২২ নভেম্বর ২০২৪, শুক্রবার, ০১:০১:৪৩ পূর্বাহ্ন
গাজীপুর-৪: এমপি হতে তাজ পরিবারে লড়াই
  • আপডেট করা হয়েছে : ১০-১০-২০২৩
গাজীপুর-৪: এমপি হতে তাজ পরিবারে লড়াই

গাজীপুর-৪ আসনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তাজ পরিবারের (তাজউদ্দীন আহমদ) মধ্যে সব শেষ প্রতিযোগিতা হয়েছিল ২০০১ সালে। তাজউদ্দীনের ভাই আফসার উদ্দিন আহমদ ও ছেলে তানজিম আহমদ সোহেল তাজের মনোনয়ন পাওয়ার চেষ্টা তখন স্থানীয়দের কাছে ‘চাচা-ভাতিজার লড়াই’ হিসেবে পরিচিতি পায়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আবার তাজ পরিবারে মনোনয়ন পাওয়ার ‘লড়াই’ শুরু হয়েছে।


স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলেছে, আসন্ন নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য (এমপি) আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ও তাঁর ফুফাতো ভাই কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমদ আলোচনায় আছেন। তিনি তাজউদ্দীন আহমদের ছোট বোন মরিয়ম হেলালের ছেলে। আলম ও রিমি উভয়েই এলাকায় পৃথক কর্মসূচি পালন এবং গণসংযোগ করে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছেন। সোহেল তাজের প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও তিনি তা নাকচ করে দিয়েছেন।


আসনটি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত। তাজ পরিবারকে স্থানীয় ভোটারদের একাংশ বিশেষ গুরুত্ব দেয়। গত ১১টি সংসদ নির্বাচনের মধ্যে অধিকাংশ সময়ই আওয়ামী লীগ তাজ পরিবার থেকে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। ফলে দলটির মনোনয়ন পেতে স্থানীয় অন্য নেতাদের চেয়ে তাজ পরিবারের সদস্যদের মাঝেই একধরনের প্রতিযোগিতা শুরু হয়।


এই আসনে ১৯৯১ সালে তাজউদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীনকে হারিয়ে এমপি হন বিএনপির নেতা আ স ম হান্নান শাহ। ১৯৯৬ সালে জোহরা তাজউদ্দীনের পরিবর্তে মনোনয়ন পান তাজউদ্দীন আহমদের ছোট ভাই প্রয়াত আফসার উদ্দিন আহমদ খান। তিনি জয়লাভ করেন এবং পরে সরকারের গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ২০০১ সালে আফসার উদ্দিনের বিপরীতে দলীয় মনোনয়ন পেতে মাঠে নামেন তানজিম আহমদ সোহেল তাজ। সেই নির্বাচনে সোহেল তাজ দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির প্রভাবশালী নেতা প্রয়াত আ স ম হান্নান শাহকে হারিয়ে এমপি হন।


খুব অল্প সময়ের মধ্যে আলোচনায় আসা সোহেল তাজ সাড়ে তিন বছরের মাথায় প্রথমে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পরে এমপির পদ থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১২ সালের উপনির্বাচনে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা প্রার্থী হিসেবে সোহেল তাজের বড় বোন সিমিন হোসেন রিমিকে বেছে নেন। ওই নির্বাচনে রিমির বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমে হেরে যান চাচা আফসার উদ্দিন আহমদ। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও জয়ী হন সিমিন।


তাজ পরিবার থেকে এবারের মনোনয়নপ্রত্যাশী আলম আহমদ কৃষক লীগের একাংশ এবং বিভিন্ন সময় আওয়ামী লীগের সুযোগ-সুবিধাবঞ্চিত নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় নানা কর্মসূচি পালন করছেন। তিনি বলেন, সিমিন হোসেন কাপাসিয়ার বিশেষ কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। তিনি বড় কোনো প্রকল্প দেখাতে পারবেন না, যা এলাকার মানুষের উপকারে এসেছে। যা উন্নয়ন হয়েছে, তা প্রধানমন্ত্রীর সারা দেশের উন্নয়নেরই অংশ।


আলম আহমদ বলেন, সিমিনের কারণে কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। অধিকাংশ নেতা-কর্মী এখন তাঁর পক্ষে আছেন। এ ছাড়া সিমিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে লড়ে জয়ী হননি। এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হলে তাঁর পক্ষে বিজয়ী হওয়া সম্ভব নয়।


এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে দলীয় কর্মসূচি পালন করছেন সিমিন। তিনি বলেন, কাপাসিয়ায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠন তাঁর নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আছে। কোনো বিরোধ নেই। কাপাসিয়াবাসী অতীতে যেমন সঙ্গে ছিলেন, আগামীতেও থাকবেন।


আওয়ামী লীগের বাইরে এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে সাবেক পাটমন্ত্রী আ স ম হান্নান শাহের ছেলে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ রিয়াজুল হান্নানের নাম শোনা যাচ্ছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী ছিলেন। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তিনি দলীয় মনোনয়ন নিয়ে লড়তে চান। সেটি হলে জয়ের ব্যাপারে তিনি বেশ আশাবাদী। 


শেয়ার করুন