সরকারের পদত্যাগের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম বিভাগে রোডমার্চ করবে বিএনপি। এই কর্মসূচি সফল করতে নেওয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এতে কয়েক লাখ মানুষ অংশ নেবে বলে আশা করছেন বিএনপি নেতারা।
মীরসরাইয়ে শুক্রবার আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার ঘটনায় রোডমার্চ ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তাপ। রোডমার্চের প্রস্তুতি সভা চলাকালে ওই সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনা নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করলেও মীরসরাইয়ে রোডমার্চের পথসভা করার সিদ্ধান্তে অটল বিএনপি।
এদিকে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রোডমার্চ ঘিরে আওয়ামী লীগ ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা করছে, এমন অভিযোগ করেছেন আয়োজনের দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
তারা জানান, যত অপচেষ্টাই করা হোক না কেন, রোডমার্চ হবে। এতে বাধা এলে প্রতিরোধের হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা। এই রোডমার্চ ও পথসভার জন্য পুলিশের কোনো অনুমতি নেওয়া হবে না বলেও বিএনপির পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, কুমিল্লা থেকে রওনা হবে রোডমার্চ। এরপর ফেনী হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায় দেড়শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে শেষ হবে চট্টগ্রামে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মোট চারটি জনসভা হবে। সকাল ১০টায় প্রথম সভাটি হবে কুমিল্লায়। এই সভা শেষে রোডমার্চ রওনা হবে ফেনীর পথে। ফেনীর মহিপালে হবে দ্বিতীয় জনসভা। তৃতীয়টি হবে চট্টগ্রামের মীরসরাই উপজেলা সদরে। চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড়ে চতুর্থ জনসভার মাধ্যমে শেষ হবে এই রোডমার্চ।
এই রোডমার্চে নেতৃত্ব দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ ঘিরে এরই মধ্যে চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে ছড়িয়ে পড়েছে উত্তাপ। শুক্রবার রাতে মীরসরাইয়ে রোডমার্চের প্রস্তুতি সভা চলাকালে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রুমন নামে এক কিশার নিহত হয়। আহত হয় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন।
নিহত রুমনকে ছাত্রলীগ কর্মী বলে দাবি করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ওই কিশোর একজন দোকান কর্মচারী। সে রাজনীতিতে জড়িত ছিল না। হামলা এবং প্রতিরোধের চেষ্টার মধ্যে পড়ে মারা যায় রুমন। এ ঘটনায় নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৮৫ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও কুমিল্লা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের সমন্বয়ক মাহবুবের রহমান শামীম যুগান্তরকে বলেন, রোডমার্চ সফল করতে চট্টগ্রাম বিভাগের ১১টি জেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। থানা পর্যায়েও সভা করা হয়েছে। আমরা ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছি। রোডমার্চের আওতায় কুমিল্লা, ফেনীর মহিপাল, মীরসারই সদর ও চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি মোড়সহ মোট চারটি স্থানে জনসভা হবে। প্রতিটি সভায় সমবেত হবে লাখো মানুষ। এছাড়া যাত্রাপথে জায়গায় জায়গায় হাজার হাজার মানুষ রোডমার্চকে স্বাগত জানাবে।
তিনি বলেন, কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ রোডমার্চ কর্মসূচিতে সরকার যদি বাধা দেয় তাহলে যেখানে বাধা সেখানেই প্রতিরোধ করা হবে। আঘাত এলে পালটা আঘাত করতে গণতন্ত্রকামী মানুষ এখন প্রস্তুত।
মীরসরাইয়ে রোডমার্চের প্রস্তুতি সভায় বাধা দেওয়ার ঘটনাকে ভীতি ছড়ানোর চেষ্টা বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও রোডমার্চের দলনেতা মোহাম্মদ শাহজাহান। শনিবার চট্টগ্রামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, এসব করে কোনো লাভ হবে না। রোডমার্চ হবেই। কেউ তা ঠেকাতে পারবে না।
রোডমার্চ ও পথসভাগুলোর জন্য পুলিশের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছি সভা-সমাবেশের জন্য পুলিশ থেকে আর অনুমতি নেব না। ৫ অক্টোবরের যে সমাবেশ হবে সেটারও অনুমতি নেব না। পুলিশের কাছে অনুমতি চাইব, তারা অনুমতি দিলে সভা-সমাবেশ করব, না দিলে করব না-এখন আর সেই দিন নেই। আমরা পুলিশকে শুধু অবহিত করব। এরপর তারা বুঝবে কী করবে।