দেশে সাধারণত ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হয় জুনে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে প্রকোপ। কিন্তু গত বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব ছিল অক্টোবর পর্যন্ত। এ বছর ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে গত জানুয়ারি থেকেই। সেপ্টেম্বরের প্রায় মাঝামাঝি এসেও সংক্রমণ কমার লক্ষণ নেই। বরং তা আরও বাড়ছে। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। অর্থাৎ ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার প্রজনন এখনো চলছে। ফলে এ বছর ডেঙ্গুর মৌসুম আরও দীর্ঘ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের এই আশঙ্কাকে সমর্থন করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেঙ্গুর মৌসুম জরিপের ফলাফল। জরিপের সময় রাজধানীর দুই সিটিতেই জলমগ্ন মেঝে, প্লাস্টিকের বালতি ও ড্রামে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। পাইপ, গাছের পাতা, ভাঙা চেয়ার, প্লাস্টিকের মগ-বদনা, ফুলের টব ও টবের ট্রে, মিটারের গর্ত, গেটের চ্যানেলে জমা পানিতেও এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকার দুই সিটির মধ্যে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তুলনায় উত্তর সিটি করপোরেশনে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে বেশি। উত্তর সিটিতে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জরিপের তথ্যমতে, উত্তর সিটির ২৩ দশমিক ৫২ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটির ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ বাড়িতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। উত্তর সিটির ৭৫ শতাংশ এলাকায় এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি। এমন কোনো ওয়ার্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি, যেখানে এডিস মশার লার্ভা নেই। উত্তর সিটিতে এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬০ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে। লার্ভার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ৬ নম্বর ওয়ার্ডে।
এদিকে দক্ষিণ সিটিতে এডিস মশার লার্ভার গড় ঘনত্ব (ব্রুটো ইনডেক্স) ২৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। লার্ভার সর্বোচ্চ ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে—৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। ২০ নম্বর ওয়ার্ডে এই হার ৭০ শতাংশ। উত্তর সিটির মতো এখানেও লার্ভা নেই, এমন কোনো ওয়ার্ড পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, মৌসুম জরিপের কাজ শেষের দিকে। উত্তর সিটির কয়েকটি তথ্য হতাশাজনক। দেশে ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যেও উল্লেখযোগ্য সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। অবস্থার উন্নতি করতে হলে পাড়া-মহল্লায় এডিস নির্মূল কমিটি করতে হবে।
ডেঙ্গু রোগী দেড় লাখ ছাড়াল
দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বছর এ রোগে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৭৪১ জন হলো। এই সময়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২ হাজার ৯৪৪ জন ডেঙ্গু রোগী। এ নিয়ে এ বছর হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ৫১ হাজার ২৭২ জন হলো। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম গতকাল এসব তথ্য জানিয়েছে।