২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ০৩:২৯:৪০ পূর্বাহ্ন
জাতীয় নির্বাচনবরিশালের দুই আসনে শরিকদের ছাড় দেবে না আ.লীগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-০৯-২০২৩
জাতীয় নির্বাচনবরিশালের দুই আসনে শরিকদের ছাড় দেবে না আ.লীগ

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী দেওয়ার ক্ষেত্রে বরিশালের দুটি আসন বরাবরই শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। কিন্তু এতে এলাকার উন্নয়ন হয় না—এমন অভিযোগ তুলে এবার আসন দুটি ছাড়তে নারাজ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা।


সম্প্রতি দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে নেতাদের দেওয়া বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। তবে শরিক দলগুলোর ভাষ্য, নিজেদের যোগ্য প্রার্থীর সংকটেই এত দিন আসন ছেড়েছে আওয়ামী লীগ।


এ দুটি আসন হলো বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) ও বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ)। জেলায় মোট সংসদীয় আসন ছয়টি। সবশেষ গত জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে এ দুটি আসনের বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন নেতারা। তাঁদের মতে, শরিক দলের নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা উন্নয়ন করেননি। অন্যদিকে সরাসরি ক্ষমতায় না থাকায় দলও সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে গেছে। তাই দলের নেতা-কর্মীদের চাঙা করার স্বার্থে আগামী নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থী দেওয়া জরুরি।


সম্প্রতি জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাবুগঞ্জ উপজেলা চত্বরে আয়োজিত এক সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ও আওয়ামী লীগের উপজেলা কমিটির সদস্য আতিকুর রহমান। তিনি বলেন, সারা দেশে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের সুফল ভোগ করলেও বাবুগঞ্জ ও মুলাদীবাসী পিছিয়ে আছে। কারণ, এখানে দলের পক্ষের এমপি নেই।


গত বৃহস্পতিবার বাবুগঞ্জে যুবলীগের এক সভায়ও বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর কয়েকজন নেতা এ আসনে দলীয় প্রার্থীর দাবি তোলেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর প্রতিবারই আওয়ামী লীগ বরিশাল-৩ আসনটি শরিক দলগুলোকে ছেড়ে দিয়েছে। আসনটিতে তিনবার নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী। ২০০৮ সালে মহাজোটের কারণে আসনটি পায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। ২০১৪ সালে শরিক দল বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ঘরে যায়। ২০১৮ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি নৌকার টিকিট পেলেও এমপি নির্বাচিত হন জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। বাবুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি কাজী এমদাদুল হক দুলাল বলেন, ১৯৭৩ সাল থেকে এই আসনে আওয়ামী লীগের এমপি নেই। দলীয় নেতা-কর্মীরা অনেকটা অভিভাবকশূন্য।


আওয়ামী লীগে যখন নিজ দলীয় প্রার্থীর দাবি, তখন বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু বলছেন, তাঁর দল জাপা এবার জোট-মহাজোট যেখানেই যাক, তিনি ঠিকই প্রার্থী হবেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ কোনো দিনই দলীয় প্রার্থী পাবে না।


এদিকে বরিশাল-৬ আয়তনে জেলার সবচেয়ে বড় আসন। মহাজোটের হয়ে মনোনয়ন পেয়ে ২০০৮ সালে সংসদ সদস্য হন জাপার কো-চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হাওলাদার। সবশেষ দুই নির্বাচনে এমপি হয়েছেন রুহুল আমিনের স্ত্রী ও জাপার সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসরিন জাহান রত্না আমিন।


বাকেরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুল আলম চুন্নু বলেন, এরশাদ ও আওয়ামী লীগের শাসনামল মিলিয়ে রুহুল আমিন হাওলাদার ৩০ বছর এ আসনের এমপি। উন্নয়ন নিয়ে তাঁর ওপর মানুষের প্রচণ্ড ক্ষোভ। তাঁকে আবারও আওয়ামী লীগের সমর্থন দেওয়া হলে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এর প্রতিক্রিয়া দেখাবেন। 


ছাত্রলীগের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আমিরুজ্জামান রিপন বলেন, বাকেরগঞ্জ বারবার মহাজোটকে ছেড়ে দেওয়ায় মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। অনেক ইউনিয়নে এখনো কাঁচা সড়ক। এ জন্য ১৫ আগস্ট উপলক্ষে হওয়া কর্মসূচিতে দুর্গাপাশা, ফরিদপুরসহ প্রতিটি ইউনিয়নের নেতারা দলীয় প্রার্থীর দাবি জানিয়েছেন।


এ প্রসঙ্গে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এটা তাঁদের ন্যায্য দাবি। বাকেরগঞ্জ আওয়ামী লীগ অধ্যুষিত এলাকা। বাবুগঞ্জেও দলের অনেক যোগ্য প্রার্থী আছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।


শরিকদের মধ্যে জাপার চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের উপদেষ্টা ইকবাল হোসেন তাপস বলেন, ‘জোট ছাড়া আওয়ামী লীগ নির্বাচন করলে দেখবেন তাদের জনপ্রিয়তা কতটা। ভবিষ্যতে আবার ক্ষমতায় আসতে হলে তাদের আরও আসন ছাড়তে হবে।’


শেয়ার করুন