২১ নভেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার, ০৮:০০:৫২ অপরাহ্ন
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ইসি, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল
  • আপডেট করা হয়েছে : ০১-১১-২০২৩
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ইসি, নভেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, দেশে এখন পর্যন্ত আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বলেছেন, বিএনপির দেওয়া অবরোধ কর্মসূচি নিয়ে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন, সামনে যে পরিস্থিতি থাকবে সেভাবেই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যে আশ্বস্ত ইসি। তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নভেম্বর মাসের প্রথমার্ধের যে কোনো সময় ঘোষণা করা হবে।


সোমবার (৩০ অক্টোবর) দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে নির্বাচন কমিশন (ইসি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। সভায় অন্যান্য কমিশনার সহ ইসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে এ তথ্য জানান ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম।


ইসি সচিব বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় করণীয় ঠিক করতে বাহিনীগুলোর প্রধান, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসারের প্রতিনিধির সঙ্গে কমিশন সভা করেছেন। এই সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল, নির্বাচনে কমিশন যেভাবে চিন্তা করে থাকে, নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচন পরবর্তী শান্তিশৃঙ্খলা কীভাবে নিশ্চিত রাখা যাবে। কোন পদ্ধতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে, নির্বাচনে সঙ্গে সম্পৃক্ত দফতরগুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে- এই সার্বিক বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছে।


তিনি বলেন, নির্বাচনের আগে আরো এই ধরনের সভা রয়েছে। যখন যে অবস্থা আসবে তখন সেভাবে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তাদের তথ্য উপস্থাপন করেছে, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা তাদের সক্ষমতা কী আছে, অতীতের নির্বাচনের তাদের জনবলকে কীভাবে কেন্দ্রে এবং অন্যান্য কাজে নিয়োজিত করা হয়েছে এবং দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বে নিয়োজিত করা হলে তারা কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে, এই বিষয়গুলো কমিশনের কাছে তারা উপস্থাপন করেছে। কমিশন তাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। পরবর্তীতে বিভিন্ন পরিপত্র বিভিন্ন বাহিনী কীভাবে নিয়োজিত করা হবে সেখানে সুস্পষ্ট উল্লেখ করা হবে। তারা সেভাবে যথাযথভাবে প্রতিপালন করবে বলে নির্বাচন কমিশনকে আশ্বস্ত করেছে।


ভোটের মাঠে পরিবেশ কী আছে, সেটা নিয়ে পরামর্শ কী এবং ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপার কেন্দ্রে পাঠানোর নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কোনো বক্তব্য আছে কি-না, এসব প্রশ্নের জবাবে ইসি সচিব বলেন, এখানে দুটো বিষয়। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন ও তাদের প্রধানরা যে বক্তব্য নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছেন, এতে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের বড় ধরনের কোনো প্রতিবন্ধকতা নাই। যেহেতু গতকালের হরতালের পর বিএনপি আবার তিনদিনের অবরোধ দিয়েছে, সেক্ষেত্রে তারা সতর্ক থাকছেন যেন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনো অবনতি না ঘটে। এবং নির্বাচনের যে ধাপগুলো রয়েছে নির্বাচনের সময়, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সময়, তফসিল ঘোষণার পরে, প্রতীক বরাদ্দ থেকে নির্বাচনের তারিখ পর্যন্ত যখন যে পরিস্থিতি আসবে, তখন তারা কমিশনকে তা অবহিত করবে এবং কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। এ বিষয়ে তখন স্ট্রাটেজি গ্রহণ করবে।


মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ভোটকেন্দ্র সকালে পাঠানো হবে নাকি আগের দিন রাতে পাঠানো হবে তা নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে আরো অনেক সময় রয়েছে। মিটিং হবে। ওই সময়ের পরিস্থিতির কেমন থাকবে তার ওপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে কমিশন এবং তারা। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা এ বিষয়ে মতামত দেবে। কেননা, এখনো তফসিল ঘোষণা করা হয় নাই। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয় নাই। এটা অনেক দূরের কাজ। এখন যে কথাবার্তা হয়েছে বর্তমানে যে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রয়েছে, তা কমিশনকে অবহিত করেছে।


তফসিল ঘোষণা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যদি আরো অবনতি হয়ে যায়, তখন কী হবে – এমন প্রশ্নের জবাবে মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হরতাল শেষে ইতোমধ্যে আরেকটি সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দিয়েছে। এই মুহূর্তে যে পরিস্থিতি আছে তা কমিশনের কাছে উপস্থাপন করেছে। আবার যখন যে পরিস্থিতি আসবে সেটাও তারা উপস্থাপন করবে। তাদের যে প্রতিবেদন এখন পর্যন্ত পরিবেশ শান্তিপূর্ণ আছে। তফসিলের পরিবেশ আছে।


তিনি বলেন, নভেম্বরের প্রথমার্ধের যেকোনো সময় তফসিল হবে। যেটা আগে থেকেই কমিশন বারবার গণমাধ্যমকে অবহিত করবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অন্য নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মহা-পুলিশ পরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই)-এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল টিএম জোবায়ের, আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক, বিজিবি’র মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম নাজমুল হাসান, পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) প্রধান মো. মনিরুল ইসলাম, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়নের (র‌্যাব) মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন এবং সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, ডিরেক্টোরেট জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স (ডিজিএফআই) ও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালকের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন।


প্রসঙ্গত, আগামী ১ নভেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকও ডেকেছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটি। এছাড়া ২ নভেম্বর প্রকাশ করা হবে আসন্ন ভিত্তির ভোটার তালিকাও। অন্যদিকে নির্বাচনের সকল উপকরণ কেনার কাজও প্রায় শেষ করে ফেলেছে ইসি।


শেয়ার করুন