প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমেরিকাতে ১৮ দিন ঘুরে আসলেন। এখন আবার ব্রাসেলসে যাবেন। চারদিকে ঘোরাঘুরি শুরু করেছেন। ঘুরে ঘুরে যদি কোনো রকমে সামাল দেওয়া যায়- সে চেষ্টা করছেন। আর ঘোরাঘুরি করে কোনো লাভ হবে না। চলে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। বিদায় নিতেই হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘খুব পরিষ্কার করে বলতে চাই, এ দেশের সব মানুষ এখন অতিষ্ঠ হয়ে গেছে। আপনাদের হাত থেকে তারা বাঁচতে চায়। এখনো বলছি, দুর্গাপূজার ছুটি থাকবে। এ সময়ে নির্বাচন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে দ্রুত একটা নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দিন। সব মানুষ ভোট দেবে এবং ভোট দিতে যাবে। আপনার তো কোনো প্রয়োজন নেই আর।
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এক ছাত্র সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এতই যদি জনপ্রিয় হন তাহলে সুষ্ঠু একটা ভোট দিতে অসুবিধা কোথায়? পদ্মা সেতু বানিয়েছেন, আন্ডারগ্রাউন্ড টানেল বানিয়েছেন, উড়াল সেতু বানিয়েছেন, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বানিয়েছেন, লোকজন তো আপনাকেই ভোট দেবে। তাহলে দেন একটা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। সেটা আপনি করবেন না। কারণ জানেন, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আপনাদের অস্তিত্ব থাকবে না।’
আওয়ামী লীগ সবচেয়ে প্রতারক দল মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগ মুখে বলবে এক কথা আর কাজ করবে আরেকটা। নির্বাচনের বিষয়ে মার্কিন একটা টিম এসেছিল। তাদের বলেছেন, ‘এখানে তো আমরাই সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে এসেছি। আর গত দুটি সুষ্ঠু নির্বাচন তো আমরাই করেছি। আবার করব। আমার ওপর আস্থা রাখেন আমি আবার সুষ্ঠু নির্বাচন করব।’ এটা হচ্ছে শিয়ালের মুরগি বর্গা দেওয়া। আর না। এনাফ ইজ এনাফ।
বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানিকে বাসা থেকে গভীর রাতে দরজা ভেঙে গ্রেফতার এবং থানায় নিয়ে নেতাকর্মীদের নির্মমভাবে নির্যাতন করার অভিযোগ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এ্যানিকে নির্মমভাবে নির্যাতন করা করেছে। এসব আমরা কল্পনাও করতে পারি না। সাবেক সংসদ-সদস্য, সাবেক ছাত্রনেতা, যার কপালে স্বৈরাচারের গুলির দাগ রয়েছে। সেই এ্যানিকে অন্যায়, বেআইনিভাবে আক্রমণ করেছে, আহত করেছে। এটা আমাদের সবার জন্য লজ্জার। পুলিশ কর্মকর্তা যাদের জনগণের টাকায় বেতন হয়, তারা তার ওপর নির্যাতন করেছে। এ্যানির মতো একজন সাহসী নেতা কোন অবস্থায় আদালতে দাঁড়িয়ে বলে যে, চোর-ডাকাতকে মানুষ এভাবে মারে না, আমাকে তারা (পুলিশ) যেভাবে মেরেছে।’
ছাত্রনেতাদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখান থেকে আপনারা একটা বার্তা পাবেন। সেই বার্তা হচ্ছে, মুখ বুঝে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না। আপনারা যদি নিজেরা বাঁচতে চান, দেশকে বাঁচাতে চান, বাবা-মা, ভাই ও বোনদের বাঁচাতে চান তাহলে জেগে উঠতে হবে। জেগে উঠতে হবে এবং রাজপথে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। লড়াই ও সংগ্রাম করে তাদের (সরকার) পরাজিত করতে হবে। অন্যথায় আপনার মাথার ওপর চেপে বসবে। এ্যানিকে যেভাবে মেরেছে। কালকে আপনাকে সেভাবে মারবে। অনেকে বলে তরুণদের ক্ষোভ মোবাইল সেটে। ক্ষোভ মোবাইল ফোনে দিলে হবে না। ক্ষোভ রাজপথে আসতে হবে। রাজপথে এসে তাদের পরাজিত করতে হবে। রুখে দাঁড়াতে হবে।’
ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শক্তি আমাদের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়েছে। আমাদের স্বপ্নগুলো ভেঙে খান খান করে দিয়েছে। বাংলাদেশটাকে তাদের বিচারকের ভাষায় জাহান্নাম বানিয়েছে। তাদের একটা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে আমরা নেমেছি। মুখে কলুপ এঁটে বসে থাকবেন না, হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন না।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের ৬৪৮ ভাইকে গুম করে দিয়েছে, সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে বিচারবহিভর্‚তভাবে হত্যা করেছে। এই এক বছরে মধ্যে ২২ জন যুব নেতা, ছাত্রনেতা, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে রাস্তায় গুলি করে হত্যা করেছে। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ কোথায়? আপনাদের মধ্যে সেই বিদ্রোহ জাগিয়ে তুলতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিচার ব্যবস্থা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতিসহ সর্বক্ষেত্রে সরকারের দলীয়করণ, লুটপাট ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তার চিত্র তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।