দুই দশকের মধ্যে চলতি বছর সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এটি সর্বোচ্চ রেকর্ড।
পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত ১ লাখ ৭৫ হাজার আবেদন পড়েছে। শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হবে কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছেন এই মানুষগুলো। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। গত বছর একই সময় আবেদন পড়েছিল ১ লাখ ২২ হাজার ২১৩টি। ২০১০ সাল থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের রেকর্ড রাখা হচ্ছে। এই সংখ্যা সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে।
এদিকে একজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর আবেদনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আসতে কমপক্ষে ছয় মাস অপেক্ষা করতে হয়। সেখানে জুনের শেষ নাগাদ পর্যন্ত এমন অপেক্ষমাণ রয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৯৬১টি আবেদন। গত বছরের তুলনায় এটি ৫৭ শতাংশ বেশি।
যেখানে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক গত বছরের শেষ নাগাদ তথাকথিত আইনি জটিলতা (লিগ্যাসি ব্যাকলগ) ও দীর্ঘসূত্রতা নিরসনের লক্ষ্য ঘোষণা করেছেন। অভিবাসনপ্রত্যাশীদের বহনকারী নৌকাগুলো ব্রিটেনের সীমানায় প্রবেশের আগেই প্রতিরোধ করার প্রত্যয়ও জানিয়েছেন তিনি।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী সুনাক এই ঘোষণা দেন। এরপর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি মাসে গড়ে ২ হাজার ৬১টি আবেদনের নিষ্পত্তি করছে। এখনো ৬৭ হাজার ৮৭০টি আবেদন সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে লক্ষ্য পূরণ করতে হলে প্রতি মাসে ১১ হাজার ৩১১টি আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে।
লিগ্যাসি ব্যাকলগ বলতে সরকার গত জুনের আগে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদনগুলোকে বোঝাচ্ছে।
পরিসংখ্যানে আরও দেখা যাচ্ছে, চলতি বছরের জুনে শেষ হওয়া হিসাব বছরে ৭৮ হাজার ৭৬৮টি শরণার্থী হিসেবে আশ্রয়ের আবেদন পড়েছে। আবেদনের বিপরীতে লোকের সংখ্যা ৯৭ হাজার ৩৯০ জন। গত বছরের তুলনায় এটি ১৯ শতাংশ বেশি, আর দুই দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এর মধ্যে ব্রিটেনে আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রয়েছেন আলবানিয়ার নাগরিক। এই দেশের নাগরিকদের কাছ থেকে ১১ হাজার ৭৯০টি আবেদন পড়েছে, যাদের মধ্যে ৭ হাজার ৫৫৭ জনই এসেছেন নৌকা যোগে।
দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবস্থানে আছেন আফগানরা। আফগানদের পক্ষ থেকে আবেদন জমা পড়েছে ৯ হাজার ৯৬৪ টি। এর আগের ১২ মাসের (৫ হাজার ১৫৪ টি) তুলনায় এটি দ্বিগুণ।
এরপরই আছে যথাক্রমে—ইরানি ৭ হাজার ৭৭৬, ভারতীয় ৪ হাজার ৪০৩, বাংলাদেশি ৩ হাজার ৬২২, ইরাকি ৩ হাজার ৪৭২ এবং সিরীয় ৩ হাজার ৪২২।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ১৯ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে এসেছেন। গতকাল বুধবারও ৩৪৫ জন চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনপ্রত্যাশী বা শরণার্থী বিষয়ে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ২০২২–২৩ হিসাব বছরে ৩৯৭ কোটি পাউন্ডে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ২০২১–২২ সালে ছিল ২১২ কোটি পাউন্ড। সে হিসাবে এ বাবদ ব্যয় বছরের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়েছে। আর এক দশক আগে ২০১২–১৩ বছরে ছিল মাত্র ৫০ কোটি ২ লাখ পাউন্ড।
অবৈধ অভিবাসন আইনের আওতায় ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রমকারী ‘নৌকা প্রতিরোধ’ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। অভিবাসনপ্রত্যাশী রুয়ান্ডার মতো তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলো থেকে নৌকায় করে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঢল থামেনি। আবার সুনাকের প্রতিশ্রুতি বর্তমানে আদালতে আপিল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে।
বিভিন্ন উপলক্ষে ভিসা দেওয়া অবশ্য ব্রিটেন বন্ধ বা সীমিত করছে না। কাজ, পড়াশোনা বা পারিবারিক কারণে যুক্তরাজ্যে আসা লোকেদের জন্য বা সরকারের সেটেলমেন্ট স্কিমগুলোর একটির মাধ্যমে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ ভিসা পেয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬ লাখ ৫৭ হাজার ২০৮টি স্টাডি ভিসা এবং ৭৫ হাজার ৭১৭টি ফ্যামিলি ভিসাসহ প্রায় ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮৭টি ওয়ার্ক ভিসা মঞ্জুর করা হয়েছে। এ ছাড়া ৫ হাজার ২০১টি নির্ভরশীলদের জন্য ভিসা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়া ইউক্রেন ভিসা স্কিমগুলোর অধীনে ৯০ হাজার ২৩২টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে। ৩৭ হাজার ২২৩ জনকে হংকং থেকে ব্রিটিশ জাতীয়তা (বিদেশি) স্ট্যাটাস ধারকদের দেওয়া হয়েছে, ২৮ হাজার ৯৮৬টি দেওয়া হয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) সেটেলমেন্ট স্কিমের অধীনে এবং ৫ হাজার ১৭টি অন্যান্য সেটেলমেন্ট স্কিমের আওতায় ভিসা দেওয়া হয়েছে।
২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মোট ১৪ লাখ ৩৮ হাজার ৪৭১টি ভিসা ইস্যু করা হয়েছে, এটি গত বছরের (১১ লাখ ২৫ হাজার ১৫৫) একই সময়ের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি।