২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:৩৭:৩৮ অপরাহ্ন
কিশোরগঞ্জ-১: এমপি হতে সৈয়দেরা ৩ ভাগ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
কিশোরগঞ্জ-১: এমপি হতে সৈয়দেরা ৩ ভাগ

দীর্ঘ সময় কিশোরগঞ্জ-১ (সদর ও হোসেনপুর) আসনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। বর্তমানে তাঁর বোন সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি এই আসনের সংসদ সদস্য (এমপি)। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও এই পরিবার থেকেই কেউ আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে ধারণা স্থানীয় নেতাদের। তবে সেই মনোনয়নের দৌড়ে জিততে গিয়ে ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে সৈয়দ পরিবারে।


জাকিয়া নূর লিপিসহ পরিবারটির তিন সদস্য এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ফুসফুসের ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৮ সালে সৈয়দ আশরাফ চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই তাঁর ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম, যুক্তরাজ্যপ্রবাসী অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম এবং চাচাতো ভাই ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। তবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা তখন সৈয়দ আশরাফ ছাড়া অন্য কাউকে মনোনয়ন দেওয়ার সুযোগ নাকচ করে দেন। ওই নির্বাচনে জয়ের পর শপথ গ্রহণের আগেই মারা যান সৈয়দ আশরাফ। ২০১৯ সালে পুনর্নির্বাচনে আবারও এই পরিবারের একাধিক সদস্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেয়ে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হন জাকিয়া নূর। 


মাঠে প্রচার-প্রচারণার ভিত্তিতে দলীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, এবারের নির্বাচনেও এই পরিবার থেকে একাধিক সদস্য মনোনয়ন চাইবেন। জাকিয়া নূর ছাড়া বাকিরা হলেন সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম ও সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। সৈয়দ পরিবারের বাইরে মনোনয়নপ্রত্যাশী মশিউর রহমান হুমায়ুন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী। 


কিশোরগঞ্জ-১ আসনের রাজনীতি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ এখানে সৈয়দ পরিবারকে ঘিরেই হিসাব-নিকাশ করছে। ফলে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রেও সৈয়দ আশরাফের উত্তরসূরিরাই প্রাধান্য পাবেন। জাকিয়া নূর আগে থেকেই মাঠে সরব। সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলাম এলাকায় আসেন কালেভদ্রে। সম্প্রতি জেলা শহরে তিনি মতবিনিময় সভা করে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছেন।


তবে ওই মতবিনিময় সভায় কিশোরগঞ্জ ও হোসেনপুর আওয়ামী লীগের পদধারী কিংবা জ্যেষ্ঠ কোনো নেতা ছিলেন না। এ ছাড়া সাফায়েতুল ইসলাম সাধারণ ভোটারদের ঢাকায় তাঁর কার্যালয়ে নিয়ে ইদানীং মতবিনিময় করছেন। অপর দিকে নির্বাচন সামনে রেখে গত আগস্টে এলাকায় একাধিক সমাবেশ করেছেন সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু। তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন মশিউর রহমান হুমায়ুনও। 


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, মশিউর রহমান ২০১৮ সাল থেকে কিশোরগঞ্জের রাজনীতিতে সরব। জেলা ও হোসেনপুর উপজেলার রাজনীতিতে তাঁর আধিপত্য বেড়েছে। হোসেনপুরে ছাত্রলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হতে পারেননি এমপি জাকিয়ার মনোনীত প্রার্থীরা। বিপরীতে এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের সুবিধা বাড়িয়ে নিজেকে জনপ্রিয় করেছেন মশিউর। চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা করেছেন কয়েক হাজার মানুষের। ফলে তাঁর একধরনের প্রভাব তৈরি হয়েছে। 


রাজনীতি সচেতন স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সৈয়দ আশরাফের শূন্যতা কেউ পূরণ করতে পারছেন না। এই অবস্থায় এলাকার মানুষের জন্য একজন উপযুক্ত অভিভাবক দরকার। কিন্তু সৈয়দ পরিবারে একাধিক প্রার্থী থাকায় তাঁরা দ্বিধায় পড়ছেন। 


নিজের প্রার্থিতার প্রত্যাশা নিয়ে সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটু বলেন, গত ৩০ মে সদর উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ৯৯টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও কৃষক লীগ যৌথ সভা করে তাঁকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে। এমনকি হোসেনপুর উপজেলার নেতা-কর্মীরাও তাঁর পক্ষে কাজ করছেন। 


মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ সাফায়েতুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলতে গত রোববার ও সোমবার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। বর্তমান এমপি জাকিয়া নূর বলেন, ‘ওনারা (আশফাকুল ও সাফায়েতুল) কি অফিশিয়ালি মনোনয়ন চেয়েছেন? তাঁদের জিজ্ঞেস করেন, তাঁরা আসলে অফিশিয়ালি মনোনয়ন চেয়েছেন কি না।’ 


আর মশিউর রহমান হুমায়ুন বলেন, মনোনয়ন যে কেউ চাইতে পারেন, এটা তাঁদের অধিকার। তবে গত ৫ বছরে কিশোরগঞ্জ ও হোসেনপুরে সরকারের রুটিন উন্নয়ন ছাড়া আর কিছু হয়নি। সাধারণ মানুষও উপকৃত হয়নি। এবার জনগণ ও দল যাঁকে যোগ্য মনে করবে, তিনিই মনোনয়ন পাওয়ার লড়াইয়ে এগিয়ে থাকবেন। এ ক্ষেত্রে উচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতারা তাঁর পাশে আছেন। 

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ আফজল।


শেয়ার করুন