বর্বর এক হত্যাযজ্ঞের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ৬৭৭ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবন। অসংখ্য গৌরব, সুখস্মৃতি আর শোকের প্রতীক হয়ে বাড়িটি আজও টিকে আছে যেন বাংলাদেশের হৃদয় হয়ে।
৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রায় ১৪ বছর সপরিবারে ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক। শুধু একটি নম্বর দিয়ে এমনভাবে পরিচিত হয়ে ওঠা বাসভবন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে আর দ্বিতীয়টি ছিল না, এখনো নেই।
ষাটের দশকের শুরুতে সপরিবারে বাড়িটিতে বাস করতে শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। তখন থেকে ক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা। আর তাঁর ধানমণ্ডির এই ছিমছাম বাড়িটি হয়ে উঠেছিল স্বাধিকার তথা স্বাধীনতাকামী বাঙালির রাজনীতির কেন্দ্রস্থল। এ বাড়ির প্রতিটি বস্তুকণা যেমন মুজিব-রেণুর সংসারের জীবনের গল্পের সাক্ষী, তেমনি বাংলাদেশের জন্ম-সংগ্রামেরও স্মৃতিবাহক।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি এখন ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে পরিচিত। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর বাড়িটিকে সিল করে রাখা হয়। ১৯৮১ সালের ১২ জুন বাড়িটি বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তী সময়ে শেখ হাসিনা ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানা বাড়িটি জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার চিন্তা করেন।
সে ভাবনা থেকেই ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট একে জাদুঘরে রূপান্তর করা হয়।
বাড়িটির প্রতিটি ঘরে থাকা তখনকার আসবাব, ব্যবহার্যসামগ্রী সংরক্ষণ করা হয়েছে। বিভিন্ন আলোকচিত্র ছাড়াও রয়েছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের সফল নির্বাচন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও জরুরি সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে এই বাড়ি থেকেই। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু এখানেই প্রথম স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যা শুরু করার পর ৩২ নম্বর থেকেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করে।
বাড়িটিতে পা রাখলে শরীর ও মনে শিহরণ জাগে। বাংলাদেশ নামের মহাকাব্যের রচয়িতা ও তাঁর পরিজনদের প্রতি মমতা ও শ্রদ্ধায় নত হয় মন। ঘাতকদের প্রতি ঘৃণার জন্ম হয় দেয়ালে, মেঝেতে, বইয়ের পাতায় ও আলমারিতে বুলেটের ক্ষত দেখে। আর সেই সিঁড়ি, যেখানে পড়ে ছিলেন বঙ্গবন্ধু, এখনো যেখানে আছে তাঁর রক্তের দাগ, সেখানে দাঁড়িয়ে স্থির থাকা যায় না।