২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১০:৩৮:১৬ পূর্বাহ্ন
‘হালাল’ দুর্নীতির আয়োজন
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
‘হালাল’ দুর্নীতির আয়োজন

অসৎ উদ্দেশ্যে ১৩৯টি দলিল সম্পাদন করে চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে ৩৫৯ কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন হয়েছিল। তবে জেলা প্রশাসনের কারণে তখন সেই প্রচেষ্টা ভেস্তে গিয়েছিল। এবার নতুন করে ‘হালাল’ উপায়ে ওই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ায় বিপুল পরিমাণ অর্থ লুটপাটের আয়োজন চলছে।


জানা গেছে, অসৎ উদ্দেশ্যে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে সম্পাদিত দলিল মূল্য বিবেচনায় নিয়ে ওই প্রকল্প এলাকার জমির মৌজা মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে কোনো কোনো শ্রেণির জমির মৌজা মূল্য প্রায় ১২ গুণ বেড়ে গেছে। এবার বর্তমান মৌজা মূল্যের ভিত্তিতে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত জমির ব্যয় নতুন করে প্রাক্কলন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২১ আগস্ট শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে বিশ্ববিদ্যালয়টির ‘ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ’ শীর্ষক প্রকল্পের যাচাই কমিটির সভা থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নতুন করে নির্ধারিত মৌজা মূল্য ওই এলাকায় জমির প্রকৃত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি। সরকারি বিধান অনুযায়ী, এর তিন গুণ দামে জমি অধিগ্রহণ করা হলে সরকারকে অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হবে। এভাবে অস্বাভাবিক দামে সরকারকে জমি গছিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়াকে অনেকেই ‘হালাল উপায়ে দুর্নীতির আয়োজন’ বলে অভিহিত করছেন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া আইন মন্ত্রিসভা থেকে চূড়ান্তভাবে অনুমোদন পায় ২০১৯ সালের ২৩ ডিসেম্বর। জাতীয় সংসদে এই বিশ্ববিদ্যালয় বিল পাস হয় ২০২০ সালের ৯ সেপ্টেম্বর। আর ১৩৯টি উচ্চমূল্যের জমির দলিল হয় ২০২০ সালের মে থেকে ২০২১ সালের মে পর্যন্ত। বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের খবর জানার পর একটি সিন্ডিকেট জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে লুটপাটের আয়োজন করে। সরকারের কাছ থেকে দলিল মূল্যের তিন গুণ বেশি দর আদায়ের জন্য উচ্চমূল্যের এসব দলিল সম্পাদন করা হয়। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সেলিম খানের নেতৃত্বে চার-পাঁচজনের একটি সিন্ডিকেট এই প্রক্রিয়ায় জড়িত।


বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য নির্বাচিত সাড়ে ৬২ একর জায়গার মোট ১৮২টি দলিলের মধ্যে ১৩৯টিই ছিল অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যের। বাস্তবে বাজারদর এবং আদালতে সেলিম খানের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব জমি ২৩ থেকে ২৪ হাজার টাকা শতাংশ দর হলেও দলিলগুলো সম্পাদন করা হয় গড়ে ২০ গুণ বেশি দরে। এক লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা শতাংশ দরে উচ্চমূল্যে এসব দলিল সম্পাদন দেখানো হয়।


এই ১৩৯টি দলিল বিবেচনায় নিয়ে হিসাব করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি অধিগ্রহণ ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ৫৫৩ কোটি টাকা। আর এগুলো বিবেচনায় না নিয়ে প্রকৃত বাজার মূল্যের ভিত্তিতে ব্যয় হওয়ার কথা ১৯৩ কোটি টাকা। পরে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন উচ্চমূল্যে সম্পাদিত দলিলগুলো বাদ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের প্রাক্কলন নির্ধারণ করেন।


বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিকে জমি অধিগ্রহণের জন্য ১৯৩ কোটি টাকা জমা দিতে চিঠি দেন জেলা প্রশাসক। পরে ওইসব দলিল বিবেচনায় নিতে এবং দলিলগুলো বাদ দিয়ে প্রাক্কলন অনুয়ায়ী জমি অধিগ্রহণে ১৯৩ কোটি টাকা জমা দিতে বিশ্ববিদ্যালয়টির ভিসিকে জেলা প্রশাসকের দেওয়া চিঠির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট রিট করেন সেলিম খানসহ তিনজন। হাইকোর্ট সব রিট খারিজ করে দেন। উল্টো রিটকারীদের জরিমানা করে আদেশ দেন উচ্চ আদালত। ফলে সেই লুটপাটের আয়োজন এক প্রকার ভেস্তে যায়।


হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়, জমি অধিগ্রহণের জন্য প্রস্তাবিত এলাকার মধ্যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অস্বাভাবিক মূল্যে ১৩৯টি দলিল সম্পাদিত হয়। এ কারণে এসব দলিল বিবেচনায় নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাইকোর্ট রিটকারীদের আবেদন খারিজ করে রায় দেন গত বছরের ৯ জুন।


এরপর গত বছরের ৬ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর মৌজার জমির মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়। আর এক্ষেত্রে ‘অসৎ উদ্দেশ্যে সম্পাদিত দলিলগুলোর’ মূল্যকে মূল বিবেচনায় নেওয়া হয়। এ কারণে ওই এলাকার সব রকম জমির সরকার নির্ধারিত মূল্য এক লাফে কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।


পুনর্নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী, ১১৫ নম্বর লক্ষ্মীপুর মৌজার নাল শ্রেণির জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি শতাংশ ১ লাখ ৬২ হাজার ৬৫ টাকা। অথচ ২০২১ সালে এই শ্রেণির জমির মূল্য ছিল মাত্র ১৩ হাজার ৮০২ টাকা। একইভাবে বাগান/বাড়ি শ্রেণির মৌজা মূল্য ২৩ হাজার ৯৬৬ থেকে বাড়িয়ে করা হয়েছে ১ লাখ ৭২ হাজার ৮৮১ টাকা। ভিটি শ্রেণির মৌজা মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬৭ টাকা, আগে ছিল ৩৩ হাজার ২৯৪ টাকা। পুনর্নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডোবা/পুকুর শ্রেণির মৌজা মূল্য ২ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯৯ টাকা, আগে ছিল ৩৮ হাজার ৯৫৬ টাকা।


বিশ্লেষণে দেখা যায়, মৌজা মূল্য পুনর্নির্ধারণের ফলে নাল শ্রেণির মৌজা মূল্য গড়ে বেড়েছে ১১ দশমিক ৭৪ গুণ। বাড়ি/বাগান শ্রেণির মৌজা মূল্য গড়ে বেড়েছে ৭ দশমিক ২১ গুণ। চাষি/ভিটি শ্রেণির মৌজা মূল্য গড়ে বেড়েছে ৪ দশমিক ৩২ গুণ। ডোবা/পুকুর শ্রেণির মৌজা মূল্য গড়ে বেড়েছে ৬ দশমিক ৮৫ গুণ। লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মৌজা মূল্য গড়ে বেড়েছে সাড়ে ৭ গুণ।


বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পুনর্নির্ধারিত হওয়ার পরও লক্ষ্মীপুরের আশপাশের মৌজার জমির মূল্য এখনো অনেক কম। উত্তর বালিয়ায় ২৪ হাজার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার টাকা। চাপিলা মৌজায় মূল্য ৪০ হাজার থেকে বেড়ে হয়েছে ৪২ হাজার টাকা। ব্রাহ্মণসুখায়া মৌজায় রেট ৩৭ হাজার থেকে বেড়ে ৪৩ হাজার টাকা হয়েছে।


লক্ষ্মীপুর মৌজায় অস্বাভাবিক অতিরিক্ত রেটের কারণে সেখানকার সাধারণ জনগণ পড়ছেন বিপাকে। ৬২ দশমিক ৫৪৯ একর জমি ছাড়াও অন্য জমিগুলো কেনাবেচা করতে পারছেন না তারা। কেনাবেচা করতে গেলেই এখন অনেক বেশি টাকার রাজস্ব জমা দিতে হচ্ছে, যা সবার কাছেই অস্বাভাবিক। খোদ সাব-রেজিস্ট্রারও বলছেন, অতিরিক্ত মৌজা রেটের কারণে আগের তুলনায় ওই মৌজায় দলিল সম্পাদনের হার অনেক কমে গেছে।


