২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার, ১১:৩১:৫৫ অপরাহ্ন
দুর্গাপুরে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিলেন মানবিক ইউএনও সোহেল রানা
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-০৯-২০২৩
দুর্গাপুরে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিলেন মানবিক  ইউএনও সোহেল রানা

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা   ইউএনও সোহেল রানা নিজে কাঁদলেন। সহকর্মী ও উপজেলাবাসীর কাছ থেকে অশ্রুসিক্ত বিদায় নিলেন। 

সোহেল রানা ইউএনও হিসেবে দুর্গাপুরে ২০২১ সালের ১৯ আগস্ট যোগদান করেন ৩৩ তম ব্যাচের এই কর্মকতা  উপজেলায় তিনি সফলতার সাথে টানা দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন।

বুধবার  ইউএনও কার্যালয় থেকে বিদায়বেলায় দেখা গেলো হৃদয়বিদারক এক দৃশ্য। এর আগে উপজেলা পরিষদে ফুলের শুভেচ্ছায় বিদায় জানানো হয় এ কর্মকর্তাকে। এ সময় উপজেলা পরিষদে জড়ো হন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।

প্রশাসনের এ কর্মকর্তার নিয়মিত বদলী  উপলক্ষে উপজেলার অন্যান্য কর্মকর্তা এ সংবর্ধনার আয়োজন করেন। সোহেল রানা বদলী হয়ে চলে যাচ্ছেন এ খবরে উপজেলা চত্বরে বসে কাঁদছিলেন ৬০ উর্ধ  সুফিয়া বেগম। তার ভাষায় বলেন, টিয়ানু বেটা আমার জন্য অনেক খাটিছে তার বুকের সাথে মাথা দিয়ে কান্দি তাও দুঃখ যায়না। আমার পাটের সাওয়াল ও আমাক এতো ভালো বাসেনা। আমাক বাড়ি দিছে, মটর দিছে, দেখা হইলে সবসময় টেকা দেয় খোজ ল্যায়। বেটা চলে যাচ্ছে আমাক নাম্বার কিছু টাকা দিয়ে গেলো বল্লো ভালো থাইকেন খালা। তার ভিতর কোনো অহংকার নাই আমার মতো ফকির মানুষকে যে এতো ভালোবাসে তার নামে যারা বদনাম করে আল্লাহ তারেক ক্ষমা করবে না,

জামিউল উলুম কাওমি মাদ্রাসার প্রধান হুজুর জহুরুল ইসলাম  জানান, ইউএনও স্যার ছোট ইয়াতিম বাচ্চাদের প্রতি অনেক সংবেদনশীল ছিলেন। মাদ্রাসা মসজিদ উন্নয়নে তিনি ব্যপক ভূমিকা রাখেন।

 হাজি মাসুদ রানা সহ একাধিক মৎসচাষী ও ব্যবসায়ী জানান,  পূর্বে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে  বিভিন্ন চাঁদাবাজ নিয়মিত মাসোয়ারা নিতো। ইউএনও স্যার যোগদানের পড় থেকে এই সমস্যার সমাধান করেন। তাকে জানানোর কথা বললেই তার পালিয়ে যেতো। স্যারের বদলী খবর পেয়ে চিন্তায় আছি চাদাবাজরা আমাদের আবার  হুমকী দিচ্ছে। 

দুর্গাপুরের মানুষের সেবার ত্রাণকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে ইউএনও হিসেবে যোগদানের পর থেকেই দুর্গাপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরকে পরিকল্পিতভাবে গুছিয়ে আধুনিক ও মডেল উপজেলা হিসেবে গড়ে তোলার নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যান সোহেল রানা। প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদানের জন্য রাজশাহী জেলার শ্রেষ্ঠ ইউএনও নির্বাচিত হন। উপজেলা পরিষদের দুই পাসে সুন্দর্য বর্ধনের জন্য  দুই পাশে লাইটিং সহ নানা জাতের ফুলের বাগান করেন। ভূমি অফিসের সামনেও দৃষ্টিনন্দন ফুলের বাগান করেন। শহীদ মিনার সংস্কার করেন । উপজেলা চত্বরের আম গাছগুলোর গোড়া বাধাই করে দেন সেবা নিতে আসার আগত জনসাধারণের জন্য । শেখ রাসেল শিশু পার্ক সংস্কার করেন দৃষ্টিনন্দন করে তোলেন। এছাড়া ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ প্রকল্প বাস্তবায়ন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল সম্প্রদায়কে এগিয়ে নিতে পুরো গ্রামটি আশ্রয়ণ  প্রকল্প ঘর দিয়ে সাজিয়ে দেন এবং তাদের স্বাবলম্বী করতে নানান সহযোগিতা করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি সংরক্ষণের তাদের সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রমাণ্য চিত্র নির্মাণ করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কমিটি গঠন করে দেন। এছাড়া তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নিবিড় পর্যেবক্ষণে বীর নিবাস নির্মাণ করেন। শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে নানান কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মিড ডে মিল চালু করেন। সাংস্কৃতি মনা ইউএনও সোহেল রানা দুর্গাপুর শিল্পকলা একাডেমি কমিটি গঠন করেন। তিন ফসলের জমি রক্ষায় নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করতেন। সরকারি খাস পুকুরের ওপেন ডাক, বেদখলে থাকা খাস জমি ও ভিপি পুকুর সরকারের দখল নিয়ন্ত্রণ এবং  লিজ নবায়নের মাধ্যমে সরকারি রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করেছেন। সহকারী কমিশনার ভূমির অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকালে দ্রুত নাম জারি ও মিস কেস নিষ্পত্তি করে জেলা ব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেন। নিয়মিত  গণ শুনানির মাধ্যমে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ করতেন এছাড়াও বিভিন্ন অর্থিক প্রতিষ্ঠানে সার্টিফিকেট মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতেন। তিনি দুর্গাপুর উপজেলায় সামজিক সমস্যা ও বিরোধ নিরসন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের জন্য সাধারণ মানুষের মনে আজীবন জায়গা করে নিয়েছেন।

শেয়ার করুন