সংযুক্ত আরব আমিরাতের পর এবার সৌদি আরব ও যুক্তরাজ্যের প্রবাসীদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এই দুই দেশের প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার করা হবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শে নির্বাচন কমিশন এই দুই দেশের বাংলাদেশী নাগরিকদের ভোটার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা বিচারপতিদের সমান করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এ লক্ষ্যে ‘পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার আইন-২০২৩’ এর খসড়া অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নির্বাচনের সময় মাঠপর্যায়ে যারা দায়িত্বে থাকবেন, তারা আপ্যায়ন ভাতা পাবেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে প্রস্তুতি হিসাবে সোমবার নির্বাচন ভবনে এক কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সাতটি এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সভায় জানানো হয়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয় লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরে এসব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। সভায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদসহ অন্য নির্বাচনের প্রশিক্ষণসূচি অনুমোদন হয়েছে।
বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে কমিশন সভার সিদ্ধান্তগুলো জানান ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশী প্রবাসী নাগরিকদের এনআইডি করার যে পাইলট প্রকল্প সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলছে, তার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পরবর্তীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও দুটি দেশ যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে কাজ শুরুর অনুরোধ জানিয়েছে। সেগুলোর কাজের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
সিইসি ও অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনারদের জন্য বিচারপতিদের সমান সুযোগ সুবিধা চেয়ে আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে সিইসিসহ অন্য কমিশনারদের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুধুমাত্র সিইসি আপিল বিভাগের বিচারপতিদের সমপর্যায়ের সুযোগ-সুবিধা পাবেন।
তিনি বলেন, ১৯৮৩ সালের অর্ডিন্যান্স বাংলায় রূপান্তর করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অনুমোদিত হয়েছে। ভেটিংয়ের পর সংসদে যাবে। সব আগের মতোই আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, অনুমোদিত খসড়া আইন আকারে পাশের জন্য এটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
ইসি সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রবাসী নাগরিকদের এনআইডি দেওয়ার অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। যুক্তরাজ্য ও সৌদি আরবে এটা নিয়ে কাজ শুরু হবে। প্রবাসের দুটো দেশের কাজ ভোটের আগে হবে। প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) আবেদন নিষ্পত্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা বা নীতিমালা কী হবে, সে বিষয়েও বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়।
তিনি বলেন, বিধিমালা সংশোধনের ক্ষেত্রে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত হবে। তফসিলের পর ৯ লাখ ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদসহ অন্যান্য নির্বাচনের প্রশিক্ষণসূচি অনুমোদন হয়েছে। প্রশিক্ষণ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে। তফসিলের পর মোটা দাগে হবে ৯ লাখের ওপর। আগের চেয়ে বাড়বে।
তিনি আরও বলেন, মাঠপর্যায়ে যখন যে নির্বাচন হবে, তখন যারা দায়িত্বে থাকবেন তারা আপ্যায়ন ভাতা পাবেন। অনলাইনে মনোনয়নপত্র বাধ্যতামূলক হবে না, তবে আমরা উৎসাহিত করব।
বিএনপির নিবন্ধন বাতিলের জন্য যুবলীগের করা আবেদনের বিষয়ে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নিবন্ধন বাতিল অনেকেই চাইতে পারেন। তবে, যে আইন আছে তা দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত দেবে।
সংসদ নির্বাচনে নয় লাখের বেশি ভোট কর্মকর্তা ॥ ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নয় লাখের বেশি ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হবে। তফসিল ঘোষণার পরে এসব কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদসহ অন্য নির্বাচনের প্রশিক্ষণসূচি অনুমোদন হয়েছে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তার প্যানেল প্রস্তুতের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। প্রশিক্ষণ সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে শুরু হবে।
সাত এজেন্ডা নিয়ে বৈঠক ॥ কমিশন সভায় সাতটি বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়। এগুলো হলো প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন-২০২৩, নির্বাচন পরিচালনা বিধিমালা ২০০৮ এর সংশোধন; স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন ২০১০ এর সংশোধন; জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্দেশে প্যানেল প্রস্তুতের নির্দেশিকা; নির্বাচনকালীন অতিরিক্ত সময় দায়িত্ব পালনের জন্য আপ্যায়ন বাবদ অর্থ প্রদান সংক্রান্ত গাইডলাইন এবং নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর ২০২৩-২৪ সালের প্রশিক্ষণ বর্ষপঞ্জির খসড়া চূড়ান্তকরণ ও বিবিধ।