০২ মে ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৯:১৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশে হতাশা-উদ্বেগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০৯-২০২৩
সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশে হতাশা-উদ্বেগ

জাতীয় সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ পাশ হওয়ায় হতাশা ও উদ্বেগ জানিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ (টিআইবি)।

এ ছাড়া বিএনপিসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বৃহস্পতিবার পৃথক বিবৃবিতে উদ্বেগের কথা জানানো হয়। মার্কিন দূতাবাস থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, এই আইনের মাধ্যমে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।

টিআইবি বলেছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের নামে নতুন মোড়কে একই ধরনের সাইবার নিরাপত্তা আইন পাশ করা হয়েছে। নতুন এই আইনেও মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত, বাক্-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা করা হয়েছে। এ ছাড়াও উদ্বেগ ও নিন্দা জানিয়েছে-বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) একাংশ, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট এবং প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। 

মার্কিন দূতাবাস : বিরোধী দলের সংসদ-সদস্যদের তীব্র আপত্তির মুখে বুধবার জাতীয় সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা বিল’ পাশ হয়। এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, নতুন আইনটির আন্তর্জাতিক মানদণ্ড নিশ্চিতে বাংলাদেশ সরকার অংশীজনদের এটি পর্যালোচনা এবং তাদের মতামত অন্তর্ভুক্ত করার পর্যাপ্ত সুযোগ দেয়নি।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো এই আইনেও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অপরাধ হিসাবে গণ্য করা হয়েছে, জামিন অযোগ্য ধারা বহাল রাখা হয়েছে এবং সমালোচকদের প্রেফতার, আটক ও কণ্ঠরোধ করতে খুব সহজেই এর অপব্যবহার হতে পারে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা হয়। 

টিআইবি : টিআইবি বলেছে নতুন এই আইনে মুক্তচিন্তা, ভিন্নমত, বাক্-স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার মতো সাংবিধানিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে। আইনে যে বিষয়গুলোর অন্তর্ভুক্তি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল, সেই সাইবার অবকাঠামো, ইন্টারনেট ও সংশ্লিষ্ট সব ডিজিটাল প্ল্যাটফরমের নিরাপত্তা-সংক্রান্ত অনেক বিষয়কেই উপেক্ষা করা হয়েছে। মানুষের প্রত্যাশার বিপরীতে আইনটি মত, চিন্তা, বিবেক, বাক্ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণের আরেকটি হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে। 

বিএনপি : সাইবার সিকিউরিটি আইন চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাবিরোধী বলে মনে করছে বিএনপি। একই সঙ্গে ‘কালো আইন’ আখ্যা দিয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে দলটি। এক বিবৃতিতে এ কথা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ আইন একটি নিকৃষ্ট কালো আইন হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, ‘পূর্বের ডিজিটাল অ্যাক্টের চেয়েও সাইবার আইনে জরিমানার পরিমাণ বাড়ানো হয়েছে। বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার ও তল্লাশি এই আইনকে বিরুদ্ধ মত দমনে এক বিপজ্জনক অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করা হবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিতর্কিত ধারাগুলো সাইবার নিরাপত্তা বিলে প্রায় সব একইভাবে রাখা হয়েছে। এটি নতুন বোতলে পুরাতন মদ।
 
ওয়ার্কার্স পার্টি : বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, পুরোনো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে কিছুটা ঝাড়-পোছ করে সংসদে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’ নামে পাশ করা হয়েছে। বিষয়টি গভীর হতাশাজনক। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতোই এই আইনের অপব্যবহার ও অপপ্রয়োগের সুযোগ অবারিত রাখা হয়েছে। 

জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট : জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বলেছে, আপাতত বিরোধী দলমত দমনের প্রশ্নটি সামনে থাকলেও চূড়ান্ত অর্থে আগামী দিনে জাতীয় গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম বাধা দিতে বা ঠেকাতে, দমন-পীড়নে এ আইন প্রয়োগ হবে। 

বিএফইউজে (একাংশ) : বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আব্দুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, এক বিবৃতি বলেছেন, অংশীজনের মতামত প্রস্তাবনা উপেক্ষা করে আইনটি পাশ উদ্বেগজনক। এর ফলে প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক ও অনলাইন গণমাধ্যমকে কেবল নিষেধাজ্ঞার খড়গের নিচেই থাকতে হবে না, পাশাপাশি সাধারণ মানুষও নানাভাবে হয়রানি ও জুলুমের শিকার হবে।
 
প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন : প্রতিবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন নামে বেশ কিছু সংগঠন আইনটি পাশের নিন্দা জানিয়েছে। এসব সংগঠনের মধ্যে রয়েছে-বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, গণসংস্কৃতি কেন্দ্র, সংহতি সংস্কৃতি সংসদ, সমাজ অনুশীলন কেন্দ্র, বাংলাদেশ গণশিল্পী সংস্থা, সাংস্কৃতিক ইউনিয়ন, রাজু বিতর্ক অঙ্গন, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, ভাগ্যকুল পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, সমগীত সংস্কৃতি প্রাঙ্গণ, প্রগতি লেখক সংঘ, গণসংস্কৃতি পরিষদ, স্বদেশ চিন্তা সঙ্ঘ, বাংলাদেশ থিয়েটার, তীরন্দাজ, রণেশ দাশগুপ্ত চলচ্চিত্র সংসদ, এই বাংলায়, ঢাকা ড্রামা, বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ, বিবর্তন নাট্যগোষ্ঠী-সিরাজগঞ্জ, বাংলাদেশ মূকাভিনয় ফেডারেশন, ধাবমান সাহিত্য আন্দোলন, থিয়েটার ’৫২, সমাজতান্ত্রিক বুদ্ধিজীবী সংঘ, মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পরিষদ, শহিদ আসাদ পরিষদ, মাদল, বটতলা-এ পারফরম্যান্স স্পেস, সমাজ চিন্তা ফোরাম ও চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।

শেয়ার করুন