প্রকল্পের জন্য একাধিক সরকারি গাড়ি বরাদ্দ আছে। তারপরও নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করছেন ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের’ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এস এম আশিকুর রহমান। আর সেই গাড়িভাড়া ও জ্বালানি বাবদ প্রকল্প থেকে উত্তোলন করছেন প্রতি মাসে দেড় লক্ষাধিক টাকা।
এ ছাড়া প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ নিজের লোকদের দেওয়াসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে মৎস্য অধিদপ্তর। এ বিষয়ে ৩ সেপ্টেম্বর মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (অর্থ ও পরিকল্পনা) মো. সাহেদ আলী বরাবর একটি চিঠি পাঠিয়েছেন অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ।
এতে বলা হয়, প্রকল্প পরিচালক এস এম আশিকুর রহমান একটি গাড়ি ভাড়া করে প্রকল্পের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-১২-১৪১৬। ওই গাড়ির বিপরীতে জ্বালানিসহ অন্যান্য আনুতোষিক ব্যয়ের জন্য সরকারি কোষাগার থেকেই অর্থ উত্তোলন করছেন তিনি। গাড়িটি এস এম আশিকুর রহমানের ব্যক্তিগত গাড়ি উল্লেখ করে চিঠিতে আরও জানানো হয়, এই গাড়ির জন্য তিনি নিয়মিত ভাড়া গ্রহণ করছেন, যা সরকারি বিধিবিধানের পরিপন্থী এবং দুর্নীতি ও অসদাচরণের শামিল।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্প পরিচালক নিজের ব্যক্তিগত গাড়িটি অন্য প্রতিষ্ঠানের নামে ভাড়া দেখিয়ে প্রকল্প থেকে প্রতি মাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়া এবং জ্বালানি বাবদ প্রতি মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা উত্তোলন করছেন।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রকল্প পরিচালক এস এম আশিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গাড়িটি সাময়িক ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র ৫ মাস। ভাড়ার পরিমাণ যে খুব বেশি, তা-ও কিন্তু না। চাকরিবিধি লঙ্ঘন হয়েছে, এটা সত্যি। তার জন্য আমি কর্তৃপক্ষের কাছে ভুল স্বীকার করেছি।’
এদিকে আশিকুর রহমানের বিরুদ্ধে জমা পড়া লিখিত আরেক অভিযোগে জানা যায়, বিসিএস ২৪তম ব্যাচের এই কর্মকর্তা যশোর অঞ্চলে ভবদহ এলাকায় মৎস্য চাষ উন্নয়ন প্রকল্পে কর্মরত থাকাকালে একই ধরনের কার্যক্রমের জন্য বিতর্কিত ছিলেন।
মাগুরা জেলায় মৎস্য কর্মকর্তা থাকাকালেও অনিয়মে জড়িয়ে পড়েন তিনি। এই প্রকল্পের শুরুতে প্রকল্প দপ্তরের লোক নিয়োগে অনিয়ম করেন। প্রকল্প দপ্তরের সব কাজ তাঁর পছন্দের এবং এলাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে করান।
স্থায়ীভাবে অভয়াশ্রম তৈরির জন্য জলাশয় খননসহ অন্যান্য খননকাজে স্থানীয়দের যুক্ত না করে নিজের এলাকার লোক ও আত্মীয়স্বজনকে দিয়ে করিয়ে নিচ্ছেন। প্রকল্পের শুরু থেকে প্রকল্প দপ্তরের সব কোটেশন ছাড়াও জেলেদের জন্য জাল ক্রয় ও ছাগল ক্রয় তাঁর পছন্দের ঠিকাদারদের দিয়ে করিয়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে অভয়াশ্রম মেরামতের ঠিকাদার অধিকাংশ জায়গায় কাজ না করেই প্রকল্প দপ্তর থেকে বিল উত্তোলন করেছেন।
জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক বলেন, প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।