ মানুষ এপথ ব্যবহার করে থাকেন। কিন্তু বেনাপোল চেকপোস্টে আগের ভোগান্তি রয়েই গেছে। বন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়েনি।
যাত্রীসেবার মান না বাড়লেও চলতি মাসের ১ তারিখ থেকে হঠাৎ করেই ভ্রমণকর ৫০০ টাকার স্থলে এক হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। বন্দরের টার্মিনাল চার্জ ৫২ টাকা যাত্রীপ্রতি নেয়া হলেও কোনো অবকাঠামো গড়ে ওঠেনি। কোনো সেবা পাচ্ছে না যাত্রীরা। এখনো ঘণ্টার পর ঘণ্টা রোদ বৃষ্টিতে দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। টার্মিনালের বাইরে অসুস্থ যাত্রীদের বসার বা বাথরুমের কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি। লাইনে থাকা যাত্রীরা টার্মিনালের মধ্যে বাথরুমে যেতে পারেন না। ভোরে আসা যাত্রীদের দুর্ভোগ আরো চরমে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানিকারক সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, গত বছর দেশে উন্নয়ন খাতে যেসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে তার মধ্যে পদ্মা সেতু ছিল সবচেয়ে আলোচিত। সেতুর কল্যাণে ঢাকা থেকে বেনাপোল বন্দরের দূরত্ব কমেছে ৭১ কিলোমিটার। এটি শুধু বাণিজ্যকে সহজ করেনি, এ পথে ভারত-বাংলাদেশে যাতায়াতকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ কমিয়েছে। এখন ঢাকা থেকে মাত্র সাড়ে ৪ ঘণ্টায় বেনাপোলে পৌঁছানো যাচ্ছে। যাতায়াতসুবিধা ও অর্থসাশ্রয়ের জন্য অন্য বন্দর বা আকাশপথ ব্যবহারকারীরা এখন বেনাপোল রুট ব্যবহার করছেন।
ভারত থেকে আসা যাত্রী সাব্বির হোসেন বলেন, পদ্মা সেতুতে যাত্রা সহজ হয়েছে। তবে বেনাপোল বন্দরের আগের ভোগান্তি রয়ে গেছে। বন্দরে যাত্রী নিরাপত্তা ও সুবিধা বাড়াতে হবে।
ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী সাজ্জাদ হোসেন জানান, বর্তমানে ভারত ভ্রমণে প্রাপ্তবয়স্কদের এক হাজার টাকা, শিশুদের ৫০০ টাকা ভ্রমণ কর ও বন্দর কর্তৃপক্ষের টার্মিনাল চার্জ বাবদ ৫২ টাকা পরিশোধ করতে হয়। অথচ কোনো সেবা নেই। বন্দরে যাত্রীছাউনি না থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আগের নির্ধারিত ভ্রমণকর ৫০০ টাকা নির্ধারণের কথা বলেন এই যাত্রী।
ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ভ্রমণকর এক হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে। এছাড়াও ১২ বছরের নিচের যাত্রীদের জন্য ৫০০ টাকা ভ্রমণকর নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে পাঁচ বছরের নিচে এবং অন্ধ, ক্যান্সার আক্রান্ত ও পঙ্গুত্ববরণকারী যাত্রীদের ক্ষেত্রে কোনো ভ্রমণ করের প্রয়োজন হবে না বলে জানিয়েছেন চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। তবে টার্মিনাল চার্জ প্রত্যেক যাত্রীকে পরিশোধ করতে হয়। পূর্বে ৫০০ টাকা ভ্রমণকর পরিশোধ করে যাত্রীরা আসা-যাওয়া করতে পারতেন।
বেনাপোল চেকপোস্ট পুলিশ ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানান, ভারত ও বাংলাদেশগামী পাসপোর্ট যাত্রীদের সুবিধার্থে ইমিগ্রেশন পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়। কোন ধরনের অনিয়ম করা হয় না বিধায় প্রতি বছর ভারত গমনকারী পাসপোর্ট যাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউজের যুগ্ম কমিশনার মো: শাফায়েত হোসেন জানান, পদ্মা সেতু যোগাযোগব্যবস্থা সহজ করে দিয়েছে। সময় কম ও সাশ্রয়ের জন্য যাত্রীরা এখন বেনাপোল চেকপোস্ট ব্যবহার করছে বেশি। এতে সরকারের রাজস্ব আয়ও বেড়েছে। গত অর্থবছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে ভ্রমণ খাত থেকে।
যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে যাত্রীছাউনির জায়গা অধিগ্রহণের কাজ চলছে জানিয়ে বেনাপোল বন্দরের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক আব্দুল জলিল বলেন, পদ্মা সেতুর কল্যাণে গত অর্থবছর শুধু বেনাপোল বন্দর দিয়ে ২১ লাখ ২৯ হাজার ৬৯৩ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী দুই দেশে যাতায়াত করেছেন। এর মধ্যে ভারতে গেছেন ১০ লাখ ৮০ হাজার ৬৮৪ জন। আর ভারত থেকে দেশে এসেছেন ১০ লাখ ৪৯ হাজার ৮ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরের যাতায়াত করেন ৫ লাখ ৫৮ হাজার ৫৯৮ জন। ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে যাত্রী বেড়েছে ১৫ লাখ ৭১ হাজার ১০১ জন।