প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ জনগণের জন্য কাজ করে। আওয়ামী লীগের রাখঢাক (গোপনীয়) কিছু নেই। কোনো তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে সেই চিন্তা আমাদের নেই। আমরা যা করব সম্পূর্ণভাবে জনগণকে জানিয়ে তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেই করব।
জনগণের কল্যাণ করাটাই আওয়ামী লীগের লক্ষ্য এবং সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী গতকাল রবিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নবনির্মিত ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ভবন ও ১৩ তলাবিশিষ্ট তথ্য কমিশন ভবন উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। এদিন তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) কমপ্লেক্সেরও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
এই দেশটাকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য এবং এই মাসেই জাতির পিতাকে হারানোর বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার তৈরি করে দেওয়া ভিত্তি বা শুরু করে যাওয়া প্রতিটি কাজ সফলভাবে করতে পেরে আমি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।’
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের বারবার নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে তাঁদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন বলেই এই কাজগুলো আমরা করতে পেরেছি। বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে আজ ২০২৩ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিক গণতান্ত্রিক পদ্ধতির সরকার চলছে, দেশে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। যদিও এর মাঝে আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগ, মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ এবং অগ্নিসন্ত্রাস—এমন অনেক কিছুই মোকাবেলা করতে হয়েছে।
কিন্তু তার পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে, সেটাই আমরা চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এবং ২০৪১ সালের মধ্যে এই বাংলাদেশকে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। সেখানে আমাদের স্মার্ট জনগোষ্ঠী হবে, স্মার্ট ইকোনমি হবে, স্মার্ট সোসাইটি হবে, স্মার্ট গভর্নমেন্ট তথা প্রতিটি ক্ষেত্রই স্মার্ট হবে।’
তিনি আরো বলেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই তাঁর সরকার সব ক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনগোষ্ঠী, সমাজ ও দেশকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ আমরা এটা সফলভাবে করতে পারব।
বাংলাদেশে কোনো ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকবে না, কোনো মানুষ কষ্ট পাবে না, প্রত্যেক ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, প্রতিটি মানুষের জীবনমান উন্নত হবে।’
তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতে তাঁর সরকারের প্রচেষ্টার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তথ্য চাওয়া ও তথ্য পাওয়া মানুষের অধিকার। সেই অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি এবং এখন মানুষ কোনো তথ্য চাইলে তা পেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী তথ্য অধিকার আইন পাস ও তথ্য কমিশন গঠন, তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ এবং তাঁর সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন।
তিনি তাঁর সরকারের চালু করা সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, ‘আগে অবসর ভাতা শুধু সরকারি কর্মকর্তারাই পেত, সেটাকে আমরা এখন সর্বজনীন করে দিয়েছি। কেননা যখন তাদের (অবসরে যাওয়া বেসরকারি কর্মজীবী) কাজ করার সুযোগ থাকবে না, তখন তাদের জীবনটা যেন অর্থবহ থাকে এবং প্রত্যেক মানুষের জীবন যেন নিরাপদ হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যখনই কোনো উন্নয়নের উদ্যোগ নিই, তখনই দেখতে পাই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ভিত্তি প্রদান করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার পদচিহ্ন অনুসরণ করে বাংলাদেশ ও এর জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে পেরে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত বোধ করছেন।
অনুষ্ঠানে বিটিআরসি ভবন, তথ্য কমিশন ভবন ও বিএফডিসি কমপ্লেক্স (তেজগাঁও) সংযুক্ত ছিল। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
অনুষ্ঠানে নবনির্মিত বিটিআরসি ও তথ্য কমিশন ভবন এবং বিএফডিসি কমপ্লেক্সের ওপর একটি অডিও-ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।