জানতে চাওয়া হলে চাঁদপুর সদর উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার মাহমুদুল হক বলেন, ‘আগের দুই বছরের ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দলিলের মূল্য বিবেচনা করে সর্বশেষ গত বছর লক্ষ্মীপুর মৌজার জমির মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি দুই বছরের জন্য এই মৌজা মূল্য নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।’


এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দলিলগুলোর অস্বাভাবিক মূল্য বাদ দেওয়ার ব্যাপারে কোর্ট থেকে কোনো আদেশ নেই। তবে অস্বাভাবিক মূল্যে কোনো দলিল সম্পাদন করা হলে সেক্ষেত্রে মৌজা মূল্য যদি অস্বাভাবিক কমে বা বাড়ে, তার ভিত্তিতে কেউ কোনো অভিযোগ দেন, তাহলে কমিটি বসে তা পুনর্মূল্যায়ন করে কর্তৃপক্ষকে (মন্ত্রণালয়কে) জানাতে পারে। তবে এমনিতে কোনো দলিল বাদ দেওয়ার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট বিধিতে আমাদের দেওয়া হয়নি। সে কারণে বিগত দুই বছরে ক্রয়-বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত দালিলগুলোর মূল্য ও পরিমাণ যোগ করে তার ভিত্তিতে মৌজা মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে।’


এদিকে নতুন মৌজা মূল্য অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণের ব্যয় প্রাক্কলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গত ২১ আগস্ট ‘চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ, উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক কাজ’ শীর্ষক প্রকল্পের যাচাই কমিটির সভা হয়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষের ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। মন্ত্রণালয়ের এ বৈঠকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ছয় কর্মকর্তা ও মন্ত্রীর একান্ত সচিব উপস্থিত ছিলেন।


প্রকল্পটির অতীত ইতিহাস তুলে সভায় অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আব্দুল মতিন বলেন, প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ৬২ দশমিক ৫৪৯ একর জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১৯৩ দশমিক ৯১ কোটি ঢাকার সংস্থান রাখা হয়েছে, যা ২০২১ সালের তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রণীত। তাই প্রস্তাবিত অর্থে জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হবে কি না, তা পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।


বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকার জমির মৌজা মূল্য পরিবর্তিত হয়েছে। প্রস্তাবিত অর্থে জমি অধিগ্রহণ সম্ভব হবে না। তাই তিনি বর্তমান মৌজা মূল্য এর আলোকে জমি অধিগ্রহণ খাতের ব্যয় প্রাক্কলন করা দরকার উল্লেখ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উপাচার্যকে অনুরোধ জানান।


সভায় বিস্তারিত আলোচনা শেষে পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্তের মধ্যে রয়েছে-চাঁদপুর জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে বর্তমান মৌজা মূল্যের ভিত্তিতে প্রকল্পের আওতায় প্রস্তাবিত জমির ব্যয় সংগ্রহ করে ডিপিপিতে নতুন প্রাক্কলন প্রস্তাব করতে হবে; প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসি কর্তৃক ন্যূনতম জমির চাহিদা-সংক্রান্ত প্রত্যয়ন ডিপিপিতে সংযুক্ত করতে হবে; পূর্ণকালীন প্রকল্প পরিচালকসহ প্রকল্প বাস্তবায়নকালীন প্রয়োজনীয় অন্যান্য জনবলের সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে জনবল নির্ধারণী প্রস্তাব অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।


ওই বৈঠকের কার্যপত্র (রেজ্যুলেশন) গত ৩০ আগস্ট বিভিন্ন দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। এরপর সে অনুযায়ী মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম চলছে। এসব সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে পুরোনো সেই দলিল সিন্ডিকেট বিপুল পরিমাণ মুনাফা করার সুযোগ পাবে। আর বাড়তি ক্ষতিপূরণ গুণতে হবে সরকারকে।


