আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আওয়ামী লীগ হত্যা-খুন-গুমের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বরং আওয়ামী লীগই বারবার হত্যা-ক্যু-খুন-গুম ও ষড়যন্ত্রের অপরাজনীতির নির্মম শিকার হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। গুম ও অপহরণ নিয়ে বিএনপি নেতাদের অসত্য, মিথ্যা ও বানোয়াট বক্তব্যের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাতে এই বিবৃতি দেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি নেতারা গুম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে বানোয়াট বক্তব্য দিচ্ছেন, তা বাস্তবতাবিবর্জিত ও ভিত্তিহীন। বিদেশি বন্ধু ও প্রতিনিধিদের করুণা লাভের আশায় বিএনপি নেতারা ধারাবাহিকভাবে গুম-খুন নিয়ে মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্ব ও কোন্দলের কারণে যেসব গুম ও খুনের ঘটনা ঘটেছে, সেটার দায় তারা সরকারের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, চট্টগ্রামের বিএনপি নেতা জামাল উদ্দিন নিখোঁজ হওয়ার পর তার দায় সরকারের ওপর চাপানো হয়েছিল। কিন্তু পরে দেখা গেছে বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বেই জামাল উদ্দিন নিজ দলের নেতা–কর্মীদের দ্বারা গুমের শিকার হয়েছিলেন; যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। তিনি বলেন, একইভাবে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হওয়ার পর তার দায়ভারও সরকারের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালানো হয়। পরে দেখা যায়, তিনি ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। এমনকি বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর গুমের ঘটনায় বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, ইলিয়াস আলীকে বিএনপির লোকজনই গুম করেছে—যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ও প্রকাশিত হয়েছে।
ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, এ দেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক স্বৈরাচার জিয়াউর রহমান অসাংবিধানিক ও অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন। জিয়াউর রহমানই এ দেশে গুমের রাজনীতির সূচনা করেন। স্বৈরাচার জিয়ার শাসনামলে ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ বাবুকে রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে গুম করে হত্যা করা হয়। তাঁর লাশটাও পরিবারের সদস্যরা খুঁজে পায়নি। তিনি বলেন, চট্টগ্রামের যুবলীগ নেতা মৌলভী সৈয়দকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। জিয়াউর রহমান নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে তথাকথিত বিদ্রোহের অভিযোগে সেনা ও বিমানবাহিনীর শত শত মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও সহস্রাধিক সৈনিককে হত্যা করেছিল। এমনকি সেসব সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের অনেকেরই লাশ পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এখনো জানেন না তাঁদের কোথায় দাফন করা হয়েছে। সেসব ঘটনায় হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোর শেষ চিহ্নটুকু পাওয়ার জন্য তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আজও তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের শিকার সেসব সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের পরিবারের সদস্যরা সামরিক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের মরণোত্তর বিচারের দাবি জানিয়ে আসছেন। জিয়াউর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে খালেদা জিয়া ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’-এর নামে আওয়ামী লীগের শত শত নেতা–কর্মীকে হত্যা করেছিলেন এবং এই বেআইনি হত্যাকাণ্ডকে বৈধতা দিতে ইনডেমনিটি আইন করা হয়। তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের শাসনামলে আওয়ামী লীগের ২৪ হাজার নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছিল। এমনকি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সরাসরি তত্ত্বাবধানে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের জাতীয় নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হাওয়া ভবনের নির্দেশে নারকীয় গ্রেনেড হামলা চালিয়ে গণহত্যা সংঘটিত করেছে জঙ্গিগোষ্ঠী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সীমাহীন ত্যাগ ও সুদক্ষ নেতৃত্বে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, উন্নত-সমৃদ্ধ ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের মধ্য দিয়ে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি সুখী-সমৃদ্ধিশালী নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় আমরা বদ্ধপরিকর। যেখানে সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত ও সুসংহত হবে।