২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ১১:৩২:২৪ অপরাহ্ন
ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ: আপসের চাপ দিয়েও তদন্তের দায়িত্বে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৯-০৮-২০২৩
ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ: আপসের চাপ দিয়েও তদন্তের দায়িত্বে

শ্বশুরবাড়িতে ধর্ষণচেষ্টার মুখে পড়ে পুলিশের শরণাপন্ন হয়েছিলেন এক  গৃহবধূ (১৯)। শ্বশুরবাড়ির লোকজনের হুমকি উপেক্ষা করে থানায় অভিযোগ করেছিলেন স্বামীর দুলাভাইয়ের বিরুদ্ধে। কিন্তু সাভার মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তানিম হোসেন উল্টো ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আপস না করলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দেওয়ারও হুমকি দেওয়া হয়। এসব কথা জানিয়ে ওই গৃহবধূ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে অভিযোগটি মামলা হিসেবে নেয় সাভার থানা-পুলিশ; কিন্তু তদন্তের ভার দেওয়া হয় সেই এসআই তানিমের ওপরই।


ওই নারী ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আবেদনে বলেন, ধর্ষণচেষ্টাকারী ও তাঁর আত্মীয়েরা স্থানীয় এক প্রভাবশালী নেতার ছত্রচ্ছায়ায় থাকেন। এসআই তানিম ওই নেতাকে ‘বড় ভাই’ সম্বোধন করেন। ফলে তিনি অভিযোগ তদন্ত না করে তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেন। জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আবেদনটি আমলে নেন। অবশ্য তাঁদের দাবি, অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য কোনো অসহযোগিতা করেননি।


এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই তানিম হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ওই গৃহবধূ ও তাঁর মা মনগড়া অনেক কথা বলছেন। তিনি বলেন, ‘তাঁরা মা-মেয়ে মিলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ না করে বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন। তাঁদের বিষয়টি আমাদের সিনিয়র স্যারেরাও জানেন। আমরা মামলা নিয়েছি। এ মাসেই চার্জশিট দেব।’


জানা যায়, ভুক্তভোগী গৃহবধূ গত বছরের ১ জুলাই ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন দুই পরিবারের অজান্তে। ১৬ দিন পর পরিবারের উদ্যোগে আবার বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। প্রথমবার দেনমোহর ধরা হয়েছিল পাঁচ লাখ, দ্বিতীয়বার ধরা হয় এক লাখ টাকা। মামলার এজাহারে বলা হয়, বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। সেই সঙ্গে ননদের স্বামীর যৌন হয়রানিও চলতে থাকে। বিষয়টি স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে জানালে তাঁরা উল্টো গৃহবধূকেই  দোষারোপ করেন। পিতৃহীন দরিদ্র গৃহবধূ নিরুপায় হয়ে নির্যাতন সহ্য করতে থাকেন। গত ২৬ জুন তাঁকে বাসায় একা পেয়ে ধর্ষণচেষ্টা চালান ননদের স্বামী। কোনো রকমে বাথরুমে গিয়ে তিনি রক্ষা পান। ফোনে তাঁর স্বামীকে সব জানান। স্বামী বাসায় এসে সব গোপন রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ঘরের কথা যেন বাইরে না যায়। ননদকে জানালে তিনিও নিজের স্বামীর পক্ষ নেন। তরুণী বিষয়টি তাঁর মাকে জানালে শ্বশুরবাড়ি থেকে তাঁকে বের করে দেওয়া হয়।


ভুক্তভোগী জানান, ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ দিতে ২৬ জুন তিনি ও তাঁর মা সাভার মডেল থানায় যান। অভিযোগ তদন্তের ভার দেওয়া হয় এসআই তানিমকে। এরপর তাঁরা কয়েকবার থানায় গেলেও এসআই তানিম তদন্তে না গিয়ে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানালে ২২ দিন পর এসআই তানিম তদন্তে যান। এরপর থানায় মামলা করা হয়। সেই মামলা তদন্তের দায়িত্বও পড়ে এসআই তানিমের ওপর।


ভুক্তভোগী বলেন, ‘উনি তো আমার শ্বশুরবাড়ির লোকদের কথামতো ঘটনা চাইপা যাইতে বলছিলেন, এখন উনি মামলা তদন্ত করবেন কী?’


ভুক্তভোগীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সাভার সার্কেল) শাহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয় এসআই তানিমের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে।


কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা অসংগতি পাইনি। তাই তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’


অন্যদিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ যাঁর বিরুদ্ধে, সেই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও আট দিনের মধ্যেই জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ওই ব্যক্তি ও তাঁর পরিবার এখন তাঁকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। আতঙ্কে অনেকটা গৃহবন্দী অবস্থায় দিন কাটছে মা-মেয়ের।


ভুক্তভোগীর আইনজীবী এইচ এম রুহুল আমিন মোল্লা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভুক্তভোগী পিতৃহীন, সহায়-সম্বলহীন। সে কারণে শ্বশুরবাড়িতে তাঁকে দিনের পর দিন নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। যখন তিনি নিরুপায় হয়ে থানার দ্বারস্থ হয়েছেন, তখনও তিনি সহযোগিতার বদলে আপসের প্রস্তাব পেয়েছেন।


বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, পুলিশের দায়িত্ব হলো অভিযোগ তদন্ত করা, আইন অনুযায়ী ভুক্তভোগীকে সার্বিক সহায়তা দেওয়া। মীমাংসা করা তো পুলিশের এখতিয়ার নয়। আর যে পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আসে, তাঁকে সেই মামলা তদন্তের দায়িত্ব না দিয়ে অন্য কাউকে দেওয়া উচিত। সেটা না করে অভিযুক্ত ব্যক্তিকেই তদন্তে নিযুক্ত রাখাটাও এক ধরনের খামখেয়ালিপনা।


শেয়ার করুন