জানতে চাওয়া হলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পরিকল্পনা) মো. আব্দুল মতিন বলেন, ‘মৌজা মূল্য আমাদের ইস্যু না। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আগে প্রস্তাবিত জমির মূল্য নির্ধারিত হয় ২০২১ সালে। সে মূল্য অনুযায়ী এখন আমরা জমি কিনতে পারব না। বর্তমান মূল্য ধরেই আমাদের কিনতে হবে। সেজন্য জেলা প্রশাসনকে বলেছি, বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী নতুন করে প্রাক্কলন করে দিতে। জেলা প্রশাসন যে মূল্য পাঠাবে, তা আমরা ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত করব।’


অস্বাভাবিক মৌজা মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের দেখার বিষয় নয়। এটি জেলা পর্যায়ে যারা করেছে, তারা দেখবে।’


তবে নতুন করে প্রাক্কলন কার্যক্রম শুরু হয়েছে কি না, সে ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা প্রশাসন থেকে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।


চাঁদপুর জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা ও এলএ শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আখতার জাহান সাথীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে নতুন এসেছি। এ বিষয়ে আমি ভালো বলতে পারব না।’


অস্বাভাবিক মূল্যে জমির দলিল সম্পাদনের ওই মামলায় হাইকোর্টে সরকারের পক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) কাজী মাইনুল হাসান। তিনি বলেন, ‘নতুন করে জমি অধিগ্রহণ কেস শুরু হয়েছে কি না, জানি না। কোন প্রক্রিয়ায় অধিগ্রহণ করছে, তাও জানি না। তবে যে ১৩৯টি দলিলের ভিত্তিতে আগে লুটপাটের আয়োজন করা হয়েছিল; হাইকোর্ট সেই দলিলগুলো অসৎ উদ্দেশ্যে সৃজন করা হয়েছে মর্মে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। এসব দলিলের ভিত্তিতে মৌজা মূল্য পুনর্নির্ধারণের কোনো সুযোগ নেই। এর ভিত্তিতে ব্যয় প্রাক্কলন করারও সুযোগ নেই। এটি কেউ করে থাকলে তা সঠিক হবে না। এটি করলে সরকার ও রাষ্ট্র আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’


ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. মো. ইফতেখারুজ্জামান এ ব্যাপারে বলেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরু থেকেই যা ঘটেছে তা প্রমাণ করে, যারা দুর্নীতি-অনিয়মে জড়িত, তারা এগুলো নিয়ন্ত্রণে যে রাষ্ট্রীয় ও আইনি কাঠামো রয়েছে, তার চেয়ে বেশি শক্তিশালী। এই সিন্ডিকেটের যারা মূলহোতা, পেছনে থেকে কলকাঠি নাড়ছেন, তারা অনেক স্মার্ট এবং কৌশলী। তারা দুর্নীতির অভিনব উপায় তৈরি করছে। যেসব দলিল অসৎ উদ্দেশ্যে অস্বাভাবিক উচ্চমূল্যে করায় হাইকোর্ট আমলে না নেওয়ার জন্য বলেছেন, সেগুলোর ভিত্তিতে এখন মৌজার মূল্য পুনর্নির্ধারণ করে সরকারের অতিরিক্ত টাকা পকেটে ঢোকানোর কৌশল তারই দৃষ্টান্ত। প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের ঘোষণা বাস্তবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে এ দুর্নীতিবাজদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।


দুদকের আইন ও প্রসিকিউশন শাখার সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) এবং সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মো. মঈদুল ইসলাম এ ব্যাপারে বলেন, যেখানে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যের কারণে দলিলগুলো বিবেচনায় না নেওয়ার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের পর্যবেক্ষণ রয়েছে, সেখানে সেসব দলিলের ভিত্তিতে মৌজা মূল্য নির্ধারণ ঠিক হয়নি। এক্ষেত্রে কৌশলে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণকে পাশ কাটানো হয়েছে। অসৎ উদ্দেশ্যে করা দলিলের ভিত্তিতে মৌজা মূল্য পুনর্নির্ধারণ করাটাই অস্বাভাবিক। ফের একটি শ্রেণি দুর্নীতির মাধ্যমে পকেট ভারী করার আয়োজন করেছে। কিন্তু এগুলো যারা করছে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ফলে অপরাধীরা ঘুরেফিরে অপরাধ করেই যাচ্ছে।

শেয়ার করুন