গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পদক্ষেপ শুরু করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপকে ‘খুবই ভালো’ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
তিনি বলেছেন, ‘আমি তো মনে করি এটা খুব ভালো। যারা নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের বিরুদ্ধে তারা (যুক্তরাষ্ট্র) এই নীতি গ্রহণ করবে। আমরা সব সময় বলেছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘে তার বক্তব্যে বলেছেন, ফ্রি-ফেয়ার ইলেকশন তারা চায়, আমরাও চাই। যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন হবে।’
শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে একটি সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান এ কথা বলেন।
‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন আরবান অ্যান্ড রিজিওনাল প্ল্যানিং’ শীর্ষক সম্মেলনটির আয়োজন করে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)।
গত মে মাসে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার জন্য দায়ী ক্ষমতাসীন দল, বিরোধী দল, সরকারি কর্মকর্তা, বিচার বিভাগ, আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ভিসা নীতি ঘোষণা করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। গত শুক্রবার পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে বিবৃতিতে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকরের পদক্ষেপ শুরু করেছে। এর আওতায় পড়া ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র তালিকা প্রকাশ করেনি।
এ প্রসঙ্গে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘তারা (আমেরিকা) শুধু বাধার কথা তো বলেনি। তারা ভায়োলেন্সের কথা বলছে। এটা আমরা মনে করি খুবই ভালো। কারণ আপনারা জানেন, একটা প্রধানতম বিরোধী দল পাবলিকলি বলছে যে, আমরা নির্বাচন হতে দেব না। গতকালও (শুক্রবার) বলেছে যে, শেখ হাসিনার অধীনে আমরা নির্বাচন হতে দেব না। যখন হতে দেবে না, কীভাবে হতে দেবে না? একটাই পথ আছে, তারা ভায়োলেন্স করে বাধা দেবে। যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধেই তারা (আমেরিকা) ব্যবস্থা নেবে, এটা খুব ভালো। ডোনাল্ড লু গতকাল বলেছেন যে, এটা (ভিসা নীতি) সরকার, বিরোধী দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধেও আছে। অর্থাৎ যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে।’
ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের কারণে রপ্তানি বাণিজ্যে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে মনে করেন সালমান এফ রহমান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটার কোনো প্রভাব পড়বে না। এটার সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নাই। আমেরিকা যে আমাদের সবচেয়ে বড় বাজার, সেই বাজারটা কিন্তু প্রতিযোগিতা করে আমরা দখল করেছি।’
বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ করপোরেট প্রতিষ্ঠানের এই মালিক বলেন, ‘আমেরিকা কিন্তু সেই বাজারে ইউরোপের মতো কোনো স্পেশাল অ্যাকসেস দেয় নাই। সাড়ে ১৫ শতাংশ ডিউটি (শুল্ক) দিয়ে সেই বাজারে যাই। যে কেউ সাড়ে ১৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে আমেরিকান বাজারে ঢুকতে পারে। আমাদের ব্যবসায়ীদের, গার্মেন্টস কোম্পানি যারা আছে, তাদের শ্রমিক যারা আছে, তাদের ক্রেডিট এটা। আমরা সারা পৃথিবীর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে, সাড়ে ১৫ শতাংশ ডিউটি দিয়ে সেই বাজারে জায়গা দখল করতে পেরেছি। আমেরিকা তো আমার জন্য স্পেশাল কিছু করে দেয় নাই। ওখানে বাণিজ্যে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
এদিকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তারা যদি পর্যবেক্ষক না পাঠায়, তাহলে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘মোটেও না। নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে—আপনাদের এমন বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত নই। পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না, সেটা তো তাদের ব্যাপার। আমার ইলেকশন আমি সংবিধান অনুযায়ী করব।’
সকাল ১০টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ের বলরুমে তিন দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সালমান এফ রহমান। সম্মেলনটি শেষ হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন জাতিসংঘের হিউম্যান সেটেলমেন্ট প্রোগ্রামের নির্বাহী পরিচালক মাইমুনাহ মোহা. শরীফ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াসিউদ্দিন, ঢাকায় নিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত অচিম ট্রস্টার।
সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইপির সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনে আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহাম্মদ মেহেদী হাসান। এতে সভাপতিত্ব করেন বিআইপির সভাপতি পরিকল্পনাবিদ মোহাম্মদ ফজলে রেজা সুমন।