রংপুরের গঙ্গাচড়ায় মধ্যরাতে অভিযানে গিয়ে আটক এক মাদক কারবারিকে ‘টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিয়ে’ জনতার রোষানলে পড়ে পুলিশের চার সদস্য। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশসহ থানার ওসি তাঁদের উদ্ধার করতে গেলে জনতা তাদেরও অবরুদ্ধ করে। দেনদরবার শেষে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গঙ্গাচড়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) একরামুল হক, সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সোহেল রানাসহ পুলিশের চার সদস্য গতকাল বুধবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার গজঘণ্টা ইউনিয়নের গাউছোয়া বাজার এলাকায় অভিযান চালান। এ সময় মনতাজ মিয়া (৫৬) ও অরজিনা বেগম (৫০) দম্পতিকে ফেনসিডিলসহ আটক করে তারা। পরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মনতাজকে ছেড়ে দিয়ে অরজিনাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ।
এলাকাবাসী বিষয়টি টের পেয়ে ওই চার পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে তাঁদের উদ্ধার করতে যান গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন। এ সময় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী তাঁদেরও আটকে রাখে। পরে মাদক ব্যবসায়ী মনতাজকে গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে স্থানীয়রা তাদের ছেড়ে দেয়।
স্থানীয় গাউছিয়া বাজার এলাকার আলমগীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাত ১২টার দিকে গাউছিয়া বাজারের একটি চায়ের দোকানে বসে আমরা কয়েকজন চা খাচ্ছিলাম। এ সময় দেখি, মাদক ব্যবসায়ী মনতাজ ও তাঁর স্ত্রী অরজিনা বেগমকে আটক করে তাঁর বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। একটু পর দেখি মনতাজ তাঁর পরনের লুঙ্গি ঠিক করছে আর দৌড়াচ্ছে। এ সময় মনতাজ ফোনে কাকে যেন বলতেছে, পুলিশ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তাঁকে ছেড়ে দিছে। আর তাঁর বউকে আটক করে নিয়ে যাচ্ছে। কালকে তাঁকে জামিন করা লাগবে।’
আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘এ সময় পেছনে দেখি, চারজন পুলিশ সদস্য মনতাজের স্ত্রীকে নিয়ে থানার দিকে যাচ্ছে। তখন আমরা তাদের কাছে মনতাজকে ছেড়ে দেওয়ার কারণ জানতে চাই। তখন কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় আমরা সবাই মিলে তাদের আটকে রাখি। পরে মনতাজকে গ্রেপ্তার আশ্বাস দিয়ে পুলিশের আরেকটি টিম এসে তাদের নিয়ে যায়।’
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় গজঘণ্টা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
তবে মডেল থানার ওসি দুলাল হোসেন এসব কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমরা কোনো আসামিকে ধরিনি। আজ সকালে মনতাজ ও তাঁর স্ত্রীকে আটক করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলা হয়েছে। আজ আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, এ বিষয়ে একজনকে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রয়েছে। পুলিশ সদস্যদের অবরুদ্ধ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অবশ্যই সেখানে কোনো ঘটনা ঘটেছে। তা না হলে কি আর এটা হয়?’