২৮ এপ্রিল ২০২৪, রবিবার, ১২:৫৬:৩০ পূর্বাহ্ন
পর্যটন অর্থনীতি ও বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-১০-২০২৩
পর্যটন অর্থনীতি ও বহুমাত্রিক কর্মকাণ্ডে প্রভাব ফেলবে

দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র কক্সবাজার পর্যন্ত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষে শোভাবর্ধনের কাজ চলছে। এর আগে দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশন নির্মাণ করা হয়। বহুল আলোচিত রেললাইন চালুর অপেক্ষায় সাধারণ মানুষ। এ রেললাইন পর্যটন অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনার পাশাপাশি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করবে। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেললাইনের উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে চলছে প্রস্তুতি।


বিশ্লেষকরা বলছেন, কক্সবাজারে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে। মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হচ্ছে। সড়কপথ সংস্কার হচ্ছে। আর সর্বশেষ যুক্ত হচ্ছে রেললাইন। এসব অবকাঠামো উন্নয়ন পর্যটন অর্থনীতিতে সুবাতাস বয়ে আনার পাশাপাশি বহুমাত্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সূচনা করবে। প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন এখন পুরোপুরি দৃশ্যমান। আগামী ১২ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ রেললাইন উদ্বোধন করবেন। স্টেশন ও সড়কের কাজ এ মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। আইকনিক রেলস্টেশন ভবনের সিনিয়র ইঞ্জিনিয়ার তাইজুল ইসলাম বলেন, আমাদের কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। এখন সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ-যেমন রঙ করা, বৃক্ষরোপণ, ঝিনুকের ফোয়ারায় রং করা এবং গাড়ি পার্কিংয়ের নির্ধারিত স্থান নিশ্চিতকরণের কাজগুলো করছি।


রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ হচ্ছে। তিনি বলেন, এখনই ঢাকা থেকে কক্সবাজারে সরাসরি ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। প্রথমে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করবে। চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর ব্যাপারে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতু নির্মাণে কোরিয়ার সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তির জন্য খসড়া পাঠানো হয়েছে। আশা করছি, অক্টোবরের মাঝামাঝি কিংবা খুব অল্প সময়ের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন হবে। এরপরই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে। তিনি আরও বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগেই কালুরঘাটের পুরোনো সেতুটি সংস্কার করে মজবুত করার কাজ চলছে। অক্টোবরের মধ্যে সেতুটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হবে। এ রেললাইন উদ্বোধন হওয়ার পরদিন থেকে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হবে না। কিছুদিন সময় লাগবে। যতদিন পর্যন্ত কালুরঘাটে নতুন সেতু না হচ্ছে ততদিন পর্যন্ত পুরোনো সেতু দিয়ে সীমিত গতিতে ট্রেন চলবে। সেতু হলে ১০০ বা ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলবে। জনবল নিয়োগের ব্যাপারে এক প্রশ্নের জবাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. হুমায়ুন কবির বলেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পে রেলস্টেশনসহ সব স্তরে ১ হাজার ২০০ জনবল প্রয়োজন। এ জনবলের জন্য এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছে। কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, রেললাইন চালু হলে এ অঞ্চলের উৎপাদিত পণ্য যেমন সহজে সারা দেশে নেওয়া যাবে, তেমনি সারা দেশ থেকে পণ্য কক্সবাজারে সাশ্রয়ীভাবে আনা যাবে। এতে উৎপাদকেরা লাভবান হবেন। নতুন করে সৃষ্টি হবে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান।


সরেজমিন দেখা যায়, কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত থেকে তিন কিলোমিটার দূরে দেশের একমাত্র বিশ্বমানের দৃষ্টিনন্দন আইকনিক রেলস্টেশনটি দৃশ্যমান। এটি পরিপূর্ণ একটি কমপ্লেক্স। এতে রয়েছে-তারকা মানের হোটেল, লকার, শপিংমল, রেস্তোরাঁসহ বিশ্বমানের সব সুযোগ-সুবিধা।


রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, পরীক্ষার জন্য পটিয়া স্টেশনে একটি ট্রেন প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এতে ছয়টি বগি ও ২ হাজার ২০০ সিরিজের একটি ইঞ্জিন রয়েছে। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগির একেকটিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। বর্তমানে নগরের ষোলশহর থেকে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইনও পুরোদমে সংস্কার করা হচ্ছে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কপথের দূরত্ব প্রায় ১৫০ কিলোমিটার। সড়কপথে বাসে এ দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে গড়ে পাঁচ ঘণ্টা। এ রেললাইন চালু হলে সময় অর্ধেকের নিচে নেমে আসবে। কমবে সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকিও। দোহাজারী-কক্সবাজার রেলরুটে ৯টি স্টেশন রয়েছে। স্টেশনগুলো হলো-দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজার রেলস্টেশন রয়েছে। এসব স্টেশনে কম্পিউটারবেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম থাকছে। দোহাজারী থেকে চকরিয়া এবং চকরিয়া থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথে ৩৯টি ব্রিজ, আন্ডারপাসসহ ২৫১টি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে।


সূত্র জানায়, পুরো প্রকল্পের ব্যয় ১৮ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশনটি নির্মাণে ২১৫ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এরই মধ্যে সামগ্রিক প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। ২০১০ সালে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। দুই পর্যায়ে প্রকল্প শেষ হচ্ছে। দ্বিতীয় পর্বের কাজ ২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে।


শেয়ার করুন