পাইলট প্রকল্পের আওতায় নগরীতে প্রথম ধাপে ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসানোর কাজ শুরু করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। মিটারগুলো বসানোর আগে পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হলে বুয়েট থেকে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে বলে জানিয়েছেন এই প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট পরিচালক। প্রথম ধাপে চান্দগাঁও এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় বসানোর পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। আমেরিকার যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছে তাদের লোকাল এজেন্ট পদ্মা স্মার্ট টেকনোলজি মিটার বসানোর কাজ করবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে মিটার বসানো কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক। যে এলাকায় স্মার্ট মিটারগুলো বসানো হবে ওই এলাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিলের হিসাব হবে এই ডিজিটাল মিটারে। মিটার রিডারদের কারণে গ্রাহকদের ভোগান্তি কমানোর লক্ষ্যে মিটার ব্যবস্থা ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নিয়েছে ওয়াসা। এসব মিটারে কোনো রিডার লাগবে না। হিউম্যান টাচ ছাড়াই মিটারের রিডিং অটো চলে যাবে সেন্ট্রাল সার্ভারে। এটা চালু করা গেলে পানি চুরি বন্ধ হয়ে যাবে। পানির অপচয়ও কমবে। যা বিশ্বমান অনুযায়ী হবে। এখন নগরীর ৭টি স্থানে ডিজিটাল মিটারের ট্রায়াল চালানো হয়েছে বলে ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে।
এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৗশলী মাকসুদ আলম আজাদীকে বলেন, স্মার্ট মিটারের কাজ আগামী ২ মাসের মধ্যে শুরু হবে। মিটার চলে এসেছে। পরীক্ষার জন্য বুয়েটে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে পজিটিভ রিপোর্ট আসলে কাজ শুরু হবে। তার আগে আমাদের স্টোরের কিছু কাজ আছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে প্রথমে আমরা চান্দগাঁও ও আশেপাশের এলাকায় ৩ হাজার স্মার্ট মিটার বসাবো। পাইলট প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে পরবর্তীতে ধাপে ধাপে পুরো নগরীতে সব গ্রাহকদের আমরা স্মার্ট মিটারের আওতায় নিয়ে আসবো।
জানা গেছে, যে এলাকায় স্মার্ট মিটারগুলো বাসানো হবে সেই এলাকার আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের বিলের হিসাব হবে এই ডিজিটাল মিটারে। এছাড়া, অনলাইনে বিল প্রদানের জন্য পেমেন্ট গেটওয়েও থাকবে ডিজিটাল এই সিস্টেমে। চট্টগ্রাম ওয়াসার স্মার্ট মিটার স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ও চট্টগ্রাম ওয়াসার আইসিটি সার্কেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী শফিকুল বাসার আজাদীকে বলেন, পাইলট প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার মিটার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) স্মার্ট মিটার পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হয়েছে। বুয়েটের টেস্ট রিপোর্ট এসেছে।
অনেক পরীক্ষা–নিরীক্ষার পর লোরা গেটওয়ে ভিত্তিক মিটারের কার্যকারিতায় সফলতা পেয়েছি। পাইলট প্রকল্পটির প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আমেরিকার যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ পেয়েছে তাদের লোকাল এজেন্ট পদ্মা স্মার্ট টেকনোলজি মিটার বসানোর কাজ করবে। আগামী ২ মাসের মধ্যে মিটার বসানো কাজ শুরু হবে বলে জানান এ প্রকল্প পরিচালক।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি দরপত্র আহ্বান করা হয়। অটোমেটেড মিটার রিডিং ফিচারের স্মার্ট ওয়াটার মিটার সরবরাহের পাশাপাশি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও পালন করতে হবে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে, একজন মিটার পরিদর্শক ২ হাজার থেকে আড়াই হাজার মিটারের তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে থাকেন। এটি আসলেই অনেক কঠিন ব্যাপার। আশা করছি, প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন হলে পানির অপচয় রোধ হবে। ওয়াসার রাজস্বও বাড়বে।
চট্টগ্রাম ওয়াসার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখনো বাড়ি বাড়ি গিয়ে মিটার দেখে বিল করে চট্টগ্রাম ওয়াসা। ৪২ জন মিটার পরিদর্শক দিয়ে প্রায় ৭৮ হাজার সংযোগের বিল তৈরি করতে হয়। এসব কারণে পানির ব্যবহারের সঠিক হিসাব না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। আরও অভিযোগ রয়েছে, ওয়াসার মিটার পরিদর্শকরা রিডিং কম দেখান। টাকার বিনিময়ে অবৈধ সংযোগ দেন। ওই পানিগুলোকে নন–রেভিনিউ ওয়াটার হিসেবে দেখানো হয়। ডিজিটাল মিটারের মাধ্যমে বিল হিসাব করা গেলে পানির অপচয় ও অবৈধ বিক্রি রোধ করা যাবে বলে আশা করছেন ওয়াসার কর্মকর্তারা।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সাল থেকেই অটোমেশনের দিকে যাওয়ার চিন্তা করছিল চট্টগ্রাম ওয়াসা। শুরুতে অ্যানালগ ও ডিজিটাল দুটি ডিভাইস সংযুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়। কিন্তু ক্যাবল কাটা পড়লে গোলমাল হতে পারে সে জন্য বিলিং সিস্টেম পরিচালনা করতে সম্পূর্ণ ডিজিটাল ডিভাইস খুঁজছিল কর্তৃপক্ষ। ২০২০ সালের শুরুর দিকে লোরা গেটওয়ে ভিত্তিক ৫টি স্মার্ট মিটার পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হয়। নগরীর লালখানবাজার এলাকার হাইলেভেল রোড ও বাঘঘোনায় বসানো হয় এসব পরীক্ষামূলক মিটার। এক বছরের ব্যবহারে মিটারের কার্যকারিতার সফলতা পেয়ে এই পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে চট্টগ্রাম ওয়াসা।