২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৩:৫৮:৫২ অপরাহ্ন
গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-১০-২০২৩
গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া বিএনপি নেতাকর্মীরা

এক বছরেরও বেশি সময় চট্টগ্রামের রাজনীতির মাঠ ছিল এককথায় বিএনপির দখলে। একের পর এক সমাবেশ, মিছিল, পদযাত্রাসহ নানা কর্মসূচিতে ছিল নেতাকর্মীদের ঢল। পলোগ্রাউন্ড কিংবা কাজীর দেউড়ি, যেখানেই হোক না কেন-বিএনপি সমাবেশ ডাকলেই রূপ নিত জনসমুদ্রে। সেই দৃশ্যপট পালটে গেছে রাতারাতি।


শনিবার ঢাকায় মহাসমাবেশের পর থেকে প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে না বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই এখন ঘরছাড়া। পালিয়ে বেড়াচ্ছেন এখানে-ওখানে। মামলার আসামিরা তো বটেই, মামলা নেই-এমন নেতাকর্মীও বাসায় থাকার সাহস পাচ্ছেন না। অনেকের মোবাইল ফোনও বন্ধ। মহাসমাবেশে সংঘর্ষের পর দায়ের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ চট্টগ্রামের বেশ কয়েকজন নেতাকে আসামি করা হয়েছে। অপরদিকে নগরীতে ধরপাকড়ও চলছে। গত দুই দিনে ২০ জনেরও বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


এমন পরিস্থিতিতে আজ থেকে শুরু হচ্ছে টানা তিন দিনের ‘সর্বাত্মক অবরোধ’। দীর্ঘদিন পর সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে এমন কঠোর কর্মসূচি দিল বিএনপি। নেতাকর্মীরা গা ঢাকা দেওয়ায় এ কর্মসূচি কতটুকু সফল হবে, তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। তবে চট্টগ্রামের বিএনপি নেতারা আশাবাদী। তারা বলছেন, অতীতেও ব্যাপক ধরপাকড়ের মুখে হরতাল-অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না। আন্দোলনের কৌশল হিসাবেই নেতাকর্মীরা আপাতত গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টা করছেন।


বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, চট্টগ্রামে কয়েক হাজার বিএনপি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আগে থেকেই ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলা রয়েছে। সিনিয়র থেকে জুনিয়র-কেউই মামলা থেকে বাদ পড়েননি। বেশির ভাগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৫-৭টি, কারও কারও নামে ২০-৩০টি, এমনকি ৫০-৬০টি মামলাও রয়েছে। সাবেক ছাত্রদল নেতা ও বর্তমানে নগর বিএনপি নেতা গাজী মোহাম্মদ সিরাজ উল্লাহর নামে মামলার সংখ্যা শতাধিক। ভাঙচুর, নাশকতা, হামলা, সরকারি কাজে বাধাদান, বিস্ফোরণ ঘটানোসহ বিভিন্ন অভিযোগে এসব মামলা করেছে পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। এসব মামলার কোনোটি তদন্ত পর্যায়ে আবার কোনোটির বিচার চলছে। তবে বেশির ভাগ নেতাকর্মীই জামিনে রয়েছেন এবং নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।


পুরোনো মামলার পাশাপাশি নতুন মামলার আতঙ্ক এখন পেয়ে বসেছে। মাঠে নামলেই মামলা ও গ্রেফতারের মখোমুখি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।


ঢাকায় পুলিশের ওপর হামলা ও এক পুলিশ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় পল্টন থানায় দায়ের করা মামলা চট্টগ্রামের নেতাকর্মীদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে। ওই মামলায় নাম উল্লেখ করা ১৬৪ জন আসামির মধ্যে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নগর যুবদল সভাপতি মোশাররফ হোসেনসহ কয়েকজন রয়েছেন। এছাড়া মামলাটিতে অজ্ঞাত আরও অনেক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। দলীয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দায়ের করা বেশির ভাগ রাজনৈতিক মামলায়ই অজ্ঞাতনামাদের আসামি করা হয়েছে। এটিই বেশি উদ্বেগের। নেতাকর্মীদের যে কাউকে গ্রেফতারের পর এই ক্যাটাগরিতে আসামি করে দেওয়ার সুযোগ আছে।


সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীতে শনিবারের মহাসমাবেশের পর থেকেই চট্টগ্রামের বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে আসছেন না। রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতালে নগরীর কয়েকটি স্থানে পিকেটিং হলেও তা ছিল অল্পসময়ের জন্য। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ছাড়া সিনিয়র কোনো নেতাকে হরতালে মাঠে দেখা যায়নি। নগর বিএনপির নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ও দুই দিন ধরে নেতাকর্মীশূন্য। হরতালকে কেন্দ্র করে শনিবার রাত থেকে রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৯ নেতার্মীকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেফতার করা হয় বলে দাবি করেছে বিএনপি। রোববার রাতে নগরের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ইকবাল চৌধুরীসহ আরও কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


নগর বিএনপির সাবেক সহদপ্তর সম্পাদক ও বর্তমানে দপ্তর সমন্বয়ক মো. ইদ্রিস আলী যুগান্তরকে বলেন, পুলিশ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হানা দিচ্ছে। গ্রেফতার করছে। এরপরও হরতাল সফল হয়েছে। অবরোধও সফল হবে। এর আগে মামলা, হামলা, গ্রেফতারসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতিতে অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি আমরা পালন

শেয়ার করুন